বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রনালয়ের আওতায় বিএডিসি পটুয়াখালী সদর উপজেলা বদরপুর ইউনিয়নের খলিসাখালী উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন ফসলের বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও সরবরাহ বৃদ্ধি করা,সেচ প্রযুক্তি উন্নয়ন, ভূ-পরিস্থ পানির সর্বউত্তম ব্যবহার,জলাবদ্ধতা দূরিকরনের মাধ্যমে সেচ দক্ষতা এবং কৃষক পর্যায় মান সম্পন্ন সরবরাহ করে থাকে।
বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রনালয়ে থেকে প্রতি বছর দিন মজুর লেবারদের জন্য একটি মোটা অংকের টাকা বরাদ্দ দিয়ে থাকে।
পটুয়াখালী খলিসাখালী কৃষি উন্নয়ন কর্পেরশনের দুই কর্মকর্তা উপণ্ড পরিচালক সারমিন জাহান ও উপণ্ডসহকারী বিশ্বজিৎ এর বিরুদ্ধে লেবার ফান্ডের কোটি টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পটুয়াখালীর খলিসাখালী কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন বিএডিসির উপণ্ডসহকারী বিশ্বজিৎ প্রতিদিন ৫ জন শ্রমিক দিয়ে কাজ করিয়ে ২০ জন শ্রমিকের টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে। ৫ জন শ্রমিকের মধ্যে কেউ কেউ কাজ করছে ২০-২৫ বছর পর্যন্ত। এই পাঁচ জনকে মাসে বেতন দিচ্ছে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। বাকি ১০ জন লোক নাম মাত্র তারা কোন দিন খলিসাখালী কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনে কাজে আসেননি। কিন্তু এদের প্রত্যেকের নামে ব্যাংক একাউন্ট খুলে চেক বিশ্বজিৎ নিজের হাতে রেখে দিয়েছে এবং সেই চেক দিয়ে বিশ্বজিৎ পুরান বাজার সোনালী ব্যাংক থেকে প্রতিমাসে টাকা উত্তোলন করেন।
ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্বজিৎ বিভিন্ন নামে চেক জমা দিয়ে কোন মাসে ২ লক্ষ টাকা আবার কোন মাসে ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা উত্তোলন করছেন। এভাবে প্রায় ২ কোটি টাকা উত্তোলন করে হাতিয়ে নিচ্ছে উপসহকারী বিশ্বজিৎ। তদন্তে উঠে এসেছে এ ভাবেই ২০-২৫ বছর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে যিনি ওই চেয়ারে এসেছেন তিনিই খেয়ে ফেলছেন এই লেবার ফান্ডের কোটি কোটি টাকা।
দিন মজুর আনসার বলেন, আমি ২০০৭ সাল থেকে এখানে কাজ করি।বিশ্বজিৎ প্রতি মাসে আমার কাছ থেকে খালি চেক নিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে আমার হাতে ৭ হাজার টাকা দেয়। অথচ আমার মোবাইলে সাড়ে ১৩ হাজার টাকার ম্যাসেজ আসে। কিছু বলতে গেলে কাজে আসতে নিষেধ করে দেন। সুষ্ঠু তদন্ত করে এটা সমাধান চাচ্ছেন এই দিন মজুর।
আরেক দিন মজুর আলমগীর মৃধা বলেন, আমি কোন দিনই বিএডিসিতে কাজ করিনি। আমাকে লেবার বানিয়ে সোনালী ব্যাংকে একাউন্ট করে বিশ্বজিৎ চেক নিয়ে যান এবং সেই চেক দিয়ে প্রতিমাসে বিশ্বজিৎ টাকা তুলে। আমাকে মাঝে মধ্যে কিছু টাকা দেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রেজাউল করিম বলেন, হাজিরা খাতায় ১৫ জন লেবার। কিন্তু মাঠে কাজ করে ৫ জন। ২০ বছর যাবত এভাবেই চলছে। সরকার লেবারকে টাকা দিচ্ছে, সেই টাকা বিশ্বজিৎ কৌশলে আাত্মসাত করে নিচ্ছে। ইউপি সদস্য আরো বলেন, বিশ্বজিৎ এখানে চাকুরীরত অবস্থায় অফিসের কাছে টোল ঘরের পাসে ৫০ লাখ টাকার জমি কিনেছে। এ টাকার উৎস নিয়ে তদন্ত হওয়া বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা।
উপসহকারী বিশ্বজিৎর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৫ জন লেবার দিয়ে কাজ করিয়ে ১৫ জন লেবারের টাকা দিয়ে অফিস পরিচালনা করতে হয়। সরকার জুলাই মাস থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অফিস খরচের একটি টাকাও বরাদ্দ দেয়না।আপনেরা বলেন অফিস কিভাবে চলে। এই বছর ৫৭ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা আয়ের টার্গেট দিয়েছে সরকার। সেই টার্গেট লেবার ফান্ডের টাকা দিয়ে পুরন করতে হয়। এখানে যা কিছু হয় অফিস প্রধানের নির্দেশ মোতাবেক হয়, আপনারা তার সাথে কথা বলেন।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন পটুয়াখালীর উপণ্ড পরিচালক সারমিন জাহান বলেন, এখানে মাসিক বিক্রয় আছে ২০ হাজার টাকা। কিন্তু বাৎসরিক টার্গেট দেওয়া আছে ৫৭ লাখ টাকা। তাই লেবার ফান্ডের টাকা আমরা এভাবে ক্যাশ করে সরকারের ফান্ডে জমা দেই। এভাবে নিয়ম আছে কিনা জানতে চাইলে এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে বলেন, আমি আপনাদের তথ্য দিতে রাজি না। অনিয়ম দুর্নীতির দায় স্বীকার করে বলেন, অভিযোগ থাকলে কর্তৃপক্ষের কাছে বলেন। আমার কোন সমস্যা নেই। আমি জবাব কর্তৃপক্ষের কাছে দিবো।
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন বলেন, পটুয়াখালী বিএডিসি উপণ্ডপরিচালকের কার্যালয়ের অনিয়ম নিয়ে আমরা যে অভিযোগ পেয়েছি তা তদন্ত করা হবে এবং তদন্ত অনুযায়ী আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিএডিসি বিভাগীয় কর্মকর্তাকে অবহিত করা হবে।