ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে সড়কের পাশে একাধিক হাট বাজার গড়ে উঠেছে। প্রায় ১১ বছর অগে ট্রেন দূর্ঘটনা ১১ জন বর যাত্রি নিহত হয়েছিল। এদিকে ১৮৬১ সালের রেল আইনের ১২ ধারা অনুযায়ী রেল লাইনের দুই পাশের ২০ ফুটের মধ্যে রেল সংশ্লিষ্ট নির্দিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া বাইরের কেউ প্রবেশ করতে পারবে না, এমনি গরু ছাগলের প্রবেশ ছিল নিষেধ। গরু ছাগল রেল লাইনে ঢুকে পড়লে তা নিলামে বিক্রয় করার বিধানও আছে। একই ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে, রেল লাইনের ২০ ফুটের ভিতর ২৪ ঘন্টা ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। এভাবে রেল দূর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির বিরুদ্ধে রেল র্র্কর্তৃপক্ষ মামলা করতে পারেন ও ১৮৯০ সালের রেলওয়ে আইনে রেল চলাচলের দিকনির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এমনকি রেলওয়ে অধ্যাদেশ (অবৈধ দখলমুক্ত) ১৯৭৯ অনুসারে রেলের জমি সঠিক ভাবে উদ্ধারও করা হচ্ছে না। উপরের আইনের মত ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার রেল লাইনের ইতিহাস এত দীর্ঘ না হলেও এ রেল লাইনে ট্রেন আসা-যাওয়া করছে প্রায় ৮৭ বছর। ১৯৩৬ সাল থেকে শুরু হওয়া বারোবাজার মাছ বাজারের উপর দিয়ে শত শত বার ট্রেন আসা-যাওয়া করলেও রেলের কোন আইন এ বাজারে আসেনি। এ বাজারে ট্রেন লাইনের উপরেই ঝুকি নিয়ে প্রতিদিন বসে মাছের বড় বাজার, খুচরা বাজার ও ুবিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এখান থেকে প্রতিদিন গাড়ি ভরে মাছ চলে যাচ্ছে দিনাজপুর, রংপুর,কুমিল্লা সিলেট, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। মাছ ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়িত চরম ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা করছেন এখানে। প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু হয় মাছ বেচা কেনা। বেলা বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে ট্রেন লাইনের উপরেই বসে যায় মাছ বাজার।
২০১৪ সালের ১ আগস্ট বারোবাজার রেলক্রসিংয়ে রাত ৩ টারদিকে বরযাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে ট্রেনের সংঘর্ষে ১১ জন নিহত হয়। তাদের মধ্যে একই পরিবারের তিনজন সদস্য ছিল। আহত হয়েছিল অন্তত ৪০ জন। আলাদা গাড়িতে থাকায় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পান বর তাপস বিশ্বাস ও কনে জোসনা বিশ্বাস।শৈলকুপা উপজেলার ফুলহরি গ্রারে স্কুল শিক্ষক তাপস বিশ্বাসের বিয়েতে তাঁরা ৮০ জনের মতো বরযাত্রী কালীগঞ্জ উপজেলার সাকো-মথনপুর গ্রামেযায়। ওই গ্রামের সুবল বিশ্বাসের মেয়ে জোসনা বিশ্বাসের সঙ্গে তাপসের বিয়ে হয় ট্রেনটি লাইনের ওপর দিয়ে বাসটিকে প্রায় ৫০০ গজ দূরে নিয়ে যায়। এ সময় যাত্রীদের আর্তনাদ শোনেন তাঁরা। বারোবাজার রেলক্রসিং অতিক্রম করার সময় সৈয়দপুর থেকে খুলনাগামী সীমান্ত এস্কপ্রেস ট্রেনটি বরযাত্রীবাহী বাসটিকে ধাক্কা দেয়। বাসটি রেললাইনের ওপর আড়াআড়ি পড়ে গেলে দূর ঠেলে নিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই নয়জন নিহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার সময় মারা যান আরও দুজন। অবশ্য পরে ট্রেনটি থেমে যায়। আহতদের উদ্ধার করে যশোর, ঝিনাইদহ, ফরিদপুর ও কালীগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের কারও কারও অবস্থা আশঙ্কাজনক।দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিরা ছিল সুধীর কুমার (৪০), বিপ্লব কুমার বিশ্বাস (২৫), সুবল কুমার (২২), সুজয় বিশ্বাস (৩০), সঞ্জয় বিশ্বাস (৩৪), উজ্জ্বল বিশ্বাস (৩০), সঞ্জিত বিশ্বাস (৩২), শোভন বিশ্বাস (২১), কৃষ্ণা বিশ্বাস (২৫), বর্ণা বিশ্বাস (৩৫) ও কৌশিক বিশ্বাস (৮)। শেষ তিনজন একই পরিবারের সদস্য। রেললাইনের ওপর বসছে মাছের বাজার। ব্যবসায়ীরা রেললাইনের দুই পাশে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করায় বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই এখানে রেললাইন আছে। দূর থেকে ট্রেনের কিছুই দেখা যায় না। এমনকি রাতে ট্রেনের হেডলাইটও চোখে পড়ে না। ফলে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। কালীগঞ্জে যশোর মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়কের পাশে ও উপরে অবৈধভাবে বাঁশের তৈরি পণ্যের হাট,ধানেরহাট,কাচা বাজারের হাট বসছে। কালীগঞ্জ মহাসড়কের ওপর নিমতলা ষ্টান্ডে অবৈধভাবে বাঁশের তৈরি পণ্যের হাট। কালীগঞ্জ ঝিনাইদহ মহাসড়কের ধার ঘেঁষে ৩০ থেকে ৩৫ বছর ধরে সপ্তাহে দুদিন হাট বসছে। যেমন কালীগঞ্জ নিমতলা, মাহাতাব উদ্দিন কলেজ মোড়ে, বিষয়খালি, তেতুলতলা, দোকান ঘর, আবার কালীগঞ্জ যশোর সড়কের বৈশাখি তেল পাম্প, চিনিকলের সামনে, দুলাল মুন্দিয়া,কেয়াবাগান, বারোবাজার এবং কালীগঞ্জ কোটচাদপুর সড়কের কাশিপুর রেলগেট,পাতবিলা, লাউতলা, তালেশ্বরসহ বিভিন্ন স্থানে হাটবাজার বসছে। অপরদিকে মহাসড়রে পাশে রয়েছে সরকারি মাহাতাব উদ্দিন ডিগ্রী কলেজ, বিষয়খালি কলেজ ও হাইস্কুল, বিষয়খালি দাখিল মাদ্রাসা, বেজপাড়া হাইস্কুল, তেতুলতলা হাইস্কুল, দুলালমুন্দিয়া হাইস্কুল, রোস্তম আলী হাইস্কুল, বারোবাজার কলেজ ও হাইস্কুল, মায়াময় বালিকা বিদ্যালয়, কেয়াবাগান কলেজ,খড়িখালি প্রাথমিক বিদ্যালয়। মহাসড়কের দু,পাশে রয়েছে একাধিক মসজিদ, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়ি। গতবছরের ৫ জুলাই বারোবাজার মাছ বাজারে ট্রেনে কাটা পড়ে আবদুল খালেক নামের এক ব্যাক্তি নিহত হয়েছিলেন,চলতি বছর ১৯ ফেব্রুয়ারি অঙ্গাত এক ব্যাক্তি ট্রেনে কেটে নিহত হয়।