ট্রেন যাত্রীদের গন্তব্যস্থলে নিরাপদে পৌঁছে দিতে রেললাইন সংস্কার করতে রেল কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। সম্প্রতি উপদেষ্টা এমন একটি আদেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন রেলভবনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা। তারা জানান,মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করছেন ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলী (ডিএন-১)এবং (ডিএন-২) এর সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ। ব্রিটিশ রেলওয়ে ( বিআর ) ১৯৬৫ সাল থেকে ব্রিটিশ রেল হিসাবে ব্যবসা করত, একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি যা ১৯৪৮ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত গ্রেট ব্রিটেনে বেশিরভাগ রেল পরিবহন পরিচালনা করত । মূলত ব্রিটিশ পরিবহন কমিশনের রেলওয়ে এক্সিকিউটিভের একটি ট্রেডিং ব্র্যান্ড , এটি হয়ে ওঠে ১৯৬৩ সালের জানুয়ারিতে স্বাধীন সংবিধিবদ্ধ কর্পোরেশন , যখন এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশ রেলওয়ে বোর্ড নামকরণ করা হয় । ব্রিটিশের নির্মাণ বর্তমানে জরাজীর্ণ রেললাইনের উপর দিয়ে আর্ন্তজাতী ও আন্ত:নগর এবং লোকাল পরিবহন মিলে একই লাইনের উপর দিয়ে প্রায় তিনশ ট্রেন চলাচল করছে। রেলের অতিরিক্ত পরিচালক অপারেশন সালাউদ্দিন বলেছেন,বিগত সময়ের চেয়ে এবছর অতিবৃষ্টি এবং ভারি বর্ষণের কারণে বিভিন্ন জেলায় বন্যার পানিতে রেললাইনের ক্ষতির পরিমান অনেক বেশি হয়েছে। ট্রেনের ইঞ্জিন চালক(এলম) জীবনের ঝুকি নিয়ে যাত্রীসেবা দিচ্ছেন। চালককে ট্রেনের গতিসীমা নিয়ন্ত্রণে রেখে গন্তব্যের উদ্দেশ্য ট্রেন চালাতে হয়। সারাদেশে ৪৪৮টি স্টেশন জুড়ে ৩ হাজার ২ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ এর আওতায় রয়েছে ৭৭টি রেলস্টেশন। এর মধ্যে বন্ধ আছে ১৩টি। ৭৭টি স্টেশন সীমানায় ট্র্যাক আছে ৩৫৬.১০কিলোমিটার এবং রুট রয়েছে ৪৯৯.৩৯ কিলোমিটার। ডিএন-২ এর অধিনে নরসিংদী,ভৈরববাজার,আঠারবাড়ি,আঁখাউড়া,সিলেট- ছাতক বাজার পর্যন্ত। এই সেকশনে স্টেশনের বিল্ডিং,প্লাটফর্ম লেভেল ক্রসিং,গেট,ব্রিজসহ অন্যান্য স্থাপনা মেরামত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ এর কর্মকর্তা। তিনি জানান,বিভিন্ন জায়গায় স্লিপারের খুলে যাওয়া নাটবল্টু পরিবর্তন এবং ঢিলে হয়ে যাওয়া নাটের স্ক্রুপ মেরামত করা হয়েছে। নিরাপদ ট্রেন চলাচলের স্বার্থে সংকট জনবল নিয়ে স্লীপার পরিবর্তন ওভার হোল্ডিং থ্রো প্যাকিং লুজ জয়েন্ট, স্যালো স্ক্রিনিং ও পি-ওয়ে ফিটিংসহ নানা কাজ।নির্বিঘ্নে ট্রেন চলাচলের জন্য সকল কার্যসম্পাদন করা হয়েছে। ডিএন-২ এর প্রকৌশলী এস, এম, মাহমুদুর রহমান বলেন রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনের চেয়ে লোকবল অনেক কম আছে। কর্মযজ্ঞের গতি ধরে রাখতে হলে জনবল বৃদ্ধি একান্তই প্রয়োজন।
ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলী(ডিএন-১) এর তথ্যমতে দেখা যায় তাঁর অধীনে এমজি স্টেশন রয়েছে ৭৩টি এবং বিজি স্টেশন আছে ১৫টি। তাঁর আওতায় মেইন লাইন,লুপলাইন এবং সাইডিং লাইনসহ ৭৭২.৫০ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পাশ হয়ে ময়মনসিংহ,দেওয়ানগঞ্জ,জামালপুর,তারাকান্দি স্টেশনসহ মোট ৭৩টি রেলস্টেশন আছে। যমুনা সেতুর উপরের স্লীপার এলসি গেইট স্টেশন বিল্ডিং প্লাটফর্ম,পানি ও গ্যাস লাইন নির্মাণ রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের কাজ ডিএন-১ এর আওতায়। নারায়ণগঞ্জ থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ৩৭টি লেভেলক্রসিং এবং গেন্ডারিয়া হতে মাওয়া পর্যন্ত ৭টি ক্রসিং মোট ৪৪টি লেভেলক্রসিং গেইট রয়েছে। পদ্মা সেতুর লিংকলাইন গেন্ডারিয়া থেক ভাঙ্গা এবং টঙ্গী-ভৈরব-জয়দেবপুর-তারাকান্দি-ভুয়াপুর লুপলাইনসহ মোট ১৬৫ কিলোমিটার ডাবল রেলপথ। লাইনের স্লীপার পরিবর্তন ওভার হোল্ডিং থ্রো প্যাকিং লুজ জয়েন্ট, স্যালো স্ক্রিনিং ও পি-ওয়ে ফিটিংসহ সংস্কার এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জনবল আছে ৯৬৬ জন। কিন্তু মঞ্জুরী রয়েছে ১৫৪২জন। শূন্য ৫৭৬ জনের বিপরীতে ৯৬৬ জন জনবল দিয়ে নির্বিঘ্নে ট্রেন চলাচলের জন্য সকল কার্যসম্পাদন করা হয়। ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ এর কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ জানান,নিরাপদ ট্রেন ভ্রমনে যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে ঢাকা স্টেশন ইয়ার্ডে স্লীপার পরিবর্তন ফিস প্লেট ও ফিস বোল্ট এবং পয়েন্টস ক্রসিং পরিবর্তনে কিছুটা নতুনত্ব আনা হয়েছে।
ট্রেনের সিউিউল বিপর্যয় প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে রেলওয়ের অতিরিক্ত পরিচালক অপারেশন সালাউদ্দিন বলেন,স্বাধীনতার পূর্বে স্থাপন করা একই রেললাইনে যাত্রীসেবা দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি হয়েছে কিন্তু ট্রেন চলাচলের জন্য নতুন কোন লাইন এখনও যুক্ত হয়নি। একটি লাইনের উপর দিয়েই যাতায়াত করছে প্রায় ৩০০ রেক। তিনি জানান,নির্ধারিত সময়ে ট্রেন পরিচালনা করতে হলে,ঢাকা-লাকসাম থেকে মালামাল পরিবহনের জন্য ফৌজদারহাট থেকে ডেডিকেটেড রেললাইন নির্মাণ করতে হবে। ঢাকা -চট্টগ্রাম এবং জয়দেবপুর হতে ঈশ্বরদী পর্যন্ত থ্রাড লাইন ডুয়েলগেজ ও ডাবল লাইন নির্মাণ করা প্রয়োজন। তিনি জানান বর্তমান সরকার অন্তত কাজের নকসা এবং রেললাইন স্থাপনের প্রাথমিক স্থান পরীক্ষা-নিরীক্ষা(ফিজিবিলিটি স্টাডি)'র কাজ শেষ করে গেলে পরবর্তী যে সরকার আসবে শুরুর অংশ থেকে বাকি কাজ করতে পারবে।