সরকারি পাঠ্যবই ছাপার কাজ পাবে না ভারতীয় প্রতিষ্ঠান। দুই ভারতীয় প্রকাশককে পাঠ্যবইয়ের যেসব লট দেয়ার পরিকল্পনা ছিল তা বাতিল করা হয়েছে। এমনকি ইতিমধ্যে যেসব শ্রেণির বই ছাপার দরপত্র দেয়া হয়েছিলো তা বাতিলেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি ওই দরপত্র বাতিল ও নতুন করে দরপত্র আহবান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মূল্যায়নভিত্তিক নতুন শিক্ষাক্রম আগামী ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে থাকছে না। বরং পরীক্ষাভিত্তিক পুরোনো শিক্ষাক্রমেই ফেরত যাওয়া হচ্ছে। ফলে বইয়ের সংখ্যাও বেশি হবে। পাশাপাশি নানা অসংগতির সংস্কার, পরিমার্জন এবং বিষয়স্তু-প্রচ্ছদেও পরিবর্তন আনা হবে। এমনকি পরিবর্তন আসবে মূল্যায়ন পদ্ধতিতেও। ৫০ জনের বেশি বিশেষজ্ঞ ওই পরিমার্জনের কাজটি করছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) নতুন বছরের জন্য প্রায় ৩৫ কোটি বই ছাপানোর উদ্যোগ নিয়েছে। আর আগামী বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে সব পাঠ্যবই তুলে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ওই লক্ষ্যে এনসিটিবির সর্বোচ্চ চেষ্টা রয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে নতুন শিক্ষাক্রমের বই পড়ছে শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী বছর চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর মধ্য দিয়ে মাধ্যমিক পর্যন্ত সব শ্রেণিতেই তা চালুর কথা ছিল; কিন্তু এখন নতুন শিক্ষাক্রম কার্যত বাতিল হয়ে গেছে। সূত্র জানায়, কোনো দরপত্র বাতিল করে পুনঃদরপত্র আহ্বানের জন্য এনসিটিবির নিয়ম অনুযায়ী অন্তত ২১ দিন সময় লাগে। এরপর দরপত্র মূল্যায়নে ব্যয় হয় আরো ২০ দিন। ক্রয় কমিটির যাচাই-বাছাই ও ছাড় করতে লাগে অন্তত ১৫-২০ দিন। কাজের অনুমোদন মেলার পর আরো ২৮ দিন সময় ব্যয় হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিপত্রে জানানো হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নতুন শিক্ষাক্রমের অনেক কিছু বাদ দিয়ে আবারো মাধ্যমিকে বিভাগ (বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক) চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিগত ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের অনেক বিষয় ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেসব শিক্ষার্থী আগামী বছর নবম শ্রেণিতে উঠবে, তারা পুরোনো শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শাখা ও গুচ্ছভিত্তিক পরিমার্জিত পাঠ্যবই (২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ব্যবহৃত) পাবে। তারা আগের মতো নবম ও দশম মিলিয়ে দুই শিক্ষাবর্ষে পাঠ্যসূচি শেষ করে ২০২৭ সালে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দেবে। সূত্র আরো জানায়, নতুন নিয়মে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে ১০টি অভিন্ন বিষয় পড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। কিন্তু ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম চালু হলে প্রতি ক্লাসে বইয়ের সংখ্যা বাড়বে। পুরোনো শিক্ষাক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিকে বইয়ের সংখ্যা ২৩ (সব কটি সবার জন্য নয়)। ফলে বইয়ের ফর্মার সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে এবং ছাপাতেও সময় বেশি লাগবে। প্রতি বছরের মতো ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রায় ৩৫ কোটি বিনা মূল্যের বই ছাপাবে সরকার। কিন্তু দরপত্র ছাড়াও এখনো চূড়ান্ত হয়নি পা-ুলিপি। এদিকে চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ৩ কোটি ৮১ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় পৌনে ৩১ কোটি বিনা মূল্যের পাঠ্যবই বিতরণ করে সরকার। তাতে খরচ প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। আর ২০২৫ সালের জন্য প্রায় ৩৫ কোটি পাঠ্যবই বিতরণের লক্ষ্য, সেখানে সরকারকে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করতে হবে। বর্তমানে পাঠ্যবই পরিমার্জনের কাজ চলছে। শিগগিরই পরিপত্র জারি হবে। চলমান নতুন শিক্ষাক্রমের জন্য যে মূল্যায়ন পদ্ধতি প্রণয়ন করা হয়েছে, তা শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ অনেকের কাছেই স্পষ্ট ও গ্রহণযোগ্য নয়; তাই সে মূল্যায়ন পদ্ধতিকে বাতিল করে একটি স্পষ্ট ও গ্রহণযোগ্য পদ্ধতির জন্য কাজ করছে সরকার। পরিমার্জনের মাধ্যমে পাঠ্যবইয়ে নতুন কিছু বিষয়ও যুক্ত হতে পারে। এই পরিমার্জনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষা নিয়ে কাজ করা একাধিক ব্যক্তি যুক্ত হয়েছেন। অন্যদিকে অতিসম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, নতুন শিক্ষাক্রমে অনেক দুর্বলতা রয়েছে। বিশেষ করে মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষাক্রম অনেক দুর্বল। তবে আমাদের হাতে সময় নেই, যতটুকু পারি পরিবর্তন করা হবে। এছাড়া জানুয়ারি মাস আসতে বেশি দিন নেই। এর মধ্যে সারা দেশের পাঠ্যবই তৈরি করতে হবে। বইয়ের মলাটে যা আছে, সেগুলোর সংস্কার করতে হবে।