বরগুনার আমতলী উপজেলার গাজীপুর খালের ওপর সোয়া ৪ কোটি টাকার সেতুর কাজে সময়সীমা ছিল ১৯ মাস। কিন্তু পাঁচ বছরে ও তা শেষ হয়নি। এদিকে অর্ধেকের বেশি টাকা তুলে নিয়ে ঠিকাদার লাপাত্তা। কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হলেও আজ ১৫ অক্টোবর ২০২৪ পর্যন্ত জবাব মেলেনি তার। অসমাপ্ত অবস্থায় সেতুর কাজ বছরের পর বছর পড়ে থাকায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছে এলাকাবাসী।
আঠারগাছিয়া ইউনিয়নের গাজীপুর খালের ওপর ২০১৯ সালে ৪ কোটি ২৩ লাখ ৭৯ হাজার ৩৬৮ টাকা ব্যয়ে ৪৮ মিটার গার্ডার সেতু নির্মাণে দরপত্র আহবান করে এলজিইডি। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজ পায় পটুয়াখালীর মেসার্স আবুল কালাম আজাদ। প্রতিষ্ঠানটির মালিক আবুল কালাম আজাদ কাজটি বিক্রি করে দেন পটুয়াখালীর আরেক ঠিকাদার তানভির আহম্মেদ দিপুর কাছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু হয়। সময় বেঁধে দেয়া হয় ২০২০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এরপর পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি সেতুর কাজ। দু'দফা সময় বাড়িয়ে গত জুন মাসে কাজ শেষ করার কথা। কাজটি ফেলে রেখে যায় ঠিকাদার।
অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদার দুই পাড়ের অ্যাপার্টমেন্টাল, দুটি পিলার ও একটি ক্লাবের কাজ করে বরাদ্দের ২ কোটি ৮৯ লাখ ৮৭ হাজার ১৮ টাকা তুলে নেন। এরপর থেকে লাপাত্তা তিনি। বরগুনা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়
গত ১৫ সেপ্টেম্বর তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশে সাত দিনের মধ্যে কাজ শুরু না করলে কার্যাদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে জানানো হয়। চিঠির বিষয়ে ঠিকাদার কোন সাড়া দেননি।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, গাজীপুর খালের পূর্ব পাশে উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম সোনাখালী গ্রাম। পশ্চিম পাড়ে গাজীপুর গ্রাম। পশ্চিম পাড়ে গাজীপুর সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা। প্রতিদিং ফেলুইশ শিক্ষার্থী গাজীপুর বন্দর ঘুরে মাদ্রাসায় আসে। আগে একটি লোহার সেতু ছিল। নতুন সেতু নির্মাণের সময় সেটি ভেঙে ফেলা হয়। ফলে বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থীদের আড়াই থেকে ৩ কিলোমিটার পথ ঘুরে আসতে হয়।
কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, সেতুর কাজ শুরু করেই ফেলে রাখা হয়েছে। অনেক পথ ঘুরে আমাদের মাদ্রাসায় আসতে হয়। এতে সময় ও অর্থের অপচয় হয়। কষ্টের কারণে তারা নিয়মিত মাদ্রাসায় আসতে পারে না। এতে লেখাপড়ায় ক্ষতি হচ্ছে।
গাজীপুর সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা শহিদুল ইসলাম বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে এই সেতুর কাজ ফেলে রেখেছেন ঠিকাদার। আগের সেতুটিও ভেঙে ফেলা হয়েছে। দুর্ভোগের কারণে অনেক শিক্ষার্থী নিয়মিত মাদ্রাসায় আসে না। তিনি দ্রুত সেতুর কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে সাব-ঠিকাদার তানভির আহম্মেদ দীপু বলেন, বিষয়টি নিয়ে বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা হয়েছে। ২-৩ মাসের মধ্যে কাজটি শেষ করে দেওয়া হবে। কাজে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, নিয়ম মেনেই কাজ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে মূল ঠিকাদার আবুল কালাম আজাদ বলেন, কাজটি চুক্তি করে অন্য এক ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। তি
নি কেন কাজটি শেষ করেননি, তা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান খান বলেন,ঠিকাদারকে কাজ শুরু করতে বলেছি।এক সপ্তাহ সময় নিয়েছে। ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল প্রক্রিয়াধীন। বিল তুলে নেওয়া বিষয়ে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী টাকা দেওয়া হয়েছে। কাজের চেয়ে বেশি টাকা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কার্যাদেশ কেন বাতিল করা হয়নি এ প্রসংগে তিনি বলেন কার্যাদেশ বাতিল করলে বেশি টাকা ব্যয় হবে।