বিগত কয়েক দিনের একাধারে টানা বৃষ্টি পর ভ্যাপসা গরমের কারণে কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম এলাকায় মাঠে কৃষকের ধান ক্ষেত্রে খোল পঁচা রোগ দেখা দিয়েছে। অপরদিকে ২ সপ্তায় ১১০ হেক্টর জমির ধান সম্পুর্ন নষ্ট হয়ে গেছে। আবা মাঠের পর মাঠ পচন রোগে আক্রান্ত হয়ে ধান গাছের পাতা মরে যাচ্ছে। অনেক কৃষকের গোটা জমিতে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। বিআর-৫১ জাতের ধান ক্ষেতে এই রোগ বেশি দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। কৃষকরা বলছেন, এই রোগের কারণে তাদের ক্ষেত্রের ধানগাছ ক্রমেই শুকিয়ে আসছে। আগামীতে রোগাক্রান্ত ধান গাছে শীষ বের হবে না, ক্রমান্বয় শুকিয়ে মরে যাবে। যে কারণে এবার ধানের উৎপাদন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিবে বলে কৃষকরা এমনটা আশা করছেন। এখনই এই রোগ প্রতিরোধ করা না গেলে তারা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হবেন কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা। এদিকে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ছত্রাকনাশক স্প্র্রে করলে এই রোগ অনেকটা প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে কৃষকদের এভাবে পরামর্শ দিচ্ছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলার চাপালী গ্রামের কৃষক রাকিব খন্দকার বলেন, ৭ বিঘা জমিতে ৫১ জাতের ধান চাষ করেছেন প্রায় সব জমিতেই এই রোগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বৃষ্টির পর অল্প সময়ের মধ্যে গোটা জমিতে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রধমে গাছের নিচের অংশ থেকে পঁচন দেখা দিচ্ছে,পরে আস্তে আস্তে উপরের দিকে চলে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সার-ঔষধ, জমি তৈরীতে চাষ, ধানের জমির আগাছা পরিষ্কার, কাটা-পরিষ্কার সহ লেবার খরচ সহ এক বিঘায় তার ২২ হাজার থেকে ২৩ হাজার খরচ হয়েছে। এই এক বিঘায় তিনি ১৮ থেকে ২০ মণ ধান পাবেন, যা বিক্রি করে ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা পাবেন এমন টা আশা করেছিলেন। এখন যে অবস্থা তাতে ফলন অনেক কমে যাবে। এতে তিনি আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন বলে জানান। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ছত্রাকনাশক ওষুধ দিয়েছেন, কিন্তু তাতে কোনো কাজে আসছে না।
বিষয়খালীর কৃষক ফজলুর রহমান জানান, বিআর- ৫১ জাতের ধান ৩ বিঘা চাষ করেছেন। গোটা জমিতে এই পঁচন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ধান ক্ষেতের জমিতে গেলে মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এবার জমিতে ধান গাছ খুব ভালো হয়েছিল। এখন থোড় (শীষ) বের হওয়ার সময়। সেই সময় বৃষ্টির কারণে এই পঁচন রোগ দেখা দিয়েছে। যা মাঠের পর মাঠ ছড়িয়ে পড়ছে। কৃষক আক্তার হোসেন জানান, দ্রুত এই পঁচন রোগ ঠেকাতে না পারলে কৃষক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। অনেক কৃষক ধারদেনা ও বিভিন্ন এনজিু থেকে লোন তুলে ধান চাষ করেছেন, তারা কিভাবে তাদের ঋণ পরিশোধ করবেন দোকান থেকে সার-ঔষধ বাকিতে নিয়ে দুই বিঘায় চাষ করেছেন তার জমির ধানও পঁচন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ভালো ফলন না পেলে কিভাবে দোকান বাকি পরিশোধ করবেন তা নিয়ে চিন্তিত এই কৃষক।
কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান, বৃষ্টির পর এই রোগ দেখা দিয়েছে। তবে সেটা ব্যাপক নয়। তারা কৃষকদের আক্রান্ত জমিতে ছত্রাকনাশক ওষুধ স্প্রে করতে পরামর্শ দিচ্ছেন। এতে পঁচন অনেকটা ঠেকানো সম্ভব বলে জানান।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের বিভাগের উপণ্ডপরিচালক ষষ্ঠি চন্দ্র রায় জানান, কৃষকের ধান ক্ষেতে খোলপঁচা রোগ তেমন একটা এখনও দেখা দিয়েছে বলে তাদের কাছে তথ্য নেই। তবে বৃষ্টির পর খরা হলে এই রোগ দেখা দিয়ে থাকে। তিনি কোন এলাকায় এই রোগ দেখা দিয়েছে তার বিষয়ে তথ্য নিয়ে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান। তিনি বলেন, এই রোগে আক্রান্ত ক্ষেতে ছত্রাকনাশক স্প্র্রে করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
এ বছর ঝিনাইদহ ৬ উপজেলায় উপসী জাতের ধান চাষ হয়েছে ৯৬ হাজার ৩০৮ হেক্টর, আর হাইব্রিড ধান চাষ হয়েছে ৮ হাজার ১৮০ হেক্টর। মোট ১ লাখ ৪ হাজার ৪৮৮ হেক্টরে জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এ থেকে ৫ লাখ ৬৮ হাজার ৪০৯ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হবার কথা। কৃষি বিভাগ এই লক্ষ্যমাত্রায় গত ২ সপ্তায় বৃষ্টিতে ১১০ হেক্টর জমির ধান সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে প্রায় ৬ শত মেট্রিক টন ধান কম উৎপাদন হবে। এই রোগে আক্রান্ত ধান গাছের নিচের অংশ খয়েরি রং ধারণ করছে, যা আস্তে আস্তে গোটা গাছে ছড়িয়ে পড়ছে। একপর্যায়ে ধান গাছের পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে।