বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের জাহাজ 'এমটি বাংলার জ্যোতি' ও 'এমটি বাংলার সৌরভ' এর আগুন নিয়ন্ত্রণে এবং জাহাজের ক্রুদের উদ্ধারসহ জরুরী চিকিৎসা সহায়তায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী।
চট্টগ্রামের বন্দরের বহিঃনঙ্গরে শুক্রবার (৪ অক্টোবর-২০২৪) দিবাগত রাতে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএমসি) মালিকানাধীন 'এমটি বাংলার সৌরভ' নামে আরো একটি তেলবাহী জাহাজ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রায় ৪ ঘন্টার চেষ্টায় নৌবাহিনীর ৩টি বিশেষায়িত টাগশীপ, কোস্টগার্ড ও বন্দর কর্তৃপক্ষের ৪টি টাগশীপ মিলে অত্যন্ত দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সাথে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ সময় জাহাজটিতে থাকা ৪৮ নাবিকের মধ্যে ৪৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও ১ জন মৃত্যুবরণ করেন। এর মধ্যে আহত কয়েকজনকে নৌবাহিনী হাসপাতাল বানৌজা পতেঙ্গায় চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
এর ঠিক ৫দিন আগে বন্দরের ৭ নম্বর ডলফিন জেটিতে প্রথমে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএমসি) মালিকানাধীন আর একটি জাহাজ 'এমটি বাংলার জ্যোতি'। এ ঘটনায় ৩ জন মৃত্যুবরণ করেন।
অগ্নিকান্ডের সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে ছুটে যায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একাধিক বিশেষ অগ্নিনির্বাপন ক্ষমতা সম্পন্ন টাগশীপ। সাথে যুক্ত হয় কোস্টগার্ড ও চট্টগ্রাম বন্দরের একাধিক টাগশীপসহ ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি দল নৌবাহিনী প্রধানের নির্দেশনায় কমান্ডার চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলসহ চট্টগ্রামের নৌবাহিনীর কর্মকর্তাগণ সাথে সাথে ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং আগুন নিয়ন্ত্রণের দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। বাংলাদেশ নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস, চট্টগ্রাম বন্দর, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পাশাপাশি অন্যান্য নাবিকদের জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বড় রকমের ক্ষতি ও প্রাণহানি থেকে রক্ষা পেয়েছে দেশ। ডলফিন জেটিতে অবস্থানরত 'এমটি বাংলার জ্যোতি' জাহাজটির আগুন নিয়ন্ত্রণ ও বড় ধরণের বিস্ফোরণ প্রতিরোধ করা না গেলে হুমকির মুখে পড়তে হতো ঘটনাস্থলের কাছাকাছি থাকা রাষ্ট্রীয় তেল বিপণনকারি সংস্থা পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও তেল পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারী, চট্টগ্রাম শাহ্ আমানত বিমান বন্দর। স্থবির হয়ে পড়ত দেশের প্রধান বানিজ্যিক বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম।
আগুন লাগার আগে বাংলার জ্যোতি জাহাজে ১১ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন এবং বাংলার সৌরভ জাহাজে ১১ হাজার মেট্রিক টন ক্রুড ওয়েল ছিলো। জাহাজগুলোতে থাকা বিপুল পরিমাণ এই তেল পানিতে ছড়িয়ে পড়লে হুমকির মুখে পড়তে হতো কর্ণফুলী নদীসহ বঙ্গোপসাগরের জীব বৈচিত্র্য।
এছাড়া বিশাল আকারের এই জাহাজ দুটি বিস্ফোরণে ডুবে গেলে বন্ধ হয়ে যেত চট্টগ্রাম বন্দরের জাহাজ আসা যাওয়া, স্থবির হয়ে পড়ত দেশের আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম। নৌবাহিনীর সফলতার সাথে অগ্নিনির্বাপণ এর কারণে অর্থনীতির বিরূপ প্রভাব সৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেল দেশ। মূলতঃ এটি সম্ভব হয়েছে মেরিটাইম সেন্টারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের বাংলাদেশ নৌবাহিনীর দক্ষ কর্মকর্তাদের পদায়নের ফলে তাদের দক্ষ নেতৃত্বে সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলেই বড় ধরণের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেল দেশ এবং বেঁচে গেল হাজারো মানুষের প্রাণ।
বাংলাদেশ নৌবাহিনী দেশের যেকোনো বিপর্যয় মোকাবেলায় আস্থা ও সফলতার সাথে তারা দায়িত্ব পালন করে আসছে। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এ ধরনের কার্যক্রম চলমান থাকবে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালকের পক্ষে উপপরিচালক সাইদা তাপসী রাবেয়া লোপা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।