পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ১ কোটি ৫০ লাখ ৬৩ হাজার ৭৬২ টাকা বিদ্যুত বিল বকেয়া রয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে। যথাসময়ে বিল পরিশোধ না করায় এতে জরিমানা হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। বিল পরিশোধের জন্য ইতোমধ্যে কয়েক বার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবরে চিঠি দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেনি। সূত্রমতে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত জরিমানাসহ মোট বিল হয় ৪০ লাখ ৪৪ হাজার ৩০৮ টাকা। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বিল হয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ ১৯ হাজার ৪৫৪ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ বিল বাবদ বরাদ্দ হয় ৯০ লাখ টাকা এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বরাদ্দ হয় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। যার মাঝে ২০ শতাংশ সাশ্রয়ের চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সূত্রমতে, বকেয়া বিলের জরিমানা ও বকেয়া বিল পরিশোধ নিয়ে উপাচার্যের সাথে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সভা হয়েছে। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে পূর্বের বিল পরিশোধ না করে বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমান মাসের বিল নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে পরিশোধ করতে পারবে কিন্তু বিগত দিনের জারিমানা দিতে হবে। ববি’র একাধিক শিক্ষার্থীরা জানান, প্রায়ই দিনের বেলা হলের বা রাস্তার ল্যাম্পপোস্টে বাতি জ¦লতে দেখা যায়। এ ছাড়া প্রায়ই বিভিন্ন দপ্তরে লোকজন না থাকলেও ফ্যান চলতে থাকে। আবাসিক হলের খাবারের মান বাজে ও দাম বেশি হওয়ায় অনেকেই অবৈধভাবে রাইচ কুকার, কারি কুকার, হিটার ব্যবহার করে রান্না করেন। এসব কারণেও বিদ্যুৎ বিল বেশি ওঠে। ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, নিয়মানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ডরমিটরির বিদ্যুৎ বিল যিনি থাকবেন তার দেয়ার কথা। এজন্য প্রত্যেক ফ্লাটে আলাদা আলাদা মিটারও রয়েছে কিন্তু তারা বিদ্যুৎ বিল দিচ্ছেন না। হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের থেকে নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল নেয়া হলেও হলের বিল দেওয়া হচ্ছেনা। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর কম্পিউটার-ফটোকপির দোকান ‘ভার্সিটি কর্ণারে’ তিনটি ফটোকপির মেশিনসহ কম্পিউটার প্রিন্টার চালালেও নিয়মিত বিল দেওয়া হয়না। ভার্সিটি কর্ণারের পরিচালক মো. মিলন বলেন, আমি ছয় মাস পর পর বিল পরিশোধ করে দেই। এইবার আন্দোলনসহ বিভিন্ন ঝামেলার কারণে পরিশোধ করা হয়নি। বন্ধের সময় দোকান বন্ধ থাকে, তাই বিল বেশি ওঠে না। ডরমিটরি বরাদ্দ কমিটির সদস্য সচিব মুর্শিদ আবেদীন বলেন, আমরা শুধু আবেদনের ভিত্তিতে ডরমিটরি বরাদ্দ দেই। বিদ্যুৎ বিলের বিষয় দেখা স্টেট শাখার কাজ। বকেয়া বিলের বিষয়ে এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার মামুনুর রশিদ (ইলেকট্রনিকস, ইলেষ্ট্রনিক ও ইলেষ্ট্রিসিটি) বলেন, সরকার দুই বছর যাবৎ ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের চিঠি দিয়ে বিদ্যুৎখাতে বাজেট কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমাদের বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়নি। অন্যদিকে বাজেট না বাড়লেও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। তাই অর্থ বরাদ্দ না থাকায় বিল বকেয়া পরেছে। তিনি আরও বলেন, আইন অনুযায়ী স্বায়ত্তশাসিত বা সরকারি প্রতিষ্ঠান দুইবছর বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রাখলে জরিমানা দেয়া লাগবে না, তাই তারা (পল্লী বিদ্যুত) আমাদের থেকে জরিমানার টাকা পাবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব শাখার উপ-পরিচালক সুব্রত কুমার বাহাদুর বলেন, বিদ্যুৎখাতে অর্থ ছিল না, তাই বিল দিতে পারিনি। এখন টাকা আছে আমরা ফাইল পেলে বিল পরিশোধ করে দেব। সার্বিক বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড.শুচিতা শারমিনের সাথে সরাসরি ও মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে না পাওয়ায় এবং ফোন রিসিফ না করায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।