বৃষ্টির পানিতে কৃষকের পাকা ধান, মরিচ, পলট, বেগুনসহ ৩ হাজার ২৬৫ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। ৪ দিনের টানা বৃষ্টিতে কালীগঞ্জ উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে প্রধান ফসল ধানক্ষেত,ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সবজিক্ষেত।অপরিকল্পিত ভাবে পুকুর খননের কারণে পানি প্রবাহের পথ বন্ধ হয়ে এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি। যার কারণে অতিরিক্ত বৃষ্টিতে মাঠের পর মাঠ ফসল পানিতে ডুবে আছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার চাষি।বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় ডুবে আছে মাঠের পর মাঠ। পাকা ধান, মরিচখেত, বেগুন, সেচ পাম্পসহ হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল পানির নিচে। পাতা কপি, ফুল কপি, মরিচ গাছগুলো মরে নেতিয়ে গেছে। পরিপক্ক কলাসহ গাছ ভেঙে পড়ে আছে। কক্ষয়ক্ষতির পরিমান বেশি হয়েছে কালীগঞ্জ, মহেশপুর ও ঝিনাইদহে। জেলা কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, জেলাতে ১ লাখ ৫০ হাজার ২৩৫ হেক্টর কৃষি জমি রয়েছে। যার মধ্যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলাতে ৩৩ হাজার ৩৬২ হেক্টর, কালীগঞ্জে ২১ হাজার ৬৩৮ হেক্টর, কোটচাঁদপুরে ১২ হাজার ৮৮ হেক্টর, মহেশপুরে ৩৩ হাজার ৬৭৭ হেক্টর, শৈলকুপাতে ৩২ হাজার ৭৪৬ হেক্টর ও হরিণাকুন্ডুতে ১৬ হাজার ৪ হেক্টর চাষ যোগ্য জমিতে চাষাবাদ করা হয়। গত টানা ৪ দিনের বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসের কারণে দুর্যোগে জেলায় ১ লাখ ৫০ হাজার ২৩৫ হেক্টর চাষযোগ্য জমির মধ্যে ৩ হাজার ২৬৫ হেক্টর ফসলী জমি আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু কৃষি বিভাগ থেকে ফসলের ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করা সম্ভব হয়নি। তবে ক্ষতি হওয়া ফসলের মধ্যে রোপা আমন ৯১৩ হেক্টর, সবজি ৬৬৫ হ্ক্টের, মাসকলাই ১১০৬ হেক্টর, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ ৯৮ হেক্টর, মরিচ ২০০ হেক্টর,কলা ১৭০ হেক্টর ও রোপা আউশ ১০ হেক্টর, তুলা ২১ হেক্টর, পান ২ হেক্টর ও মুগ ডাল ৮০ হেক্টরসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ক্ষতির পরিমান সবথেকে বেশি ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে মহেশপুর, কালীগঞ্জ ও সদর উপজেলাতে।
কৃষক তারা মিয়া বলেন, আমাদের মাঠের ধান, মরিচ, পলট যা ছিল সবই শেষ। মাঠে যে চাষ করতাম সবাই পানির নিচে তলিয়ে গেছে। আমরা যে মাঠে কাঁচি নিয়ে ধান কাটব? কাঁটার মতো তো কিছুই নেই। ৩০ বিঘা জমির ধান সবই শেষ হয়ে গেছে।হলিধানী এলাকার কৃষক জবেদ আলী বলেন, বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসের কারণে আমাদের ৫০ শতক জমির পাঁকা ধান মাটির সাথে নুয়ে আছে। টানা বৃষ্টির কারণে গাছেই ধান তলিয়ে গেছে। এতে ধানের যেমন ফলন আশা করেছিলাম তা সম্ভব হবে না। আবার গোখাদ্যের জন্য বিচুলিও হবে না। এ ছাড়া মরিচখেত থেকে বৃষ্টির পানি সরে যাবার পর পরই মরিচ গাছগুলো মরতে শুরু করেছে। এই ৪ দিনের বৃষ্টিতে আমাদের প্রায় ২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপণ্ডপরিচালক কৃষিবিদ ষষ্টি চন্দ্র রায় বলেন, গত ৪ দিনের বৃষ্টি এবং ঝড়ো বাতাসের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগে জেলায় ৩ হাজার ২৬৫ হেক্টর ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তবে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সঠিক ভাবে নিরুপণ করা সম্ভব হয়নি। দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে কৃষককে সরাসরি সহযোগিতাসহ কৃষি বিভাগ থেকে অনান্য সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে।