কক্সবাজারের ঈদগাহ আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের অচলাবস্থা জিইয়ে রাখা সহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। সংগঠিত ঘটনায় সাধারণ শিক্ষক অভিভাবক শিক্ষার্থী ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতৃবৃন্দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রাপ্ত অভিযোগ প্রকাশ, ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমা পতিত স্বৈরশাসক আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের দোসরদের সাথে নিয়মিত গোপন বৈঠক করেছেন বলে স্থানীয় জনমুখে চাউর হয়েছে। ইউএনওর বিরুদ্ধে ঈদগাহ আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের বিদ্যমান অচলাবস্থা ইচ্ছাকৃত ভাবে জিইয়ে রাখার অভিযোগও উঠেছে। বিষয়টি এখন টক অফ দ্যা ঈদগাঁওতে পরিণত হয়েছে।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অপসারিত সভাপতি ও কক্সবাজার সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মাহমুদুল করিম মাদুর প্রত্যক্ষ মদদ ও দিক নির্দেশনায় তার ওই এজেন্টা বাস্তবায়নের জন্য ইউএনও এমন কার্যক্রমে লিপ্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। কারণ বর্তমান ইউ এন ও স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের আমলে নিয়োগ প্রাপ্ত। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও পাতি নেতাদের সাথে ওই সময়ের দহরম মহরম সম্পর্কের কথা তিনি এখনো ভুলতে পারেননি।
এদিকে বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে নবাগত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনের হাতে একটি স্মারকলিপি তুলে দেয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের শিক্ষকদের স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি প্রদান কালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন বাহারী, সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজারের সভাপতি অ্যাডভোকেট জি,এ, এম, আশেক উল্লাহ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট ফারুকী, বিদ্যালয়ের অভিভাবক, স্থানীয় ও কক্সবাজারের সাংবাদিকসহ গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ।
এ সময় প্রতিনিধিরা নবাগত জেলা প্রশাসককে ঈদগাঁও উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহ আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের চলমান অচলাবস্থা জিইয়ে রাখার পেছনে ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমার রহস্যময় ভুমিকা রয়েছে বলে দাবি করেন।
জানা গেছে, ইতঃপূর্বে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, সচেতন মহল ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের তীব্র আন্দোলনের মুখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমা অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক খুরশীদুল জন্নাতকে কর্ম বিরতিতে পাঠাতে বাধ্য হন। তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ তদন্তের জন্য তিনি তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেন।
স্মারকলিপি থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, গত ২৫ আগস্ট বিদ্যালয়ের একদল প্রাক্তন শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষক খুরশীদুল জন্নাতের সাথে বৈঠক করে বিভিন্ন দফা ও দাবী উত্থাপন করে। নির্ধারিত তারিখের মধ্যে ওই দাবি পূরণ না হলে তারা তাকে পদত্যাগের অনুরোধ জানায়। এতে তিনি কর্ণপাত না করলে ২৭ আগস্ট প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তার পদত্যাগের দাবিতে স্কুল গেইট ও ঈদগাঁও বাস স্টেশনে মানববন্ধন করে। একই দিন তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর স্মারকলিপি ও স্থানীয় সেনাবাহিনীকে বিষয়টি অবহিত করে। ২৯ আগস্ট অধ্যয়ণরত প্রতিবাদী শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করে।
১ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীরা তার পদত্যাগের দাবিতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে চট্টগ্রাম- কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে। এ সময় সড়কের উভয় পাশে শতশত গাড়ি আটকা পড়ে। ৪ /৫ ঘন্টা ব্যাপী সড়কে সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ থাকে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমা বিদ্যালয়ের কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক, অভিভাবক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক খুরশীদুল জন্নাতকে কর্মবিরতিতে পাঠান এবং তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন ও অভিযোগ বক্স স্থাপনের ঘোষণা দেন। তবে তিনি তাৎক্ষণিক তদন্ত কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন নি।
এ-সংক্রান্ত অফিস আদেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরবর্তী কর্মদিবস তথা ২ সেপ্টেম্বর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগের কথাও উল্লেখ করেন।
কিন্তু অদ্যাবধি তিনি তার উল্লিখিত আদেশ কার্যকর করেন নি। ফলস্রুতিতে বিদ্যালয়ের একাডেমিক- প্রশাসনিক সহ সার্বিক কার্যক্রমে চরম অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। শিক্ষক- কর্মচারীরা এখনো আগস্ট মাসের বেতন- ভাতা পাননি। ফলে দূর- দূরান্তের শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
এদিকে এমপিওভুক্ত সিংহভাগ শিক্ষকদের পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর সম্মতিপত্র প্রদান ও একাধিকবার বৈঠকও করা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিদ্যালয়ের অচলাবস্থা নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অংশীজনরাও একাধিকবার ওঁর সাথে দেখা- সাক্ষাত করে দ্রুত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানিয়েছিলেন। তথাপি তিনি অজ্ঞাত কারণে অচলাবস্থা জিইয়ে রেখেছেন।
এতে আরো উল্লেখ করা হয়, ওই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমা ক্ষমতাচ্যুত বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত। তাই তিনি এখনো গোপনে রাতের আধাঁরে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে বৈঠক করেছেন বলে লোকমুখে শোনা যাচ্ছে। তিনি বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী, শিক্ষক, নির্বাচিত অভিভাবক- অভিভাবিকা (প্রধান শিক্ষকের ইঙ্গিতে মামলার কারণে যারা এখনো দায়িত্ব পাননি) ও জন দাবীকে উপেক্ষা করে চলেছেন।
অভিযোগ পাওয়া গেছে যে, বিগত স্বৈরাচার সরকারের দোসর হিসেবে পরিচিত প্রধান শিক্ষক খুরশিদুল জন্নাত ও তার অনুগত পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে কর্মবিরতিতে থাকা অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে বহাল রাখার জন্য এখনো পর্যন্ত গড়িমসি করছেন। যা প্রাচীনতম এ বিদ্যালয়ের সার্বিক অগ্রযাত্রাকে চরমভাবে ব্যাহত করছে।
অথচ এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা ওই পরিচালনা পর্ষদের প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট ইতঃপূর্বে বারবার মৌখিক অনাস্থা জানিয়েছেন।
এমতাবস্থায় শিক্ষক ও সব অংশীজনদের দাবি, অভিযুক্ত ও কর্মবিরতিতে থাকা প্রধান শিক্ষক খুরশীদুল জন্নাত ও সহযোগীদের ব্যাতিরেকে সিংহভাগ শিক্ষকদের মধ্য থেকে সম্মতি প্রাপ্ত শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করে বিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম সচল রাখার স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে জেলা প্রশাসকের তড়িৎ হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।