জেলার বানারীপাড়া উপজেলার ভাঙন কবলিত সন্ধ্যা নদীর বালুমহল থেকে আদায়করা অর্থের ভাগ-বাটোয়ারার একটি তালিকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বানারীপাড়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব রিয়াজ মৃধা স্বাক্ষরিত ওই তালিকা অতিসম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে পুরো জেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বানারীপাড়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব রিয়াজ মৃধা বলেন, সন্ধ্যা নদী থেকে বালু উত্তোলন করতো মেসার্স ফাতেমা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। গত ৫ আগস্টের পর তারা বালু উত্তোলনের জন্য আর আসেনি। পরে ওই ঠিকাদারের সাথে বানারীপাড়া পৌর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান জুয়েল চুক্তি করেন। সেই অনুযায়ী বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হয়। লাভের টাকা ১৭ বছর বঞ্চিত ও নির্যাতিত বিএনপির নেতাকর্মীসহ অঙ্গসংগঠনে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে মোট একমাস ১৭ দিনের লাভের টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করা হয়েছে। বরিশাল নগরীর বটতলা এলাকার একটি হোটেলে বসে এ ভাগবাটোয়ারার তালিকা করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তালিকায় ওই বিএনপি নেতা দলের প্রভাবশালী কোন এক নেতাকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন-“নেতা আমি যে টাকা পাই, আমার এখানে যারা সবসময় থাকে তাদের অধিকাংশকে এক-দুই হাজার টাকা করে দিয়েছি, তাহলে দয়া করে বিবেচনা করে দেখুন আমি একা বালির টাকা খাইকিনা? তাহলে কেন আমার বিরুদ্ধে এত যড়যন্ত্র। হ্যাঁ আমার দোষ দলীয় লোকজন যে কাজে আসে সে কাজগুলো করার চেষ্টা করি এবং আপনার নির্দেশ পালন করি। আল্লাহ হাফেজ ভালো থাকবেন সুস্থ্য থাকবেন”। নিচে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব রিয়াজ মৃধার স্বাক্ষর, নাম ও দলীয় পদবী রয়েছে। তারিখ ১৫ অক্টোবর ২০২৪ইং। তালিকায় মোট দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা ভাগ বাটোয়ারার হিসেব দিয়েছেন। তবে তিনি (রিয়াজ মৃধা), পৌর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান, উপজেলা যুবদলের সভাপতি সুমন হাওলাদার ও চাখারের যুবদল নেতা সনেট তালুকদার কত করে নিয়েছেন সেটা উল্লেখ করেননি।
এ বিষয়ে রিয়াজ মৃধা বলেন, নেতাকর্মীদের ভাগ করে দেওয়ার পরে লাভের টাকা যা ছিল বালুমহল নিয়ন্ত্রণ করায় তারা চারজন তা ভাগ করে নিয়েছেন। তালিকায় প্রথম নাম রয়েছে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. শাহ আলম মিঞা। তার জন্য বরাদ্দ ৫০ হাজার টাকা, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক নান্না হাওলাদারকে দিয়েছেন ১০ হাজার টাকা, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুস সালামকে ২৫ হাজার, বিএনপি নেতা রুহুল মল্লিককে ১০ হাজার, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীরকে ৫ হাজার, চাখার ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলমগীর মেম্বারকে ৫ হাজার, চাখারের বিএনপি নেতা সেলিম বালীকে ১০ হাজার, কুদ্দুস ফকিরকে ৫ হাজার, সৈয়দকাঠি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হানিফ হাওলাদারকে ৫ হাজার, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খানকে ৫ হাজার, সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মদ মীরাকে ৫ হাজার, ১ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আলমগীর হোসেনকে ৫ হাজার, থানা যুবদল ১০ হাজার, পৌর যুবদল ১০ হাজার, থানা ও পৌর ছাত্রদল ১০ হাজার টাকা করে, থানা স্বেচ্ছাসেবক দল ১০ হাজার, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দল ১০ হাজার, থানা ও পৌর শ্রমিক দলকে ৫ হাজার করে, থানা কৃষক দলকে ৫ হাজার, থানা মৎস্যজীবী দলকে ৫ হাজার ও সাংবাদিক ২০ হাজার টাকা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সন্ধ্যা নদী থেকে বালু উত্তোলনের ইজারা পাওয়া প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদার আগৈলঝাড়া উপজেলার সেরাল গ্রামের এসএম মনির হোসেন গত ৫ আগস্টের পর আর আসেনি। এরপর থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়টি বিএনপির নেতারা নিয়ন্ত্রন করে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকা সেখান থেকে নিচ্ছে। ছড়িয়ে পড়া তালিকা প্রতিদিনের হিসেব। সন্ধ্যা নদীর বালুমহাল ইজারাদার এসএম মনির হোসেনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ডা. অন্তরা হালদার জানান, বালু তুলতে না পারার বিষয়ে বালুমহল ইজারাদার কোন অভিযোগ করেননি। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।