চট্টগ্রামের হাটহাজারী মডেল থানার সাবেক ওসি রফিককে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে আসল ঘটনা উদঘাটন করা না হলে ছাত্র জনতার নেতৃত্বে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে হুশিযারী উচ্চারণ করেছে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ হাটহাজারী উপজেলা শাখার নেতৃবৃন্দরা।
শনিবার বিকালের দিকে আল আমিন সংস্থার কার্যালয়ে হাটহাজারীতে হেফাজত কর্মী মাদ্রাসা ছাত্র হত্যার সদ্য গ্রেপ্তারকৃত হাটহাজারী থানার সাবেক ওসি রফিকুল ইসলাম সহ হত্যা মাসলার সকল আসামিদের গ্রেপ্তার পূর্বক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন এ হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন তারা।
হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ হাটহাজারী উপজেলা শাখার আয়োজনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সমাজ কল্যাণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ মাস্টার।
তিনি বক্তব্যে তারা বলেন,
১. সেদিন হেফাজতের কোন কর্মসূচি ছিল না যা হেফাজতের তৎকালীন মহাসচিব মাওলানা নূরুল ইসলাম জিহাদী(রহ:) বারবার বিভিন্ন সাংবাদিক সম্মেলন সহ একাধিক বিবৃতিতে উল্লেখ করেন।তা সত্বেও ওই ঘটনার সম্পূর্ণ দায় চাপানো হয় হেফাজতের উপর।
২. সেদিন হেফাজতের কোন কর্মসূচি না থাকা স্বত্বেও হাটহাজারী থানায় রায়ট কার,জল কামান সহ অতিরিক্ত ফোর্স নিয়ে পুলিশের রণ-প্রস্ততি ছিল কেন?
৩. ওসি রফিক হাটহাজারী মডেল থানায় থানার সম্মুখে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ন্যায় বাংকার স্থাপন কি উদ্দেশ্যে ছিল?
৪. ওসি রফিক আওয়ামী লীগ নেতাদের সামনে দাম্ভিকতার সাথে বলত,হেফাজত অনেক তান্ডব চালিয়েছে।এবার আমি দেখে নেব।প্রয়োজনে হাটহাজারীতে ১০ হাজার লাশ পড়বে।
৫. ২৬শে মার্চ ছিল সরকারী ছুটির দিন তাছাড়া সেদিন শুক্রবার থাকার পরও কি উদ্দেশ্যে ভূমি অফিস খোলা ছিল?ভূমি অফিস থেকে লুন্ঠনকৃত কম্পিউটার কারা নিয়েছিল এবং পরে ফেরত দিয়েছিল?তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি কেন?
৬. সেদিনের ঘটনা তদন্তে হেফাজত কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটিকে ওসি রফিক সহ তৎকালীন প্রশাসন কোন ধরনের সহযোগীতা করেনি কেন?সেদিন তদন্তের স্বার্থে হেফাজতের তদন্ত কমিটি মিছিলে কারা ছিল তা জানতে ঘটনার ভিডিও ফুটেজ চাইলে ওসি রফিক তা দিতে অস্বীকৃতি জানায় কেন?
৭. মিছিলের প্রথম সারিতে কৃষকলীগ নেতা যোবায়ের সহ অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতারা নেতৃত্ব দিলেও মিছিলের শেষ সারিতে থাকা নিরীহ মাদ্রাসা ছাত্র এবং মুসল্লিদের উপর গুলি চালানো হয় কেন?
৮. যদি একান্ত গুলি চালাতেই হতো,তবে কোন ধরনের সতর্কতা বা মাইকে কোন এনাউন্সমেন্ট করা হয়নি কেন?এবং পায়ে গুলি না করে মাথায় এবং বুকে করা হলো কেন?
৯. ঘটনা যদি তৎকালীন প্রশাসন এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সাজানো নাটক না হতো তবে সেদিন সকাল থেকে ডি এস বির এসপি আব্দুল্লাহ আল মাসুম হাটহাজারী থানায় ছিল কেন?
১০. ঘটনার দিন তৎকালীন এম পি,ডি আই জি ও এসপি সহ সংশ্লিষ্ট সকলের ঐক্যমতে কোন পক্ষ কোন ধরনের মামলা না করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার পরও হেফাজত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা করা হলো কেন?
১১. ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হেফাজত নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করে রিমান্ডের নামে অমানুষিক নির্যাতন কার নির্দেশে এবং কার স্বার্থে ছিল?
উপরোক্ত ঘটনা পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়,মূলত নিরীহ আলেম-ওলামা, হেফাজত নেতা-কর্মীদের জঙ্গি তকমা লাগাতে ভারতীয় আগ্রাসী শক্তি ও আওয়ামী অপশক্তির প্রেসক্রিপশনে ওসি রফিক সহ তৎকালীন প্রশাসন এই তান্ডবের জন্য দায়ী। আমরা এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের জন্য ওসি রফিক সহ জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড দাবী করছি।
তারা আরো বলেন, ২০২১ সালের ২৬শে মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে সাধারণ মুসল্লিদের প্রতিবাদ মিছিলে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে হাটহাজারীতে ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ বিনা উস্কানিতে ওসি রফিকের সরাসরি নির্দেশে গুলি চালানো হয়।এতে চারজন হেফাজত কর্মী ও মাদ্রাসা ছাত্র নিহত সহ অর্ধ-শতাধিক মানুষ আহত হন। ওই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড ওসি রফিককে তিন দিনের রিমান্ডে এনে জামাই আদরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অথচ হেফাজত নেতা-কর্মীদের টর্চার সেলে নিয়ে ইলেক্ট্রনিক শক,হাত পায়ের নখ উপড়ে ফেলা সহ অমানুষিক নির্যাতন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে দপ্তর সম্পাদক মাওলানা নিজাম সাইয়্যিদ, সম্পাদক মাওলানা এমরান সিকদার,মাওলানা শফিউল আলম,মাওলানা হাফেজ আলী আকবর,মাওলানা রিজওয়ান আরমান,মাওলানা আবুল হাশেম,মাওলানা আনিস,মাওলানা আসাদ উল্লাহ, আবু তাহের রাজিব সহ প্রমূখ নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন। সবশেষে দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন সংগঠনের অর্থ সম্পাদক মুফতী মুহাম্মদ আলী কাসেমী।