গণপরিবহনকে শৃঙ্খলায় আনা যাচ্ছে না। মূলত বাস মালিকদের অসহযোগিতার কারণেই এমন পরিস্থিতির উদ্ভব। বিগত সরকার একটি কোম্পানিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের আওতায় সব বাস পরিচালনার উদ্যোগ নিলেও তা সফল হয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরও ক্ষেত্রে গণপরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে হিমশিম খাচ্ছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্পের অধীনে বিগত সরকারের ঢাকাকে মোট ৪২টি পথে ভাগ করে এক কম্পানির অধীনে বাস চালানোর পরিকল্পনা ছিল। যাতে নির্দিষ্ট স্থানে বাস থামবে ও যাত্রী ওঠানামা করবে, পরিবহন শ্রমিকদের জন্য থাকবে নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা এবং মাসিক বেতন। ফলে সড়কে অসুস্থ প্রতিযোগিতা কমে আসবে বলে ধারণা করা হয়েছিলো। বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকারও বাস রুট রেশনালাইজেশনের তিনটি বৈঠক করেছে। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি ঘটেনি। পরিবহন মালিক সমিতিতে নতুন নেতা এলেও পুরনো অবস্থা বদলায়নি। সিটি করপোরেশনের কাছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির আগের কমিটির নেতারা বাসপ্রতি এক লাখ টাকা করে চাঁদা চেয়েছিলেন। এখনো অবস্থা অনেকটা সেরকমই রয়েছে।সূত্র জানায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে গত ১২ সেপ্টেম্বর বাস রুট রেশনালাইজেশনের ২৮তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পরিবহন মালিকদের চাওয়া আগের নেতাদের মতোই। সমিতির কাছ থেকে রুট পারমিট নিতে হবে এবং এর জন্য টাকা দিবে হবে। পাশাপাশি পরিবহন নেতারা পুরনো বাসের জন্য ক্ষতিপূরণ এবং ব্যাংকঋণের নিশ্চয়তা চেয়েছেন। এমনকি মালিকরা বাস চালানো বন্ধের হুমকি দিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে কঠোর হবে সরকার। দরকার হলে শূন্য জায়গায় বিআরটিসি চালানো। পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে বাস চালানোর জন্য চিঠি দেয়া হচ্ছে। যারা রাজি থাকবে তাদের সঙ্গে নিয়ে প্রকল্প সফল করা হবে।সূত্র আরো জানায়, যাত্রী সংকটে পড়ে ধীরে ধীরে নগর পরিবহন থেকে বের হয়ে যায় বেসরকারি মালিকানার বাসগুলো। আর লোকসানের বোঝা বয়ে চলতে থাকে বিআরটিসি। নগর পরিবহন চালিয়ে বিআরটিসি প্রায় ১১ কোটি টাকা লোকসান করেছে। নগর পরিবহনের অসফলতার পেছনে মূল কারণ বেসরকারি পরিবহন মালিকরা সরকারি প্রতিষ্ঠানের অধীনে আসতে চান না। তাদের ধারণা এতে মূল মুনাফা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি পরিবহন ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ কমে যাবে, বন্ধ হবে চাঁদাবাজির সুযোগ। হুটহাট কর্মবিরতির নামে সরকারকে চাপে ফেলার সুযোগও হাতছাড়া হবে।এদিকে বিগত ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে বাস রুট রেশনালাইজেশনের পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু হয়। ওই সময় ওই পথে রজনীগন্ধা, মালঞ্চ, মিডলাইন, সিটি লিংকসহ ১৩টি রুটের ৩৮২টি বাস চলাচল করতো। সেসব বাস পরবর্তী এক মাস অর্থাৎ ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সরিয়ে নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে এসেও কোনো বাস সরেনি। উল্টো নগর পরিবহনই সরে গেছে। অথচ অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বাস ঠিকই সড়কে চলছে, আর উধাও হয়েছে নগর পরিবহনের বাস। শুরুতে ট্রান্সসিলভা নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বাসকে রেশনালাইজেশনের অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়। লোকসানের মুখে বাস কম্পানিটি সরে গেছে। অন্য একটি কম্পানির কিছু বাস এই প্রক্রিয়ায় চলাচল করলেও রেশনালাইজেশনের মূলনীতি থেকে তারা সরে এসেছে। শুধু বিআরটিসির বাসের ভরসায় ২১ ও ২৬ নম্বর দুটি রুট নামমাত্র টিকে আছে। দুটি পথেই ৩০টি করে বাস চলার জন্য কাগজে অন্তর্ভুক্ত আছে। কিন্তু সব মিলিয়ে ২০টি বাসও চলে না। অথচ মোট চার পথে ১০০ বাস চলার কথা। এ প্রসঙ্গে বিআরটিসির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম জানান, শুরু থেকেই বিআরটিসি লোকসান দিয়ে যাচ্ছে। নগর পরিবহনের রুটে অন্য বাস চলে। যাত্রী না পাওয়ায় বিআরটিসির বাস কমে এসেছে। কিন্তু একেবারে বন্ধ হয়নি।