সরকার দেশের ব্যাটারিচালিত যানবাহনে কম দামে বিদ্যুৎ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের তুলনায় অফপিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক কমে যাচ্ছে। আর সঙ্কট দূর করতেই ব্যাটারিচালিত যানে কম দরে বিদ্যুৎ দেয়া হবে। ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দেশে ২০ লাখেরও বেশি ব্যাটারিচালিত যানবাহন রয়েছে। এর সবই থ্রি হুইলার অটোরিক্সা। দেশের বড় শহরগুলোর পাশাপাশি প্রত্যন্ত গ্রামেও ব্যাটারিচালিত থ্রি হুইলারের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। তার বাইরে রিক্সা এবং ভ্যানে স্থানীয়ভাবে ব্যাটারি সংযোজন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে কত ব্যাটারি রোজ চার্জ দেয়া হচ্ছে তার কোন সঠিক হিসাব নেই। বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে বছর কয়েক আগে ব্যাটারিচালিত যানবাহনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এ নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ সড়ক এবং সেতু মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকও করে। ওই প্রেক্ষিতে ওসব যানবাহন আমদানির ওপর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিষেধাজ্ঞাও জারি করে। যদিও সরকারের ওই প্রক্রিয়াতে এসব ত্রি-চক্র যানের বিস্তার থামেনি। বরং কয়েকগুণ বেশি হয়েছে।
সূত্র জানায়, ব্যাটারিচালিত যানবাহন গ্রামীণ জনপদে সহজ যোগাযোগের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করেছে। ফলে এখন ওই যানবাহন বন্ধ করে দেয়ার বদলে নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে যানবাহনগুলো কি প্রক্রিয়াতে বিদ্যুৎ দিয়ে চার্জ করা যেতে পারে তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চিন্তা করা হচ্ছে। শুরুতে সৌর বিদ্যুৎ দিয়ে ব্যটারিচালিত ওসব যানজট চার্জ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। সেজন্য বিদ্যুৎ বিভাগ গ্রামীণ এলাকাতে রয়েছে এমন বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিকে সোলার চার্জিং স্টেশন নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিল। যাতে গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ না নিয়ে ওসব থ্রি হুইলার চার্জ হতে পারে সেজন্যই ওই বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু এখন ওই সিদ্ধান্ত বদলে কম দামে গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে পিক এবং অফপিক দুই সময়েই চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু অফপিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা একেবারেই কমে যায়। তখন বেশিরভাগ বিদ্যুৎ কেন্দ্রই বন্ধ রাখতে হয়। বিকল্প হিসেবে ওই বিদ্যুতের ব্যবহার তৈরি করা গেলে কেন্দ্রগুলো চালানো যাবে। তবে পিক আওয়ারে চাহিদা বেশি থাকে তখন গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ নিলে চাপ বেশি পড়ে। সেজন্য কিভাবে পৃথক একটি বিক্রয় শ্রেণী নির্ধারণ করা যায় সে বিষয়ে নবায়নযোগ্য জ¦ালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং বিতরণ কোম্পানিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অবশ্যই ওই দামটি হবে বাণিজ্যিক বিদ্যুতের তুলনায় কম। তবে দামের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে দেশে সর্বোচ্চ ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। আর এর বিপরীতে উৎপাদন ক্ষমতা ২২ হাজার মেগাওয়াট। অফপিক আওয়ারে চাহিদা ৮ থেকে ৯ হাজার মেগাওয়াটে নেমে আসে। সরকার নানাভাবে চেষ্টা করেও বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি করতে পারছে না। মূলত সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা বিদ্যুতের অফপিক আওয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাধারণত থ্রি হুইলারগুলো রাতেই চার্জ দেয়া হয়। একটি থ্রি হুইলার ১২ ঘণ্টা চার্জ দিলে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা চলতে পারে।
এদিকে সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনে শ্রেণী নির্ধারণ করে। এবার ব্যটারিচালিত থ্রি গাড়ির জন্য পৃথক শ্রেণী নির্ধারণ করা হতে পারে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভার কার্যপত্রে বলা হয়েছে- এ বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ওই কার্যপত্রে হ্রাসকৃত মূল্যে বিদ্যুতের দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে বলা হয় অফপিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধিতে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।