করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বর্তমানে বিশ^জুড়েই মানুষ গৃহবন্দি অবস্থায় রয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে নেমেছে ধস। ইতিমধ্যে এদেশের রফতানি আয় অস্বাভাবিক হারে কমছে। একই সাথে কমে যাচ্ছে রেমিট্যান্স-প্রবাহও। এ ধারা অব্যাহত থাকলে সামনের দিনগুলোতে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ আস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়ার আশঙ্কা দিন দিন তীব্র হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই তখন দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজার চাপে পড়ে যাবে। তখন দেশের সার্বিক অর্থনীতিতেই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বৈদেশিক বাণিজ্যে কিছুটা স্থবিরতার কারণে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের সম্ভাব্য পরিস্থিতি এখনো তেমনটা আঁচ করা যাচ্ছে না। কিন্তু যেভাবে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে ডলারের সরবরাহ কমে যাচ্ছে, তাতে সামনে ভয়াবহ সঙ্কট দেখা দিতে পারে। ইতিমধ্যে ব্যাংকগুলোর তাদের নিজস্ব মজুদ এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে যেটুকু আসছে তা দিয়ে চাহিদা মেটানো হচ্ছে। আর যেসব ব্যাংকের মজুদ ফুরিয়ে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তায় তারা বিকল্প ব্যবস্থায় বৈদেশিক বাণিজ্যের দায় মেটাচ্ছে। কিন্তু সামনে এ সঙ্কট সব শ্রেণীর ব্যাংকেরই আসতে পারে, পুরো অর্থনীতিতে যার ভয়াবহ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্র জানায়, তৈরি পোশাক খাত দেশের রফতানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশের ওপরে আবদান রাখছে। আর ইউরোপীয় পাঁচটি দেশে তৈরি পোশাকের প্রায় ৭০ ভাগ রফতানি হয়। তার মধ্যে ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ফলে ওসব দেশ তাদের বাজার সঙ্কুচিত করে ফেলেছে। পাশাপাশি এদেশের রেমিট্যান্সের দুই-তৃতীয়াংশের বাজার হলো মধ্যপ্রাচ্য। ওই মধ্যপ্রাচ্যও করোনা ভাইরাসের কারণে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। শ্রমিকরা ঘর থেকে বের হতে পারছে না। অনেক বিদেশী কোম্পানি ঘরে বসিয়েই শ্রমিকদের শুধু খাবারের জোগান দিচ্ছে। তাতে বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের আয় প্রায় বন্ধ। তাছাড়া ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ যেসব দেশে প্রবাসী শ্রমিকরা অবৈধভাবে কাজ করছে, তাদের অবস্থা আরো শোচনীয়। একমাত্র ইতালিতেই এমন অবৈধ শ্রমিক রয়েছে প্রায় এক লাখ। আর তাদের বেশির ভাগই চুক্তি ভিত্তিতে কাজ করে। করোনায় কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের থেকে রেমিট্যান্স-প্রবাহ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। সামনে এ পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণের আশঙ্কা রয়েছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহের প্রধান দুই মাধ্যম তথা রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স-প্রবাহে বড় ধরনের ধাক্কা লাগায় সামনে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ার শঙ্কা বাড়ছে।
এ প্রসঙ্গে ব্যাংক সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা বলছেন, বর্তমানে সীমিত পর্যায়ে ব্যাংকিংয়েই হিমশিম খেতে হচ্ছে। ব্যাংকগুলোর কাছে যেটুকু বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ছিল এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে ছিটেফোঁটা যেটুকু আসছে তাই দিয়ে কোনো মতে পরিস্থিতি সামাল দেয়া হচ্ছে। কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতি উন্নতি হলে ব্যাপক ভিত্তিতে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা বেড়ে যাবে। কিন্তু যে হারে চাহিদা বাড়বে ওই হারে সরবরাহ বাড়বে না। এমনিতেই বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট ভয়াবহ আকারে দেখা দিতে পারে। এ সময়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা কী হবে তার ওপর বাজার পরিস্থিতি নির্ভর করবে। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে জোগান না দিলে সম্ভাব্য পরিস্থিতি সামাল দেয়া কষ্টকর হয়ে পড়বে। আর রিজার্ভের মজুদের ওপর নির্ভর করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা। তবে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার যে বড় ধরনের চাপে পড়ে যাচ্ছে তা অনেকটাই পরিস্কার।