মন্ত্রিত্ব না থাকলেও মহাজোট সরকারের সাবেক মন্ত্রীরা সরকারি বাড়ি ছাড়তে রাজি নয়। নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের পর মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়া ৩০ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে ২৬ জনই নির্ধারিত সময়ে সরকারি বাড়ি ছাড়েনি। যদিও মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার আইন অনুযায়ী পদত্যাগের পর মাত্র এক মাস সময় তারা সরকারি বাড়িতে থাকতে পারেন। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের ২ মন্ত্রী ও ২ প্রতিমন্ত্রী আইন মেনে সরকারি বাড়ি ছেড়েছেন। বাকিরা এখনো সরকারি বাসভবনেই বসবাস করছেন। তারা সরকারি বাড়ি ছাড়বেন কিনা তাও জানায়নি।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা ভিভিআইপি হওয়ায় তাদের সরকারি বাড়ি ছাড়তে তাগিদ দেয়া হচ্ছে না। তবে আইন অনুযায়ী গত ২১ নভেম্বরের মধ্যে মহাজোট সরকার থেকে পদত্যাগ করা সকল মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর ১ মাসের মধ্যে সরকারি বাড়ি ছাড়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। তারা আদৌ বাড়ি ছাড়বেন কিনা, কবে নাগাদ বাড়ি ছাড়বেন তাও বলছেন না।
সূত্র জানায়, গত ২১ নভেম্বর মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছেন ১৬ মন্ত্রী ১৩ প্রতিমন্ত্রী। এরে মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা দিলীপ বড়–য়া ছাড়া বাকি সব মন্ত্রীই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। এর মধ্যে মহীউদ্দীন খান আলমগীর, ডা. দীপু মনি, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, শফিক আহমেদ, দীলিপ বড়–য়া, রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, সাহারা খাতুন, রেজাউল করিম হিরা, আবুল কালাম আজাদ, এনামুল হক মোস্তফা শহীদ, ফারুক খান, আব্দুর রাজ্জাকম আফসারুল আমীন, আফম রুহুল হক, আব্দুল লতিফ বিশ্বাস ও মোস্তাফা ফারুক মোহাম্মদ মন্ত্রী থেকে বাদ পড়েছেন। এর মধ্যে দিলীপ বড়–য়া ও শফিক আহমেদ মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়লেও মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। আর মন্ত্রিসভা থেকে প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে বাদ পড়েছেন জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, এবি তাজুল ইসলাম, ইয়াফেস ওসমান, আহাদ আলী সরকার, মো. শাহজাহান মিয়া, আব্দুল মান্নান খান, মো. মোতাহার হোসেন, মোহাম্মদ এনামুল হক, মজিবুর রহমান ফকির, ওমর ফারুক চৌধুরী, মো. মাহবুবুর রহমান, মো. আব্দুল হাই ও মেহের আফরোজ চুমকি।
সূত্র আরো জানায়, প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব অনুসারে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের লক্ষ্যে মহাজোট সরকারের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা গত ২১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। রাষ্ট্রপতি তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করলে তারা মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েন। সাবেক মন্ত্রীদের মধ্যে আফসারুল আমীন এবং আব্দুল লতিফ বিশ্বাস আইন মেনে নির্ধারিত সময়ে সরকারি বাড়ি ছেড়েছেন। আর প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে মোতাহার হোসেন এবং মোস্তাফিজুর রহমান ফিজা সরকারি বাড়ি ছেড়েছেন।
এদিকে পদত্যাগ করা মন্ত্রীরা আইন না মানা বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিশ্চুপ। তারা বলছেন, সরকারি বাড়িতে তারা যতদিন বেশি থাকবেন, ইচ্ছে করলে তাদের ততদিনের জরিমানা করা যাবে। নির্ধারিত সময়ে বাড়ি না ছাড়লে সরকার চাইলে বাড়ি ভাড়ার সাথে অতিরিক্ত ৫০ থেকে ১শ’ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ জরিমানা করা যায়। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাড়ি না ছাড়া মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের জরিমানা করা হবে কিনা এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
সরকারি আবাসন পরিদফতরের পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, পদত্যাগ করা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে দু’একজন সরকারি বাড়ি ছেড়েছেন। বাকিরা এখনো সরকারি বাড়ি ছাড়েননি। ছাড়বেন কিনা তাও জানাননি।
এ প্রসঙ্গে গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব খোন্দকার শওকত হোসেন জানান, কোনো কোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী সরকারি বাড়ি ছেড়েছেন। কেউ কেউ ছাড়ছেন, কেউ কেউ বাড়ি ছাড়ার পর্যায়ে আছেন।
গণপূর্ত সচিব সরকারি বাড়ি ছাড়ার ব্যাপারে সাবেক মন্ত্রীদের তাগিদ দেয়ার প্রয়োজন হবে না বলেও মনে করেন। পাশাপাশি এখন পর্যন্ত কতজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বাড়ি ছেড়েছেন সে বিষয়েও তার কাছে কোনো তথ্য জানাননি তিনি।