সোনারগাঁও পৌরসভার উদ্ধবগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত সোনারগাঁ মডার্ন ডায়াগনষ্টিক হাসপাতাল নামে একটি ক্লিনিক থেকে একজন নবজাতক শিশুকে চুরি করে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। চুরি হওয়া নবজাতক শিশুরটির মা আকলিমা বেগম ওরফে রাজিয়া বাদী হয়ে রোববার সোনারগাঁ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় পুলিশ সালমা বেগম নামের এক নারীকে আটক করেছে। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী উপজেলার হাড়িয়া এলাকা থেকে নবজাতকের লাশ উদ্ধার করা হয়। নবজাতক শিশুরটির মা আকলিমা বেগম জানান, রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ থানার দৌলদিয়া পতিতালয়ের পূর্বপাড়া এলাকায় থাকার সুবাদে লক্ষী (২৬) নামের এক যৌনকর্মীর সাথে তার পরিচয় হয়। এ সময় রাজিয়া অন্তঃসত্বা হলে তার স্বামী মিজানের সাথে সন্তানের ভরন পোষনের খরচ না দেয়ায় তাদের মধ্যে পারিবারিক বিরোধ সৃষ্টি হয়। এনিয়ে বিষয়টি আদালতে মামলা পর্যন্ত গড়ায়। রাজিয়ার সন্তান প্রসবের সময় হওয়ার পূর্বেই পতিতালয়ের যৌনকর্মী লক্ষী ও তার ৫/৬ জন সহযোগী তাকে ভালো হাসপাতালে ভর্তি করানোর কথা বলে গত ৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় তাকে রাজবাড়ি থেকে ঢাকায় নিয়ে আসে। পরে তাকে তিনজন লোকের মাধ্যমে হাতবদল করে অজ্ঞাত লোকদের কাছে রেখে যৌনকর্মী লক্ষী আত্মগোপনে চলে যায়। ওই অজ্ঞাত ব্যাক্তিরা গত ৪ অক্টোবর দুপুরে রাজিয়াকে দালাল নাজমার মাধ্যমে সোনারগাঁয়ের উদ্ধবগঞ্জস্থ মডার্ন ডায়াগনষ্টিক হাসপাতালে ভর্তি করে। গত ১৪ অক্টোবর হাসপাতাল কতৃপক্ষ জোরপূর্বক তাকে সিজার করলে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। এদিকে সিজারের পর রাজিয়ার জ্ঞান ফিরলে তিনি তার নবজাতক শিশুকে দেখতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে জানায় শিশুটিকে এনআইসিইউতে রাখা হয়েছে। অথচ ওই হাসপাতালে এ ধরণের আধুনিক কোনো সেবা নেই। এদিকে চারদিন অতিবাহিত হওয়ার পর গত ১৮ অক্টোবর নবজাতক শিশু চুরি যাওয়ার বিষয়টি নবজাতকের মা রাজিয়া নিশ্চিত হন। একপর্যায়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাচ্চা বিক্রি করে দিয়ার কিছু টাকা রাজিয়ার হাতে ধরিয়ে দেয় বলে তিনি জানায়। এ সময় তিনি টাকা নিতে না চাইলে হাসপাতাল কতৃপক্ষ ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে তাকে মিথ্যা মামলা দেয়ার ভয় দেখায় এবং প্রাননাশের হুমকি দিয়ে তাকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়। বর্তমানে ওই নারী সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ব্যাপারে সোনারগাঁ মডার্ন ডায়াগনষ্টিক হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল ইসলাম অভিযোগের সত্যতা অস্বীকার করে বলেন, নবজাতক শিশু চুরি হওয়ায় বিষয়টি জানতে পেরে আমরা খোঁজ নেই। পরে জানতে পারি সালমা নামের এক নারী ওই নবজাতককে দত্তক নিয়েছে এবং দত্তক নেয়ার দলিলাদির ফটোকপি তার কাছে রয়েছে বলে তিনি দাবী করেন। তবে নবজাতককে দত্তক নেয়ার দলিলপত্র দেখতে চাইলে তিনি দুরে অবস্থান করছেন বলে তারা জানান। সোনারগাঁ থানার এসআই (উপণ্ডপরিদর্শক) ওলিয়ার রহমান জানান, সালমা আক্তার নামের একজনকে আটক করা হয়েছে। পরে তার স্বীকারোক্তিতে উপজেলার হাড়িয়া এলাকার মনারবাগ গ্রামের একটি ঝোপ থেকে নবজাতকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।