নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র কুপন নিচ্ছে না নৌপথে চলাচলরত পণ্যবাহী অনেক জাহাজ। জাহাজ মালিকদের এমন কারসাজিতে প্রতিদিনই রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অথচ সব জাহাজের রাজস্ব আদায় হলে বছরে রাজস্ব আয় আরো দ্বিগুণ হতো। এই অনিয়মের সঙ্গে বিআইডব্লিউটিএ’র কতিপয় মাস্টার পাইলটের সংশ্লিষ্টতারও অভিযোগ রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে মাদার ভেসেল থেকে প্রতিদিন পণ্য পরিবহন করছে দেড় শতাধিক লাইটারেজ জাহাজ। নিজস্ব পণ্য পরিবহনের জন্য দেশের বিভিন্ন শিল্প গ্রুপগুলোর লাইটারেজ জাহাজ রয়েছে। সরকারি নীতিমালা অনুসারে পণ্যবাহী লাইটারেজ জাহাজ পরিচালনার জন্য বিআইডব্লিউটিএ থেকে প্রশিক্ষিত মাস্টার পাইলট নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যদিও দৈনিক চাহিদা অনুপাতে বিআইডব্লিউটিএতে প্রশিক্ষিত মাস্টার পাইলটের স্বল্পতা রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে নৌরুটে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ আমদানি পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। দেড় শতাধিক লাইটারেজ জাহাজে ওসব পণ্য পরিবহন করা হয়। পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলে মাস্টার পাইলট নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। একটি বিটের জন্য পণ্যবাহী প্রতি জাহাজের জন্য বিআইডব্লিউটিএ থেকে ২ হাজার টাকা জমা দিয়ে কুপন কিনে নিতে হয়। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে অধিকাংশ পণ্যবাহী জাহাজ কুপন না নিয়ে মাস্টার পাইলট ছাড়াই পণ্য পরিবহন করছে। তাতে প্রচুর রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। পাশাপাশি মাস্টার পাইলট স্বল্পতায় প্রায় সময়ই নৌ-দুর্ঘটনা ঘটছে। অথচ সরকার নিরাপদে জাহাজ চলাচলের জন্য নির্ধারিত নৌরুট তৈরি করেছে। ওই রুটগুলো জাহাজ চলাচল নিরাপদ করার জন্য সরকারিভাবে বয়া, বাতি স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি নৌরুট খননের জন্যও প্রকল্প নেয়া হয়েছে। সেজন্যই ওসব নৌরুট দিয়ে জাহাজ চলাচলে সরকারকে রাজস্ব দিতে হয়। প্রতিটি নৌরুট ৪/৫টি বিট রয়েছে। প্রতি বিটে দৈনিক চলাচলের জন্য জাহাজ মালিকদের বিআইডব্লিউটিএ থেকে প্রতিটি জাহাজের জন্য কুপন কিনতে ২ হাজার টাকা জমা দিতে হয়। আর তার বিপরীতে বিআইডব্লিউটিএ মাস্টার পাইলট বরাদ্দ দেয়।
সূত্র জানায়, বিআইডব্লিউটিএতে দীর্ঘদিন যাবৎ মাস্টার পাইলট নিয়োগ হচ্ছে না। বর্তমানে সংস্থাটিতে মাত্র ২০ জন স্থায়ী পাইলট রয়েছে। আর পরিস্থিতি সামাল দিতে খ-কালীন আরো ১৭ জন পাইলট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ফলে ওই ৩৭ জন পাইলট দিয়েই দেশের নৌপথে পণ্যবাহী জাহাজ পরিচালনা করা হচ্ছে।
এদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের সিনিয়র সহ-সভাপতি নবী আলম মাস্টার জানান, দৈনিক ১২০ থেকে সর্বোচ্চ ১৮০টি পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল করে। প্রতিটি জাহাজে মাস্টার পাইলট নেয়া বাধ্যতামূলক। একটি জাহাজের প্রতি বিটের জন্য কুপন কিনে নিতে হয়। কিন্তু দৈনিক চলাচলরত সব জাহাজ থেকে রাজস্ব আদায় করা যাচ্ছে না। আবার পাইলটদের কাছেও জাহাজ মালিকরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখলে অনেক অনিয়মই ধরা পড়বে।
অন্যদিকে এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. সেলিম উদ্দিন জানান, নতুন করে মাস্টার পাইলট নিয়োগ মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার নতুন একটি নৌরুট চালু করা হবে। টেকনাফ, মিরসরাই ও সেন্টমার্টিন রুটও চালুর সম্ভাবনাও রয়েছে। ওসব রুট চালু করা গেলে রাজস্ব আয় আরো বাড়বে। বর্তমানে নৌরুট থেকে বছরে প্রায় ১১/১২ কোটি টাকা আয় হচ্ছে।