সার সংরক্ষণে ৩৪টি বাফার গুদাম নির্মাণ প্রকল্প ৫ বছরেও শুরু করা সম্ভব হয়নি। অথচ এরইমধ্যে নানান খাতে ৩২২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। সঠিক সময়ে কোনো প্রকল্প শেষ করতে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে কড়া নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও নির্দিষ্ট সময়ে বাফার গুদাম প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে বাড়ছে সরকারি অর্থের অপচয়। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাফার গুদাম নির্মাণ প্রকল্পের দুর্বল দিকগুলোর মধ্যে অন্যতম ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা এবং ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) অনুযায়ী যথাসময়ে অর্থ বরাদ্দ, ছাড় ও ব্যয় না হওয়া। এ ছাড়া ঝুঁকির মধ্যে অন্যতম জমি ও নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি। শিগগির জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ না হলে জমির দাম আরো বাড়বে। ফলে প্রকল্প ব্যয়ের ওপর প্রভাব পড়ার পাশাপাশি প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। প্রকল্পটির উদ্দেশ্যই হচ্ছে আপদকালীন ৮ লাখ মেট্রিক টন সারের মজুত নিশ্চিতকরণ ও দেশে সারের মজুত সুনিশ্চিত করে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন। বিসিআইসি সারাদেশের সাত বিভাগের ৩৪ জেলায় ৩৪টি বাফার গুদাম নির্মাণ করার প্রকল্পটি নেয়। সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের জুন নাগাদ মূল অনুমোদিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা ছিল। পরে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই মেয়াদ জুন ২০২২ নাগাদ বাড়ানো হয়। ২০২৩ সালে নতুন করে জুন ২০২৫ নাগাদ মেয়াদ বাড়ানো হয়। আর ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৪৮২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা (সংশোধিত)। প্রকল্পটি দেশের ৩৪টি জেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। কিন্তু প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়নি পাঁচ বছরেও। আইএমইডির মতে, প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য ছাড় করা অর্থ ব্যয়ের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রকল্প দপ্তরের মাধ্যমে প্রতি অর্থবছরের শুরুতে বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা প্রণয়ন করে প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। যেসব জেলার ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হয়নি, সেসব জেলা-উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ বাড়িয়ে দ্রুত ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করতে হবে। প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য তদারকি জরুরি। সঠিক সময়ে কেন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে না তা জানতে চাওয়াসহ দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নে আইএমইডি কিছু সুপারিশও দেবে। সূত্র আরো জানায়, নানা কারণে প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু করা যায়নি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আরডিপিপি (সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন থাকায় ওই বছরে কোনো অর্থ বরাদ্দ ও ছাড় হয়নি। চলতি অর্থবছর প্রকল্পের অনুকূলে ৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দের মধ্যে ১৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ছাড় হলেও কোনো অর্থ ব্যয় হয়নি। ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত প্রকল্পের ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক অগ্রগতি ৩২২ কোটি ৪৩ টাকা বা ১২ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি ৩৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় পণ্য কেনার সাতটি, কার্য ক্রয়ের ছয়টি ও তিনটি সেবা ক্রয়ের প্যাকেজ রয়েছে। পণ্য কেনার সাতটি প্যাকেজের মধ্যে তিনটি প্যাকেজের ক্রয়কাজ সম্পন্ন। ছয়টি প্যাকেজের আওতায় ১৮টি লটের ৩৪টি সাইটের মধ্যে ১৪টির দরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়াধীন। ফলে এখনো শুরু হয়নি ৩৪টি বাফার গুদামের নির্মাণকাজ। প্রকল্পের অন্যতম প্রধান কাজ ৩৪টি জায়গার জন্য ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন করা। কিন্তু বাস্তবে মূল ডিপিপি অনুমোদনের প্রায় তিন-চার বছর পর জমির মূল্য পরিশোধের চাহিদাপত্র পাওয়া যায়। এখন মাদারীপুর, পটুয়াখালী, কুষ্টিয়া ও কুড়িগ্রাম জেলার ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। প্রকল্পের আওতায় অধিগ্রহণ করা জমির মধ্যে বৈদ্যুতিক খুঁটি, রেলওয়ের জমি, খাসজমি, নদী শ্রেণির জমি, রাস্তা সংক্রান্ত জটিলতা, জনপ্রতিনিধিদের স্থান পরিবর্তনের প্রস্তাব ইত্যাদি জটিলতা ছিল। কিছুকিছু জায়গার মালিকের জমি অধিগ্রহণ প্রত্যাহারের আবেদন ও আবেদন নিষ্পত্তিতে সময় ব্যয় হয়েছে বিধায় জমি অধিগ্রহণ বিলম্বিত হয়েছে। তবে চলতি অর্থবছর কার্যক্রমের ছয়টি প্যাকেজের আওতায় ১৮টি লটের ৩৪টি সাইটের মধ্যে ২৪টির দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে, যা যথাসময়ে মূল্যায়ন শেষ করাই বড় চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া এ প্রকল্পের একাধিক প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তনে প্রকল্পের অগ্রগতি মন্থর হয়েছে। এদিকে প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু না হওয়া প্রসঙ্গে বিসিআইসির মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) ও বিভাগীয় প্রধান (পরিকল্পনা বিভাগ) কাজী আশরাফুল ইসলাম জানান, প্রকল্প শুরু হওয়ার জন্য নকশাসহ কিছু কাজ শুরু হয়েছে। ২০১৮ সালে প্রকল্পটি পাস হয়। প্রাথমিক কাজ শুরু করা হয়েছে। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন জানান, কিছু চলমান প্রকল্পের নিবিড় পরিবীক্ষণ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে কিছু প্রকল্পে অগ্রগতি খারাপ। নানা কারণে প্রকল্পের অগ্রগতি নেই। এর মধ্যে অন্যতম সার সংরক্ষণ ও বিতরণের সুবিধার্থে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৩৪টি বাফার গুদাম নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প। প্রকল্পের নির্মাণকাজ কেন শুরু হয়নি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে প্রতিবেদন দেয়া হবে। সে বিষয়ে বেশকিছু প্রকল্পের নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রকল্পের বাস্তবায়ন ধীরগতি হওয়ায় সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ দেওয়া হবে। যাতে প্রকল্পের যেখানে গ্যাপ আছে সেটা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়।