বাঙালি জাতির স্বাধীনতার স্বপ্ন সুদীর্ঘকালের। শোষকের যাতাকালে বারবার নিষ্পেষিত হয়েছে তাদের বজ্রকন্ঠগুলো। তবু দমেনি তারা। বলার অপেক্ষা রাখে না, ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হয়েও আমরা সত্যিকার অর্থে পরিপূর্ণ স্বাধীনতার স্বাদ ভোগ করতে পারিনি। বিশেষ করে স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী পাকিস্তানী শাসনের চরম শিকার হয়েছে বাঙালি জাতি।
পাক সরকারের বিমাতাসুলভ আচরণ, ঔপনিবেশিক মনোভাব, কার্যব্যবস্থা বাঙালি জাতিকে করে তুলেছিল শোষণ, বৈষম্য ও জুলুমের পণ্য। চির স্বাধীনতাপ্রিয় মুক্তিকামী জাঁতি স্বভাবতই সকল অবিচার-অনাচার ও বৈষম্যকে রুখে দাঁড়ায়। আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার, সমতা এবং জাতীয় পর্যায়ে মঙ্গল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পরিচালিত স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকার আন্দোলন একপর্যায়ে রূপান্তরিক হয় স্বাধীনতা সংগ্রামে।
বাঙালির দীর্ঘদিনের ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়ে সৃষ্টি হয় দাবানলের। সেই দাবানলে পুড়ে মহান ডিসেম্বরে জ¦লেপুড়ে ছাড়খার হয়ে যায় ইয়াহিয়া, আইয়ুব খান, টিক্কা খানসহ মানুষরূপী নরঘাতক, হিং¯্র পশুর সমান পাকিস্তানী সেনারা। তাদের নির্যাতনের ষ্টিমরোলারে পিষ্ট হয়ে যারা আত্মবিসর্জন দিয়েছে, জাঁতি আজও সশ্রদ্ধচিত্তে তাঁদের স্মরণ করছে।
প্রতি বছর ডিসেম্বর ও মার্চ মাস এলেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত হয়। শত ব্যস্ততা ও জীবনযুদ্ধের মধ্যে আমরা ফিরে যাই ৭১-এর সেই সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও বেদনাময় দিনগুলোতে। বছর পরিক্রমায় বারবার ঘুরে ফিরে আসে সংগ্রামী দিবসগুলো। এমনি করে কেটে গেছে ৪৬ বছর। এই সময়টাতে বিশেষ করে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর, স্বাধীনতার মাস মার্চ ও মহান ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারীতে দেশের জন্য কিছু করার ইচ্ছে জাগে সবার। আসলে এই মাস তিনটিই দেশপ্রেমের মাস বাঙালির কাছে। যেমনি ফাল্গুন মাস প্রেমিক-প্রেমিকাদের কাছে ভালোবাসার মাস বলে খ্যাত। কিন্তু বছরের অন্যান্য মাসগুলো কি প্রেমিক-প্রেমিকাদের ভালোবাসায় কমতি থাকে? থাকে না। তবে আমাদের দেশপ্রেম এমন কেন?
আমরা যদি শুধু দেশপ্রেমের মৌসুমী মাসে দেশপ্রেমের লোকদেখানো বুলি না আউড়ে সত্যিকার অর্থে যে যে দলে রয়েছি, যে-যে পেশায় রয়েছি- যদি স্ব স্ব অবস্থানে থেকে দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করি তবে শহীদরে আত্মা প্রকৃত অর্থে শান্তি পাবে। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি হবে সুখী-সমৃদ্ধশালী এক স্বপ্লীল বাংলাদেশ। প্রাণ খুলে উচ্চারিত হবে সবার কন্ঠে-‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।
[মানিক লাল ঘোষঃ সাংবাদিক ও কলামিষ্ট]