ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে জহুরা খাতুনের স্বামী মারা যাবার পর জায়গা হয়নি শ্বশুর বাড়িতে। স্বামীর মৃত্যুর পর থাকতেন মানুষের ঘরের বারান্দায়,ভিক্ষা করে জীবিকা চালাতেন। বর্তমানে তাঁর জায়গা হয়েছে একটি ঝুপড়ি ঘরে। ঝুপড়িটির অবস্থান ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভার সলেমানপুর এলাকায় সড়কের পাশে। সরকারের সুযোগ-সুবিধা কখনই জোটেনি তাঁর ভাগ্যে। জহুরা খাতুনের পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয় কালীগঞ্জে। ওই সংসারে একটি মেয়ে সন্তান ছিল। ৩১ বছর আগে তাঁর স্বামী খালেক হোসেন মারা যান। স্বামীর সহায়-সম্বল না থাকায় আশ্রয় নেন কোটচাঁদপুরের সলেমানপুর দাস পাড়ায় ও থাকতেন মানুষের বারান্দায়। জীবিকার জন্য করতেন ভিক্ষা। তা দিয়ে নিজে খেতেন আর মেয়েকে মানুষ করতেন। এভাবে মেয়েটি বড় করে স্থানীয়দের সহায়তায় বিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু ৩ বছর আগে তাঁর মেয়ে মারা যান। মেয়ের সংসারে দুই সন্তান রয়েছে।বয়সের ভারে অনেকটা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন জহুরা খাতুন। শারীরিক ভাবে বেশ অসুস্থ তিনি। বর্তমানে কর্ম ও ভিক্ষা করার সামর্থ্য নেই। ঠাঁই হয়েছে সলেমানপুর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সড়কের পাশের একটি ঝুপড়িতে। এটি তৈরি করে দিয়েছেন রুমা বেগম, রাহেলা বেগম, সাজেদা বেগম ও পারভিনা বেগম নামের স্থানীয় চারজন নারী। জহুরার অবস্থা দেখে মানুষের কাছ থেকে বাঁশ, টিন ও টাকা চেয়ে ওই নারীরা ঝুপড়ি ঘরটি তৈরি করে দিয়েছেন। সামর্থ্য না থাকলেও খাওয়া আর ওষুধ খরচ চালাচ্ছেন চার নারী। এভাবে বেশি দিন চালানো সম্ভব হবে না বলে জানান তাঁরা। কোথাও মাথা গুজার জায়গা না পেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে থাকে। কিন্তু রাতে ঘুমাতে হতো বিভিন্ন দোকানে বারান্দায়।
বর্তমানে টিনের ছোট একটা ঘর। ঘরের দরজা বেড়ার কাঠামো দিয়ে তৈরি। পলিথিন দিয়ে তা ঢেকে দেওয়া হয়েছে। ঘরের ভেতর পলিথিনের ওপর চাদর বিছিয়ে এক বৃদ্ধা শুয়ে থাকেন। আসবাব বলতে আর কিছু নেই। এটা প্রতিবন্ধি জহুরা খাতুনের থাকার ঘর। টানা৪ দিনের বৃষ্টিতে তার ঘরের সামনে দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল পানির স্রােত এখন জমে রয়েছে পানি ও কাদা। পানি সরে গেলে ও এখন জমে রয়েছে প্রচন্ড কাদা। জহুরা খাতুনের দেখারমত কেউ নেই। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস ঐ এলাকার রুমা খাতুন তাকে অনেকটাই দেখাশুনা করেন। আগে মানুষের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভিক্ষা করতেন কিন্তু তিনি অসুস্থ হওয়ার পরে আর ভিক্ষা করতে পারেন না ফলে কুপড়ি ঘরেই পড়ে থাকে।জহুরা খাতুনের বিয়ে হয়েছিল কালীগঞ্জের কোনো এক গ্রামে। স্বামী মারা যাওয়ার পর তার স্থান না হলে তিনি চোলে যান কোটচাদপুর এলাকার সলেমানপুর গ্রামের দাসপাড়ায়।সেখানে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে কাজ করতেন এবং পাড়ার অনেকের বাড়ির বারান্দায় বসবাস করতেন। কিন্তু জহুরা খাতুন অসুস্থ হলে ঘরের বারান্দায় প্রস্রাব পায়খানা করতেন যে কারণে সেখান থেকে তাকে চোলে যেতে হয়। এলাকার রুমা খাতুন বলেন আমরা কয়েকজন দিলে রাস্তার পাশে একটি কুপড়ি ঘর বানিয়ে দিয়েছি। এ ঘরে থাকেন ও খাবার আর ওষুধসহ সব দেখাশোনা করি আমরা। এভাবে বেশি দিন চালানো হয়তো আমাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে যাবে না।
অসুস্থ হয়ে পড়ায় এখন তাঁর জায়গা হয়েছে পৌরসভার সলেমানপুর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সড়কের পাশের এই ঝুপড়িতে।তবে ইতোমধ্যে জহুরার প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড হয়েছে, তবে এখনো তিনি ভাতার টাকা পাননি।এদিকে গত ৪ দিনের টানা বর্ষণে ভেসে গিয়েছিল জহুরার বাড়ির সামনের পথঘাট। তাঁর ঝুপড়ির চারদিকেও পানি জমেছে। এ অবস্থায় জহুরার কিছু হলে কী করবেন, তা নিয়ে রুমা চিন্তিত। রুমা জানান, জহুরার স্বামীর বাড়ি কালীগঞ্জে। ৩১ বছর আগে মারা যান তাঁর স্বামী। এরপর মেয়ে তাসলিমা খাতুনকে সঙ্গে নিয়ে জহুরা চলে আসেন কোটচাঁদপুরে। আশ্রয় নেন সলেমানপুর দাসপাড়ায়। থাকতেন মানুষের বারান্দায় বারান্দায়। ভিক্ষা করে বেঁচে ছিলেন মা-মেয়ে। মেয়েটি বড় করে স্থানীয় ব্যক্তিদের সহায়তায় বিয়ে দিয়েছিল। মেয়ে মাঝে মধ্যে মাকে দেখাশোনা করতেন সে সময় অনেক টা ভাল ছিলেন। কিন্তু প্রায় দুই বছর আগে মেয়েটি মারা গেছেন। এখন জহুরার আর দেখার কেউ নেই। মেয়ে মারা যাবার পর থেকে জহুরা খাতুন মানষিক ভাবে অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েন। বয়সের ভারে কিছুটা ভারসাম্যহীনও হয়ে পড়েছেন ও বর্তমানে তিন অসুস্থ অবস্থায় রয়েছেন।
স্বামী মারা যাবার পরে তিনি মেয়ের কথা চিন্তা করে বিয়ে করেননি। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস মেয়েটি শিশুকাল থেকে খেয়ে না খেয়ে ভিক্ষা করে বিয়ে দেওয়ার কিছুদিন পরে মেয়ে ও মারা যান।সুখের সংসার ছিল তার, সুখের সংসারে জন্ম নেয় এক েেময়ে। এখন তার কুপড়ি ঘরে ঠিকমত দেখাশুনার কেউ নেই।