চট্টগ্রাম বন্দরে গভীর সমুদ্র থেকে বন্দরের বহির্নোঙরে বে পাইলটিংয়ের দায়িত্ব অনভিজ্ঞ ৫টি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেয়ার প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন ক্ষুব্ধ। এতোদিন প্রচলিত নিয়মে শিপিং এজেন্টরা তাদের স্ব স্ব উদ্যোগে সহনশীল মাশুলে বে পাইলটিংয়ের বিষয়টি পরিচালনা করে আসছিল। কিন্তু বন্দরের নৌবিভাগ কর্তৃক জারি করা এক অফিস আদেশে সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে ডিপ ড্রাফট জাহাজের আগমন-নির্গমন নিরাপত্তার জন্য নেভিগেশনাল ফেসিলিটেটরস নামে অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের হাতে বে পাইলটিং অর্পণের উদ্যোগ নেয়া হয়। তালিকাভুক্ত হয়ে ওসব প্রতিষ্ঠান কুতুবদিয়া গভীর সমুদ্র এলাকা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর পর্যন্ত পাইলটিং সেবার মাশুল জাহাজপ্রতি দেড় হাজার ডলার চায়। তার বাইরে দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি প্রতিষ্ঠান ভারসাম্য না আসা পর্যন্ত প্রতিদিন ৩০০ ডলার করে চেয়েছে। শিপিং এজেন্টদের আশঙ্কা, তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো মাশুল আদায়ে সিন্ডিকেট গড়ে তুলতে পারে। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন এবং বন্দর কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বেসরকারি খাতের বে পাইলটিংয়ের দায়িত্ব অর্পণে শিপিং এজেন্টদের অতিরিক্ত মাশুল গুনতে হবে। তাতে জাহাজে পণ্য পরিবহন ব্যয়ও অত্যধিক বেড়ে যাবে। ফলে অতিরিক্ত ব্যয় পুষিয়ে নিতে আমদানি পণ্যের দামও বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া এই প্রক্রিয়াটি চট্টগ্রাম বন্দর আইন ১৯০৮ এবং বন্দর অর্ডিনেন্সের অনুমোদনের বাইরে। নেভিগেশনাল ফেসিলিটেটর চার্জ বিধিবদ্ধ পোর্ট ট্যারিফ দ্বারা নির্ধারিত নয়। এমন অবস্থায় শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বে পাইলটিংয়ে তালিকাভুক্ত ৫ প্রতিষ্ঠানকে নামসর্বস্ব ও অনভিজ্ঞ আখ্যায়িত করে নেভিগেশনাল ফেসিলিটেটর হিসেবে ওসব প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্তি বাতিল চেয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে। ৬৫টি শিপিং প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রতিমন্ত্রী বরাবর ওই চিঠি দেয়া হয়।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরে বছরে দেড় হাজার জাহাজ বহির্নোঙরে পণ্য খালাস করে। তার মধ্যে সাড়ে ৯ মিটারের গভীরতার প্রায় ১ হাজারের বেশি জাহাজ রয়েছে। সাড়ে ৯ মিটারের বেশি গভীরতার জাহাজগুলোকে বে পাইলটিংয়ের ওই মাশুল গুনতে হবে। বর্তমানে সাগর থেকে জেটিতে ভিড়ানোর সময় বন্দরের পাইলটরা ওই সেবা দিয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দর মাশুল আদায় করে। মূলত নেভিগেশনাল বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় তা বন্দরের আওতায় রেখেছে। অথচ বেসরকারি খাতে বে পাইলটিংয়ের সেবা ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আর যেসব প্রতিষ্ঠানকে বে পাইলটিংয়ের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে শিপিং এজেন্ট হিসেবে ওসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স থাকলেও তারা খুব পরিচিত নয়। এমনকি তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোনো জাহাজ হ্যান্ডলিং করার অভিজ্ঞতা নেই এমন প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। যদিও বন্দর তালিকাভুক্তির সময় শুধু শিপিং এজেন্ট হিসাবে লাইসেন্স থাকার শর্ত দিয়েছিল। আবার বে পাইলটিংয়ে যাদের অভিজ্ঞতা আছে তাদেরও তালিকাভুক্তির সময় রাখা হয়নি। মূলত গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠান যাতে অংশ নিতে পারে সেজন্যই বন্দরের সাবেক পাইলট রাখার শর্ত দেয়া হয়েছিল।
এদিকে বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বে পাইলটিংয়ের বিষয়টি অবগত হওয়ার পর চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। ওই প্রেক্ষিতে বে পাইলটিংয়ে তালিকাভুক্তি যদি নিয়মমাফিক হয়ে না থাকে তাহলে হয়তো ভিন্ন সিদ্ধান্ত হতে পারে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন সংশ্লিষ্টরা বে পাইলটিং বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানের সঙ্গে সম্প্রতি আলোচনা করেছে। বন্দর চেয়ারম্যান বে পাইলটিংয়ে তালিকাভুক্ত ৫ প্রতিষ্ঠানের পাইলটিং কার্যক্রম বন্ধ রাখার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন। বর্তমানে যারা তালিকাভুক্ত হয়েছে তারা এই কাজটি মাত্র দুই বছরের জন্য পেয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ জানান, বে পাইলটিংয়ের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে জিম্মি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হোক শিপিং ব্যবসায়িরা তা চায় না। সেজন্য সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আলোচনা করে নিলে ভালো হয়।