আলাদা নীতিমালা নয়, সমন্বিত একটি নীতিমালার আওতায় সঞ্চয়পত্রের সকল স্কিম পরিচালনা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একক নীতিমালা কার্যকর হলে একদিকে যেমন পৃথক নীতিমালার জটিলতা কাটবে, অন্যদিকে গ্রাহকদেরও অনলাইনে সেবা নিতে সুবিধা হবে। একই ডকুমেন্ট দিয়ে সব স্কিমের সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে। তাতে ব্যাংক ও ডাকঘরের কার্যক্রমও সহজ হবে। বর্তমান পারিবারিক ও পেনশনসহ ১১ ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে। প্রতিটির জন্য রয়েছে আলাদা নীতিমালা। সবকটিকে একটি নীতিমালায় আনতে সমন্বিত সঞ্চয়পত্র নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই সংক্রান্ত খসড়া অনুমোদনের জন্য জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তর থেকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে (আইআরডি) পাঠানো হয়েছে। জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকার সঞ্চয়পত্র কিনতে ইতিপূর্বে ভোটার আইডি কার্ড এবং টিআইএন বাধ্যতামূলক করেছে। প্রাতিষ্ঠানিক সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রেও একটি গাইডলাইন জারি করেছে। পাশাপাশি সুদহারও কমানো হয়েছে। মূলত সঞ্চয়পত্র খাতে কালোটাকা, ধনী এবং করপোরেট বিনিয়োগ ঠেকাতে নানা ধরনের বিধান চালু করা হচ্ছে। ব্যাংক খাতের সুদহার কমে যাওয়ায় অধিক মুনাফার আশায় অনেকে এখন সঞ্চয়পত্র কিনছে। ফলে সুবিধাভোগী নিম্ন ও মধ্যম শ্রেণির কাছে সঞ্চয়পত্রের সুবিধা কম যাচ্ছে। প্রকৃত সুবিধাভোগীর কাছে সঞ্চয়পত্রের সুবিধা পৌঁছে দিতে এসব উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, সঞ্চয়পত্রের স্কিমগুলোর মধ্যে বর্তমানে ৪টি সঞ্চয় স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্টের আওতায় ইস্যু করা হচ্ছে। সেগুলো হচ্ছে-পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্র। সঞ্চয়পত্রের ওসব স্কিমের মধ্যে ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র এবং ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ‘সঞ্চয়পত্র বিধিমালা ১৯৭৭’-এর মাধ্যমে পরিচালনা হচ্ছে। আর পরিবার সঞ্চয়পত্র ‘পরিবার সঞ্চয়পত্র নীতিমালা ২০০৯ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। পেনশনার সঞ্চয়পত্র একইভাবে ‘পেনশনার সঞ্চয়পত্র নীতিমালা ২০০৯’-এর মাধ্যমে পরিচালনা হচ্ছে। ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড বেচাকেনা হচ্ছে ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড বিধিমালা ২০০২ এবং ইউএস ডলার প্রিমিয়ার বন্ড ইউএস ডলার প্রিমিয়ার বন্ড বিধিমালা ২০০২ আলোকে পরিচালিত হচ্ছে। তাছাড়া ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড বিধিমালা ১৯৮১ আলোকে চলছে ওই বন্ড বেচাকেনা। তার বাইরে রয়েছে বাংলাদেশ প্রাইজবন্ড, ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের অধীনে সাধারণ হিসাব, মেয়াদি হিসাব, ডাকঘর জীবন বিমা। ওসব সঞ্চয় স্কিম পৃথকভাবে নীতিমালার মাধ্যমে পরিচালিত হলেও প্রয়োজনীয় শর্ত ও ক্রয় করার ক্ষেত্রে ডকুমেন্ট প্রায় একই। শুধু সুদ ও ক্রেতার বয়স এবং শ্রেণি ভিন্নতা আছে। আর সঞ্চয়পত্রের মূল্যায়ন, আয়কর হার, ক্রয় পদ্ধতি ও নিবন্ধন, নগদায়ন পদ্ধতি, মনোনয়ন ব্যক্তি, সঞ্চয়পত্র হারিয়ে গেলে করণীয় এবং অন্যান্য শর্তবলি প্রায় একই রকম।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের পরিচালক শাহ আলম জানান, বর্তমান প্রতিটি সঞ্চয়পত্র ম্যানুয়াল এবং পৃথক নীতিমালায় পরিচালনা হচ্ছে। সময়ের প্রেক্ষিতে অনলাইনে সব নীতিমালাকে একসঙ্গে যুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেজন্য একটি সমন্বিত নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত হচ্ছে। খসড়াটি অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে অনুমোদনের পর তা কার্যকর হবে।