বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) দেশের সরকারি-বেসরকারি কনডেনসেট ফ্র্যাকশনেশন প্লান্টের জন্য বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করবে। আর কনডেনসেট ফ্র্যাকশনেশন প্লান্টগুলোয় জ্বালানির উপজাত কনডেনসেট পরিশোধন করে ডিজেল, পেট্রল, অকটেন, এমটিটি ও ফার্নেস অয়েল উৎপাদন হবে। পরবর্তীতে ফ্র্যাকশনেশন প্লান্টগুলোয় কাঁচামাল থেকে তৈরি হওয়া জ্বালানি পণ্য বিপিসি কিনে নেবে। তবে প্রস্তুত হওয়া জ্বালানি পণ্যের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত কমিটি ও সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন নিতে হবে। তাছাড়া বিপিসি কনডেনসেট ফ্র্যাকশনেশন প্লান্টের পাশাপাশি রিফাইনারির জন্য ক্রুড অয়েলও আমদানি করতে পারবে। তবে ওই দুই ক্ষেত্রেই মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কিছু শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে আমদানীকৃত কাঁচামালের মূল্য নির্ধারণ করবে বিপিসি। তাছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ওই প্রতিষ্ঠানটিই কনডেনসেট বা ক্রুড অয়েল আমদানির বার্ষিক পরিকল্পনাও গ্রহণ করবে। সিআরইউ, নন-সিআরইউ ও রিফাইনারির মজুদ ক্ষমতা, উৎপন্ন জ্বালানি তেল ব্যবহারের সক্ষমতা বিবেচনায় ওই পরিকল্পনা নেয়া হবে। সেক্ষেত্রে সিআরইউ প্লান্ট ও রিফাইনারির জন্য বিপিসি প্লান্ট উপযোগী কনডেনসেট আমদানির পাশাপাশি নন-সিআরইউ প্লান্টের জন্য নির্ধারিত স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাঁচামাল কনডেনসেটও আমদানি করে সরবরাহ করা হবে। বিপিসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের যেসব প্লান্ট বিএসটিআইয়ের মান অনুযায়ী জ্বালানি তেল উৎপাদনে সক্ষম শুধুমাত্র সেসব প্রতিষ্ঠানকেই বিপিসির কাঁচামাল হিসেবে আমদানি করা কনডেনসেট ও ক্রুড অয়েল সরবরাহ করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। কনডেনসেট বা ক্রুড অয়েল সরবরাহের পর ইয়েল্ড প্যাটার্ন অনুযায়ী উৎপন্ন পণ্য বিপিসি গ্রহণ করবে। সেক্ষেত্রে কোনোক্রমেই পণ্য বিপিসির অনুমতি ছাড়া রফতানি বা খোলাবাজারে বিক্রি করা যাবে না। পাশাপাশি জ্বালানি তেলের ভেজাল রোধে কনডেনসেট বা ক্রুড অয়েল প্লান্টে ব্যবহার ছাড়া গ্রাহকের কাছে সরাসরি না যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।
সূত্র জানায়, দেশে ক্রমেই বেড়ে চলেছে জ্বালানি তেলের চাহিদা। পাশাপাশি দেশের গ্যাস ফিল্ড থেকে কনডেনসেটের প্রাপ্যতাও প্রতিনিয়ত কমছে। চলতি বছরে যার পরিমাণ দৈনিক ১০ হাজার ব্যারেলের নিচে নেমে গেছে। তাছাড়া সিলেট গ্যাস ফিল্ডের সিআরইউ ইউনিট চালু হলে বর্তমানে উৎপাদিত কনডেনসেটের অধিকাংশই শুধু সরকারি প্লান্টে ব্যবহার হবে। এমন পরিস্থিতিতে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগে বিপিসির পক্ষ থেকে পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে এর আগে চারটি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে চিঠি দেয়া হয়েছিল। তাতে দেশে কাঁচামাল হিসেবে কনডেনসেট আমদানি করে তার থেকে জ্বালানি তৈরির ব্যাপারে যুক্তি ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়। ফলে প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকা দেশের বেসরকারি ১২টি পরিশোধনকারী কারখানা বিপিসির কাঁচামাল আমদানির অনুমোদনের পর জ্বালানির উপজাত কনডেনসেট সরবরাহ পেয়ে উৎপাদন কার্যক্রমে ফিরবে। তার মধ্যে রয়েছে পুঁজিবাজারে একমাত্র তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল। ওই প্রতিষ্ঠানটি কনডেনসেট থেকে ডিজেল উৎপাদন ছাড়াও সম্প্রতি ন্যাপথা সংগ্রহ ও বিপণনের অনুমোদন পেয়েছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো হলো পিএইচপি পেট্রো রিফাইনারি, সুপার রিফাইনারি, ইউনিভার্সেল রিফাইনারি (প্রা.), অ্যাকোয়া মিনারেল টারপেনটাইন অ্যান্ড সলভেন্টস প্লান্টস, সিনথেটিক রেজিন প্রডাক্টস (প্রা.), জেবি রিফাইনারি, রূপসা ট্যাংক টার্মিনালস অ্যান্ড রিফাইনারি, লার্ক পেট্রোলিয়াম কোম্পানি, গোল্ডেন কনডেনসেট অয়েল রিফাইনারি ফ্যাক্টরি, চৌধুরী রিফাইনারি ও কার্বন হোল্ডিংস। দীর্ঘসময় বন্ধ থাকায় ওসব প্রতিষ্ঠানের ব্যয়বহুল ভারি যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার উপক্রম ছাড়াও হুমকিতে পড়েছিল বিনিয়োগও।
এদিকে কনডেনসেট ফ্র্যাকশনেশন প্লান্টের উদ্যোক্তাদের মতে, বিপিসির মাধ্যমে আমদানি হওয়া কনডেনসেট ব্যবহার করে মানসম্মত ডিজেল উৎপাদন সম্ভব হবে। তবে সেক্ষেত্রে যৌক্তিকভাবে মূল্য নির্ধারণ নিশ্চিত করা জরুরি। তার আগে দীর্ঘসময় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকার ফলে অনেক ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বিপিসির উপমহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ মোরশেদ হোসাইন আজাদ জানান, পরিশোধনকারী কারখানাগুলোর জন্য কাঁচামাল হিসেবে কনডেনসেট বা ক্রুড অয়েল বিপিসি বিদেশ থেকে আমদানি করবে। তবে কী পরিমাণ আমদানি করতে হবে তা বছরের শুরুতেই বা প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এবং সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। ওই কাঁচামাল প্লান্টগুলোয় তাদের সক্ষমতা বুঝে সরবরাহ করা হবে। আবার সেখানে প্রস্তুত হওয়া জ্বালানি বিপিসির কাছেই বিক্রয় করতে হবে।