বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট দাবি আদায়ে দীর্ঘ দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে টানা অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি কর্মদিবসগুলোতে চলছে হরতাল। কিন্তু এখনো দাবি আদায়ের কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলনের কৌশল বদলাতে চাচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট। ইতিমধ্যে ওই জোটের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে আন্দোলনের নতুন কিছু নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে ওই জোটটি প্রকাশ্যে এখনো কূটনীতিকদের উদ্যোগের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে আছে। বিএনপি সংশি¬ষ্ট একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সংশি¬ষ্ট সূত্র মতে, রাজধানীসহ সারাদেশেই বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের টানা অবরোধের মধ্যেও যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসছে। এতে ক্ষুব্ধ বিএনপি নেত্রী। তবে জোটের অন্যান্য নেতারা মনে করেন, দীর্ঘদিন টানা অবরোধের কারণে সাধারণ মানুষের কাছে এর আবেদন কমে গেছে। এ কারণেই দেশজুড়ে প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে যান চলাচরসহ সার্বিক জীবনযাত্রাই। তবে অবরোধ-হরতাল ডেকে ঘরে বসে থাকলে যে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে না তা বুঝতে পেরে বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে রাজপথে মিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে রাজপথে বিএনপি জোটের নেতাকর্মীরা প্রায় অনুপস্থিত। জোটের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ মিছিল, গণমিছিলের কর্মসূচি দেয়া হলেও ঢাকায় এ কর্মসূচি ঝটিকা মিছিল হিসাবেই পালিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আন্দোলনের গতি আনতে কৌশল পরিবর্তনের কথা ভাবছেন বিএনপির হাইকমান্ড। আর তারই অংশ হিসাবে জোটের নেতাদের মাঠে নামার জোর তাগিদ দিয়েছেন বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
সূত্র জানায়, বিএনপি নেতৃতাধীন জোট দীর্ঘ দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন চালিয়ে গেলেও রাজপথে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের উপস্থিতি চোখে পড়েনি। বরং মামলা-হামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে ওই জোটের অধিকাংশ নেতাকর্মীই আত্মগোপনে রয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে আন্দোলনের সফলতার ক্ষেত্রে বিএনপি নেত্রী এখন উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর রাষ্ট্রদুতদের উদ্যোগের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। কূটনীতিকদের এ উদ্যোগ ব্যর্থ হলে জোটের পক্ষ থেকে আন্দোলনের নতুন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এক্ষেত্রে জোটের বাইরে থাকা দলগুলোর ব্যানাপরেও রাজধানীতে বড় ধরনের গণমিছিলের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে নিজেদের কর্মসূচীকে সফল করতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের সর্বশেষ পর্যায়ে রয়েছে আইন অমান্যের চিন্তা করছে।
সূত্র আরো জানায়, চলমান কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনার অংশ হিসাবে টানা অবরোধের দু’মাস পূর্ণ হওয়ার দিনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের পক্ষ রাজধানীতে বিক্ষোভ সমাবেশের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। পাশাপাশি ওই নি হরতাল না ডেকে অবরোধ বহাল রেখেই জোটের পক্ষ থেকে সমাবেশ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু দুটি মামলায় বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির কারণে ওই পরিকল্পনা থেকে সরে আসে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট। এরই মধ্যে গত ৩ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর কূটনীতিকরা বিএনপি নেত্রীর সাথে বৈঠক করেন। এর একদিন আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথেও ওই কূটনীতিকরা বৈঠক করেছেন। কূটনীতিকদের সর্বশেষ এ উদ্যোগে একটি ভালো ফলের আশাবাদী বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট। আর এ কারণেই বিএনপি আন্দোলনের ক্ষেত্রে এখনই নতুন কোনো মাত্রা আনতে চাচ্ছে না।
এদিকে বিএনপির একাধিক নেতার মতে, কূটনীতিকদের তৎপরতায় কী ফল আসে তা দেখার পরই আন্দোলনের ক্ষেত্রে নতুন সিদ্ধান্ত নেবে বিরোধী জোট। আশা করা হচ্ছে বিদেশী কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপ চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট কেটে যাবে। আর তা নাহলে বিএনপি কঠোর আন্দোলনের দিকেই যাবে। তখন বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরো বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। এ প্রেক্ষাপটে রাজপথে লাগাতার বিক্ষোভ, গণসমাবেশের মাধ্যমে আন্দোলন জোরদার করার উদ্যোগ নেয়া হবে। পাশাপাশি জোটের বাইরে থাকা সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকেও গণমিছিলের মতো কর্মসূচিতে নামার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এসব কর্মসূচীতে দাবি আদায় না হলে সর্বশেষ পর্যায়ে আইন অমান্য বা অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচিও ঘোষণা করতে পারেন বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
আন্দোলনের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান জানান, রাজধানীতে কিছু যানবাহন চলাচলের অর্থ আন্দোলনের গতি ধীর হয়ে গেছে তা নয়। জনগণ ঢাকাসহ বড় শহরগুলোর সাথে দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখেছে এবং এখনো দেশজুড়ে আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। ২০ দলীয় জোট প্রয়োজন মনে করলে আলোচনা করে আন্দোলনের পরবর্তী কৌশল ঠিক করবে।