জুলাই-আগষ্ট গণহত্যার অভিযোগে আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা, সাবকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্র্রমন্ত্রী আসাদুজ্জান খানসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পারোয়না জারির পর অদৃশ্য হয়ে যান অনেক প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপি ও আমলারা। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাজানো প্রশাসনের সহযোগিতায় অনেক প্রভাবশালী মন্ত্রী এমপিরা নির্বিঘ্নে দেশ ছেড়ে পলিয়েছেন।
জানা যায়, বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে দুই দেশের দালাল সিন্ডিকেটের সহযোগিতায় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ০৫ আগস্ট গভীর রাতে ঢাকা থেকে যশোরে একটি নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেন সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরদিন ০৬ আগস্ট ভোরে প্রশাসনের বিশেষ নিরাপত্তা বলয়ে সীমান্ত ভারতে প্রবেশ করেন। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে যশোর ও বেনাপোলের দায়িত্বশীল সুত্র এ তথ্য নিশ্চিত করে। সূত্র জানায়, সুরক্ষিত একটি সড়ক পথ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের বিশেষ যানবাহন চড়ে ভারতে পালিয়ে যান ওবায়দুল কাদের।
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত এমপি শামীম ওসমান পটখালী ঘাট এলাকা দিয়ে বাদামি রংয়ের ইরানি বোরকা ও চটি জুতা পরে ভারতে পালিয়ে যান। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক সপ্তাহ পর একটি ভিডিয়োতে নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার মাজারে তাকে ঘুরতে দেখা যায়। তার আগে সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী নওফেল ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া তার এক স্বজনের বাসায় গিয়ে ওঠেন।
গত জুলাই মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয় কোটা সংস্কার ছাত্রদের চলমান আন্দোলনে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসুচিতে প্রকম্পিত ওয়ে ওঠে সারাদেশ। আন্দোলন দমাতে আওয়ামী সরকারের দলীয় বাহিনী, বিশেষ গোয়েন্দা বাহিনী এবং আইনশৃংখলা বাহিনী আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তাদের তুলে নিয়ে যায়। শুরু হয় দমন-নিপীড়ন। রাজপথে আন্দোলনকারীদের ওপর মুহুর্মুহু পুলিশের গুলিতে বাড়তে থাকে ছাত্রজনতার মৃত্যুর মিছিল। প্রিয়জন হারানো স্বজনদের আহাজারি আর প্রতিবাদের দাবানলে জ্বলে ওঠে সারাদেশ। আওয়মী লীগের দুঃশাসন থেকে বাঁচতে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে ছাত্রজনতা। শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে সারাদেশ। ০৫ আগস্ট ক্ষমতা হারান শেখ হাসিনা। প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান তিনি ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা। এছাড়াও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক এমপি অসীম কুমার উকিল, আপু উকিল, রাজশাহী সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন, ইরফান সেলিম, যুবলীগের নিখিল-সারওয়ার, পুলিশের বির্তকিত কর্মকর্তা বিপ্লব বড়ুয়াসহ অনেকেই বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন।
জুলাই থেকে আগস্টে ছাত্র জনতার গনঅভ্যুত্থানে অনেক শহিদের রক্তের বিনিময় পতন হয় আওয়ামী সরকারের। তাদের সহযোগীরা সীমান্তে দালাল সিন্ডিকেটের সহযোগিতায় কোটি টাকা খরচ করে ভারতে পাড়ি দেন আবার অনেকেই সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে ধরা খেয়ে গনপিটুনির শিকার হয়ে মারা যান, তবুও জীবন বাঁচাতে এখনও ভারতে পাড়ি দিচ্ছেন অনেকেই। সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে থাকা দালাল সিন্ডিকেট মুহূর্তে বনে যাচ্ছে কোটিপতি।
অভিযোগ রয়েছে, জুলাই-আগষ্টে ছাত্রজনতার আন্দোলন দমাতে নির্বিচারে গুলি চালানোর নির্দেশদাতারা জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আশ্রয় নেন ক্যান্টনম্যান্টে। পরে সুযোগ বুঝে রাতের আঁধারে নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে পটুয়াখলীর পটখালী ঘাট এলাকার দালাল চক্রের প্রধান নাসির, রঘুনাথপুরের বাদশা, কলারোয়া সীমান্তে আক্তার ও চন্দন অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকে ভারতে প্রবেশের সময় সার্বিক সহযোগিতা করেন। ভারত সীমান্তের ভেতর নিরাপদে প্রবেশ করিয়ে দেন কুখ্যাত দালাল চক্রের প্রধান গৈাতম দাস ও বাবুরাম। এ দুজন কোটি টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশের অপরাধীদের সহযোগিতা করে আসছে। ওদিকে অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ থেকে অনেকবার সর্তক করার পরও কোনো নির্দেশনা মানছেন না ভারত সীমান্তে নিরাপত্তার দ্বায়িত্বে থাকা সদস্যরা।
জানা যায়, বর্তমানে সাতক্ষীরা কলারোয়া, দেবহাটা, কালীগজ্ঞ ও শ্যামনগর সীমান্তে দালাল চক্র সক্রিয়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সড়ক পথে স্বাভাবিক সময় পাসপোর্ট ছাড়া মাত্র ১০ হাজার টাকা হলেই ভারতে প্রবেশ করা যায় কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে টাকার অঙ্ক বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। আর ভারত অংশের দালাররা গোপন পথে ভারতের শহরের বাসরুট দেখিয়ে দিচ্ছে।