বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) পরিবহনে বড় আকারের ৬টি এলএনজি ট্যাংকার কেনার উদ্যোগ নিয়েছে। ওসব ট্যাংকার কিনতে ১০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে। সেজন্য চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়াসহ ৮টি দেশের ১৪টি প্রতিষ্ঠান আর্থিক সহায়তা প্রদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। মূলত অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, রূপকল্প ২০৪১, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ২০৩০ এবং ব্লু-ইকোনমি (সুনীল অর্থনীতি) ধারণার আলোকে বিএসসি ৬টি জাহাজ ক্রয়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিএসসি নতুন কিনতে যাওয়া ৬টি ট্যাংকারের মধ্যে দুটির ধারণক্ষমতা প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার ঘনমিটার, দুটির ১ লাখ ৭৪ হাজার ঘনমিটার এবং বাকি দুটির ধারণক্ষমতা প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার ঘনমিটার এলএনজি। তার মধ্যে ১ লাখ ৪০ হাজার ঘনমিটার ধারণক্ষমতার দুটি ট্যাংকারের মূল্য ৩ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা, ১ লাখ ৭৪ হাজার ঘনমিটার ধারণক্ষমতার দুটির মূল্য ৩ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা এবং ১ লাখ ৮০ হাজার ঘনমিটার ধারণক্ষমতার দুটির মূল্য ৩ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, মহেশখালী দ্বীপের কাছে দেশের দুটি এলএনজি টার্মিনাল এবং এক/একাধিক স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের পরিপ্রেক্ষিতে এলএনজি ট্যাংকার ক্রয়ের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। জাহাজগুলো দিয়ে বছরে প্রায় ১৯ মিলিয়ন ঘনমিটার (৬ দশমিক ৭১ মিলিয়ন টন) এলএনজি পরিবহন করা সম্ভব হবে। ফলে এলএনজি পরিবহন, পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় বিএসসি তথা রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং বিদেশী জাহাজের ওপর নির্ভরশীলতা কমে আসবে। তাতে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তাও অনেকাংশে নিশ্চিত হবে। একই সাথে মেরিটাইম সেক্টরে দক্ষ লোকবল সৃষ্টিসহ চাকরির সুযোগ তৈরির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
সূত্র আরো জানায়, বিগত ২০১৮ ও ২০১৯ সালে চীনের আর্থিক সহায়তায় সরকার বিএসসিকে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে ১ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬টি জাহাজ সংগ্রহ করেছে। সংগৃহীত জাহাজগুলো হলো- এমভি বাংলার জয়যাত্রা, এমভি বাংলার সমৃদ্ধি, এমভি বাংলার অর্জন, এমটি বাংলার অগ্রযাত্রা, এমটি বাংলার অগ্রদূত এবং এমটি বাংলার অগ্রগতি। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বিএসসি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৭২ সালে ‘বাংলার দূত’ ও ১৯৭৩ সালে ‘বাংলার সম্পদ’ অর্জনের মাধ্যমে বিএসসি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মোট ৩৮টি জাহাজ সংগ্রহ করেছিল। কিন্তু বয়সজনিত কারণে এবং বাণিজ্যিকভাবে অলাভজনক বিবেচিত হওয়ায় বিভিন্ন পর্যায়ে ৩৬টি জাহাজ বিক্রয়/হস্তান্তরের পর বিএসসিতে মাত্র দুটি জাহাজ ছিল। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের গত মেয়াদে ৬টি নতুন জাহাজ সংগ্রহের ফলে বর্তমানে বিএসসির বহরে ৮টি জাহাজ রয়েছে।
এদিকে বিএসসি কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন এলএনজি ট্যাংকার/ক্যারিয়ার ক্রয়ের লক্ষ্যে বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর ইপিসি (ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন) প্লাস শিপ ফাইন্যান্সিং ভিত্তিতে আর্থিক সহায়তা প্রদান সংক্রান্ত প্রস্তাবের আলোকে অতিসম্প্রতি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়। তাতে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, জ্বালানি বিভাগের যুগ্ম-সচিব, পেট্রোবাংলার পরিচালক এবং রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।