ঢাকের বাদ্যি, শঙ্খনিনাদ, উলুধ্বনি আর সুরের মুর্ছনায় সমবেত প্রতিমা বিসর্জন দর্শনার্থীদের মন কেড়েছে। মন্ডপ থেকে নিয়ে প্রতিমা গুলোকে বিসর্জনের ঘাটে সারিবদ্ধ ভাবে সাজিয়ে বিসর্জন পূর্ব শেষ বারের মত আরতির মাধ্যমে এক ভিন্ন আবহ সৃষ্টি করে সমবেত বিসর্জন দেয়ার সংস্কৃতি দীর্ঘদিনের। রোববার সন্ধ্যা রাতে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী সরকারি কলেজ মাঠ সংলগ্ন লেকে সমবেত বিসর্জনের মধ্যদিয়ে পাঁচদিন ব্যাপী দুর্গাপুজার সমাপ্তি ঘটেছে।
বরাবরের মত এবারও বিসর্জন পূর্ব এক মূল্যায়ন সভা অনুষ্ঠিত হয়। সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও পৌর প্রশাসক তামারা তাসবিহার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াহিদুজ্জামান, বিশেষ অতিথি ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হোসেপুর সার্কেল) সুজন চন্দ্র সরকার, কটিয়াদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল মামুন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন খান দিলীপ, সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান কাঞ্চন, উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক বিপ্লব কুমার সাহা, সদস্য সচিব ধ্রুব রঞ্জন দাস, পৌর পুজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক জনি সাহা প্রমুখ।
প্রতি বছর শরতের শেষ দিকে দুর্গাপুজা অনুষ্ঠিত হয়। যা সনাতন ধর্মাবলম্বিদের সবচেয়ে বড় উৎসব। বুধবার ষষ্ঠী তিথি কল্পারম্ভ ও ষষ্ঠীবিহিত পুজার মধ্যদিয়ে দেবী আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের শুভ সুচনা হয়। পুজা চলাকালে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের পদভারে মুখরিত থাকে মন্ডপগুলো। রোববার সন্ধ্যা রাতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পাঁচদিনের উৎসব শেষ হয়। কিন্তু দেশের অন্যান্য স্থান থেকে কটিয়াদী পৌর এলাকার বিসর্জন কার্যাদি একটু ব্যাতিক্রম। বিসর্জনের নির্দিষ্ট স্থানে প্রতিমাগুলোকে সারিবদ্ধ ভাবে সাজিয়ে একটি মূল্যায়ন সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিসর্জনের পূর্বে সমবেত ঢাকের বাদ্যি, শঙ্খনিনাদ, উলুধ্বনি আর সুরের মুর্ছনায় পুজারিদের অশ্রুসিক্ত নয়নে বিসর্জন দেয়া হয়। এ সময় বিসর্জন ঘাটে এক অন্যরকম আবহের সৃষ্টি হয়। মূল্যায়ন সভায় উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, পৌর কর্তৃপক্ষ, দলীয় নেতৃবৃন্দ, পুজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। ১৫-২০বছর পূর্বে আড়িয়াল খাঁ নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হতো। নদীতে প্রবেশ পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে কটিয়াদী সরকারি কলেজের লেকে বিসর্জন দেয়া হয়। এ বছর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ২০টি এবং পৌর এলাকায় ১৪টি মন্ডপে দুর্গাপুজার আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে পৌর এলাকার ১০টি প্রতিমা সমবেত বিসর্জন দেয়া হয়েছে। সময় বেধেঁ দেয়ায় এবং রাস্তা খারাপ থাকায় ৪টি প্রতিমা মন্ডপের নিকটবর্তী পুকুরে দেয়া হয়েছে। অন্যান্য বছর সমবেত বিসর্জন গভীর রাতে দেয়া হতো। সময় বেঁধে দেয়ায় এ বছর সন্ধ্যা রাতেই বিসর্জন দেয়া হয়েছে। আনসার, পুলিশ, সেনাবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তায় এবং উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সার্বিক দেখভালের মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে সনাতন ধর্মাবলম্বিদের শারদীয় দুর্গোৎসব সমাপ্ত হয়েছে।
পুজা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব ধ্রুব রঞ্জন দাস বলেন, কটিয়াদী সারদীয় দুর্গোৎসবের দুটি ঐতিহ্য রয়েছে। একটি হলো শত বছরের ঢাকের হাট। অন্যটি হলো সমবেত বিসর্জন। দুটি ঐহিত্যই দুর্গোৎসবকে একটি ভিন্ন মাত্রা দিয়ে আসছে। আগামীতেও যেন জাঁকজমক পূর্ণভাবে সমবেত বিসর্জন আরো সুন্দর ও সুশৃঙ্খল ভাবে দিতে পারি এ প্রত্যাশা রাখছি।