হযরত শাহজালাল (রা.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাস অনুমোদন ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মূলত বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদারে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ওই লক্ষ্যে বাতিল করা হচ্ছে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে ইস্যু করা ১০ হাজার পাস। আর নতুন নীতিমালার আলোকে প্রয়োজনীয় শর্তপূরণ সাপেক্ষে বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের জন্য চিপসসংবলিত নতুন ডিজিটাল পাস দেয়া হবে। তবে দর্শনার্থী ক্যাটাগরিতে ভিআইপিসহ নানা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে ইস্যু করা একাধিক পাস বাতিল করা হবে। ইতোমধ্যে গত ৫ বছরে পাস গ্রহীতাদের তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারি-বেসরকারি প্রায় ৩০টি সংস্থা বিমানবন্দরে কাজ করে। তাছাড়া সেখানে ব্যাংক, বীমা, হোটেল, রেস্তোরাঁ, কার পার্কিং, দোকানপাটসহ বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাদের প্রত্যেককেই নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের প্যাডে লিখিত দিয়ে নিরাপত্তা পাস গ্রহণ করতে হয়। এ প্রক্রিয়ায় বিমানবন্দরের ইস্যুকৃত পাস হাতে পাওয়ার আগে পুলিশের ছাড়পত্র নিতে হয়।
সূত্র জানায়, কঠোর নজরদারির পরও একশ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজশে গুরুত্বপূর্ণ পাস নিয়ে অপরাধীরা সংরক্ষিত বিমানবন্দর এলাকায় ঢুকে নানা অপকর্ম ঘটিয়ে সটকে পড়ছে। শাহজালালের নিরাপত্তা পাস নিয়ে বছরের পর বছর ধরে অপরাধীরা বিমানবন্দরের সংরক্ষিত এলাকায় অপকর্ম করে আসছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বহিরাগতরাও টাকার বিনিময়ে বিমানবন্দরে প্রবেশের নিরাপত্তা পাস পেয়ে যাচ্ছে। আর ওই পাস ব্যবহার করে তারাও চোরাচালানসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজ করে আসছে। তাতে বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়েছে। শাহজালালে প্রায়ই স্বর্ণসহ নানা অবৈধ পণ্যের চালান ধরা পড়ছে। তাদের মধ্যে অনেকে বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
সূত্র আরো জানায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা পাস নিয়ে বেবিচক এবং বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ও চিন্তিত। এমন পরিস্থিতিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিতেই পাস বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর ভিআইপি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কেউ যদি স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত হলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। পাস নিয়ে বিমানবন্দরে অপব্যবহার হচ্ছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এজেন্সি ওই অপরাধে যুক্ত অনেককে আটক করেছে। এখন যাদের একান্ত প্রয়োজন তাদের যাচাই-বাছাই করে নিরাপত্তা পাস দেয়া হলে বিমানবন্দর আরো নিরাপদ হবে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ কাপ্টেন কামরুল ইসলাম জানান, বিমানবন্দরে প্রবেশের ক্ষেত্রে পাস ব্যবহারের নতুন নীতিমালা প্রয়োগে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিমানবন্দরে নতুন ডিজিটাল অ্যাক্সেস কন্ট্রোল ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার স্থাপন করা হয়েছে। আশা করা যায় নতুন ব্যবস্থায় বিমানবন্দর আরো সুন্দর ও সুশৃঙ্খল হবে।
অন্যদিকে এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান জানান, এখনো ১০ হাজার পাস বাইরে আছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান একাধিক পাস নিয়ে রেখেছে। কখনো কখনো এর অপব্যবহারও হচ্ছে। জানুয়ারি মাসের মধ্যে ওসব বাতিল করে দেয়া হবে। বিশ্বের কোনো বিমানবন্দরে একজন যাত্রী ছাড়া অন্যান্যের ঢুকতে দেয়া হয় না। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অ্যাক্সেস কন্ট্রোল ও পাসের নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। আশা করা যায় নতুন নিয়মে পাস নিয়ে অনিয়ম ও অপব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে।