গণপূর্ত অধিদফতরের আওতাধীন সংস্থাগুলোর প্রকল্পে কাজ যথাসময়ে শেষ হচ্ছে না। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) অনেক প্রকল্পের কাজ সময় মতো শেষ করতে পারছে না। আর প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শেষ না হওয়ায় বারবার সময় ও টাকা বাড়ানো হচ্ছে। তাতে সরকারের ক্ষতি হচ্ছে বিপুল অংকের টাকা। পাশাপাশি রাজউকের অনেক প্রকল্পের কাজ সময় মতো শেষ না হওয়ায় অধিগ্রহণ করা জমির মালিকরাও চরম ক্ষতির মুখে পড়ছে। গণপূর্ত অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গণপূর্ত অধিদফতরের হাতে থাকা প্রকল্পগুলোর মধ্যে ১৯টি প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৩০ শতাংশ বা তারও নিচে। তার মধ্যে ১৪টি প্রকল্পের কাজ এ বছরেই শেষ করার কথা রয়েছে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগের আওতায় বর্তমানে ১০২টি প্রকল্পের কাজ চলমান। তার মধ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ, গণপূর্ত অধিদফতরের ৩৩টি এবং জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ৩২টি এবং বাকিগুলো মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য বিভাগ কাজ করছে। তবে রাজউকের অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ভবনের ফ্ল্যাট নির্ধারিত সময়ে না পেয়ে বরাদ্দপ্রাপ্তরা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছিল। তাছাড়া রাজধানীর-গুলশান- বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তবে তার কাজ আজও শুরু হয়নি। ফলে বিপুলসংখ্যক ভুক্তভোগী প্রায় ১০ বছর ধরে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে পারছে না। তাছাড়া গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনেক প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও এখনও ভৌত কাজই শুরু হয়নি।
সূত্র জানায়, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগের আওতায় বর্তমানে ১০২টি প্রকল্প চলমান। তার মধ্যে গণপূর্ত ১০টি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক), অধিদফতরের ৩৩টি, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ৩২টি প্রকল্প রয়েছে। বাকিগুলো এ মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য বিভাগের হাতে রয়েছে। বিগত ২০১৯ সালের জুলাই মাসে ঢাকার অফিসার্স ক্লাবের বহুতল ভবন নির্মাণে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। যা এ বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু ওই কাজের অগ্রগতি শূন্য। সবেমাত্র দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে মাত্র। তাছাড়া জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ৮টি প্রকল্পের কাজও এ বছরে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু সেগুলোর একটির কাজেও ৫০ শতাংশ অগ্রগতি হয়নি। তাছাড়া জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ২০১৬ সালের জুলাই মাসে হবিগঞ্জের সদর উপজেলায় স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য আবাসিক প্লট উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। প্রায় ৭ একর জমিতে ১৩২টি প্লট তৈরির পরিকল্পনা ছিল। চলতি বছরের ডিসেম্বরে ওই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত মাত্র কাজের দরপত্র যাচাই করা হচ্ছে। তাছাড়া রাজউকের বহুল আলোচিত ঢাকার উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরে নিম্ন ও মধ্যআয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ প্রকল্পের মাত্র ৪২ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। বিগত ২০১১ সালের নভেম্বরে শুরু হওয়া ওই প্রকল্পের কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। এখন পর্যন্ত ওই প্রকল্পে ব্লকের কাজ মোটামুটি শেষ হয়েছে, যদিও ৬টি ভবন নির্মাণ এখনো বাকি রয়েছে। আর অগ্রগতিতে পিছিয়ে রয়েছে ঝিলমিল আবাসিক পপ্রকল্প এলাকার আবাসিক ও বাণিজ্যিক অবকাঠামোর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজও। বিগত ২০১৭ সালের জুলাইতে শুরু হওয়া ওই প্রকল্পের কাজ চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা। অথচ এখন পর্যন্ত ওই প্রকল্পে কাজের অগ্রগতি মাত্র ৫ শতাংশ।
সূত্র আরো জানায়, রাজধানীর গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের ১.২ কি.মি. রাস্তা নির্মাণ এবং ১ কি.মি. লেক খনন, প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ কাজ ২০১৭ সালে শেষ করা হয়েছে; কিন্তু প্রকল্পের কাজ আর শুরু হয় না। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা প্রায় ১১ বছর ধরে পাচ্ছে না ক্ষতিপূরণের টাকা। পাশাপাশি তারা ভূমি উন্নয়ন করও দিতে পারছে না। আর উত্তরায় রাজউক অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের এসব ভবনের ফ্ল্যাট নির্ধারিত সময়ে না পেয়ে ক্ষতিপূরণ বরাদ্দপ্রাপ্তরা দাবি করেছিল। তাছাড়া চট্টগ্রামে ৩৬টি পরিত্যক্ত বাড়ির জায়গায় সরকারি কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একটি প্রকল্প হাতে নেয় গণপূর্ত অধিদফতর। ১ হাজার ১৩১ কোটি ৮৫ লাখ ৯৪ হাজার টাকার ওই প্রকল্প এ বছরের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। প্রকল্পের আওতায় মাত্র ৮টি প্যাকেজে ৩৫টি বাড়ি নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ৬টি প্যাকেজে ২৮টি ভবন নির্মাণে চুক্তি হয়েছে। ২টি প্যাকেজ নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। বাকিগুলোর কাজ শুরুর বিষয়ে যেটুকু অগগ্রত হয়েছে তা শুধুই নথিপত্রেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে অনেক কাজই এখনো শুরু হয়নি।
এদিকে গণপূর্ত অধিদফতর রাজধানীর সোবহানবাগ মসজিদের আধুনিকায়ন এবং ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে একটি প্রকল্প নেয়। প্রায় ৫০ কোটি টাকার ওই প্রকল্পের কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই প্রকল্পের কাজেও মাত্র এক শতাংশ ভৌত অগ্রগতি হয়েছে। জাতীয় সংসদের একটি প্রকল্পেরও একই অবস্থা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ২৩৩ কোটি ৯২ লাখ ৭ হাজার টাকার প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা বয়েছে। কিন্তু ওই প্রকল্পের কাজের ভৌত অগ্রগতিও এক শতাংশ। ঢাকার মিরপুরে আবাসিক ফ্ল্যাট স্বপ্ননগর আবাসিক প্রকল্প-১’ ও ‘স্বপ্ননগর আবাসিক প্রকল্প-২’ এবং উত্তরার তৃতীয় ধাপের ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের কাজও এখনো শেষ হয়নি।
অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নয়নের ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারে অনেক অর্জন রয়েছে। কিন্তু গণপূর্ত ও গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ের তা অর্জন করতে পারছে না। ওই মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন কাজে একটি অসাধু চক্র দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়। ওই চক্রই কলুষিত পরিবেশ তৈরি করেছে। সরকার যখন জুয়াড়ি চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে, তখন দেখা গেছে গণপূর্তেও ওই একই চক্র এখনো কাজ করছে। কারণ ওই চক্রের সদস্যরাই অনেক কাজের ঠিকাদার।
এ প্রসঙ্গে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন জানান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাজের গতি ভালো নয়। আসলে মন্ত্রণালয় যে পদ্ধতিতে কাজ করছে তাতে পরিবর্তন আনতে হবে। সিস্টেমের কারণে কাজের কম গতি, ডায়নামিক নয়। সময় বেশি লাগলে খরচ বেশি লাগে। তখন ডিপিপি সংশোধন করতে হয়। ঠিকাদার তখন খরচ কমাতে চায়। কাজের মান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।