ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভার প্রতিষ্ঠার ৩৫ বছরে ও পৌর এলাকায় মজবুত ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে পানি নিস্কানের ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। অপরিকল্পিত ভাবে ড্রেন তৈরি করার কারণে জনসাধারনের বড় ধরনের জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই পথ ও ড্রেনে তলিয়ে যায় পানির নিচে। অধিকাংশ এলাকায় পানি নিস্কাসন হয়ে বের হওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে কালীগঞ্জ পৌরসভার নাগরিকদের একমাত্র পৌরসভার ড্রেন ভরসা হলেও প্রতিটি এলাকায় ড্রেনের কোন মাথামুন্ডু নেই।
১৯৯০ সালের ১৪ মার্চ কালীগঞ্জ পৌরসভা গঠিত হয়, পরবর্তীতে ২০১০ সালে প্রথম শ্রেনিতে পৌরসভা হিসাবে মনোনয়ন করা হয়। পৌরসভায় মোট ৯টি ওয়াডের ১৪টি মৌজা আছে। কালীগঞ্জ পৌরসভার ভিতর দিয়ে চিত্রা নদী প্রবাহিত। পৌরসভা গঠিত হওয়ার পরে প্রথমে পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহন করেন উপজেলা নির্বাহি অফিসার সাজ্জাদুর রহমান। পরে নির্বাচন হলে প্রথম পৌসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আবদুল মান্নান। তিনি পর পর দুইবারে সাড়ে ৭ বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে পরে ঝিনাইদহ ৪ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়। ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করে ইসমাইল হোসেন, পরবর্তীতে মেয়র নির্বাচিত হয় মোস্তাফিজুর রহমান বিজু, মকছেদ আলী, আশরাফুল আলম আশরাফ।এ পর্যন্ত ৫ জন রাজনৈতিক নেতা চেয়ারম্যান ও মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু পরিকল্পিত ড্রেন উন্নয়নে কেউ কার্যকর ভুমিকা পালন করেননি, বিদ্যুতের বাতি জলে না, রাস্তা গুলো ভেঙ্গে চলাচলে মারাত্নক দূর্ভোগ,শহরের ফুটপাত গুলো জুড়ে ব্যবসা করছেন প্রায় ৩ শতাধিক ব্যবসায়ি।
কালীগঞ্জ পৌরসভার মোট আয়তন রয়েছে মোট১৫.৮৩ বর্গ কিলোমিটার, ৯টি ওয়ার্ডের ১৪ টি মোজায় প্রায় দেড় লাখ মানুষের বসবাস। ড্রেন গুলি নিয়মিত পরিস্কার করা হয় না। অনেক স্থানে ড্রেন ভেঙ্গে সমান হয়ে গেছে। ফলে বাসাবাড়ির পানির সঙ্গে বৃষ্টির পানি মিশে ড্রেনের ময়লা আবর্জনা ভেসে একাকার হয়ে যায়। মহল্লার মানুষ বলছেন কোন রকম পরিকল্পনা ছাড়াই পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে উঠছে। যে কারণে পৌর নাগরিকদের জলাবদ্ধতা কোন সুফল পায় না।বাসষ্টান্ড, আড়পাড়া, পৌরসভার সামনে, নিমতলা বাজার, ফয়লা মাষ্টার পাড়া, আড়পাড়ার পরামানিক পাড়া, শিবনগর,মোবারক আলি স্কুলের সামনে, হেলাই,মধুগঞ্জ বাজার,নিশ্চিন্তপুর, নিমতলা-থানা সড়কসহ প্রতিটি এলাকায় ড্রেনের কোন মাথামুন্ডু নেই। বাসাবাড়ির পানি কোথায় গিয়ে পড়বে সেই ব্যবস্থা ড্রেনে রাখা হয়নি। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করে। শহরের আড়পাড়া এলাকায় রয়ছে একটি সেটি পাড়া মহল্লার পানি ওই খাল দিয়ে চিত্রা নদীতে পড়তো। কিন্তু সেই খাল ভরাট করে বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরী করা হয়েছে। কালীগঞ্জ পৌরসভা একটি আধুনিক পৌরসভা ৯ টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই পৌরসভায় রয়েছে দক্ষিণবঙ্গের উল্লেখযোগ্য বিটিশ আমলের কারখানা মোবারকগঞ্জ চিনিকল এবং দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম মোবারকগঞ্জ রেলষ্টেশন। এলাকার মধ্যে রয়েছে ১ নং ওয়ার্ড চাপালি-শ্রীরামপুর, ২ নং ওয়ার্ড পাইকপাড়া-আনন্দবাগ,৩ নং ওয়ার্ড ফয়লা,৪ নং ওয়ার্ড হেলাই, ৫ নং ওয়ার্ড নিশ্চিন্তপুর- বলিদাপাড়া, ৬ নং ওয়ার্ড বলিদাপাড়া -বাবরা এবং ছোট রায়গ্রাম আংশিক, ৭ নং ওয়ার্ড আড়পাড়া, ৮ নং ওয়ার্ড শিবনগর -চাচড়া,৯ নং ওয়ার্ড কাশিপুর এবং ঈশ্বরবা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪টি,কলেজ ৩টি,আলিম মাদ্রাসা ১টি,ফাযিল মাদ্রাসা ১টি,কওমী মাদ্রাসা ৪টি,হাফিজী মাদ্রাসা অন্তত ১৫টি নুরানী মাদ্রাসা ২টি এবতেদায়ি মাদ্রাসা ৫টি,এতিমখানা ৪টি,সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮টি, কলেজ রয়েছে ৩টি।
কালীগঞ্জ পৌরসভা প্রথম শ্রেনির পৌরসভা হওয়া সত্বেও পৌর শহরের প্রধান প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে ৯টি ওয়ার্ডের সড়কের পিচ ঢালাইসহ ইটের খোয়া ওঠে গিয়ে খানাখন্দকে তৈরি হয়েছে মরণ ফাঁদ। শুধু তাই নয় সঠিক বর্জ্যব্যবস্থাপনা না থাকায় বিভিন্ন সড়কের ধার সহ, বাসাবাড়ির আশপাশ যত্রতত্র ময়লা আবর্জনার স্তুপ করায় পরিবেশ পরেছে হুমকির মুখে।
এছাড়াও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এতে নাজেহাল অবস্থা পৌরবাসীসহ সড়কে চলাচলকারী জনসাধারণের।চলতি বর্ষা মৌসুমে দেখা যায়, সড়ক গুলো দীর্ঘ দিন থেকে সংস্কার না করায় যান চলাচলে রাস্তা গুলোর পিচের ঢালাই ও ইট উঠে গিয়ে ছোট বড় অসংখ্য গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। একটু বৃষ্টিতেই রাস্তার গর্ত গুলোতে কোথাও কোথাও হাঁটু সমান পানি জমে থাকে। গাড়ি নিয়ে এসব রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে অনেকে। এ ছাড়া পানি জমে থাকার কারণে রাস্তায় চলাচলকারীদের শরীরে কাদা পানি ছিটকে পোশাক নষ্ট হচ্ছে।বিশেষ করে রাস্তার ধারে যেখানে সেখানে ময়লার স্তুপের দূর্গন্ধ পরিবেশ নষ্ট করছে। গন্ধে রাস্তার পাশ দিয়ে যাওয়া যায় না।এদিকে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনার ভাগারে পরিবেশ দূষণ হওয়ার পাশাপাশি দূর্গন্ধ ও ভাঙ্গাচোড়া ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে সাধারণ মানুষসহ বিদ্যালয় ও কলেজে যেতে শিক্ষার্থীদেরও পোহাতে হচ্ছে চরম দূর্ভোগ। ওয়ার্ডের বাসিন্দারা ও সড়কে চলাচলকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে রাস্তা সংস্কার এবং ড্রেনেজ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহন করা অনুরোধ জানান পৌর কর্তৃপক্ষকে।
বর্তমানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ইলিশায় রিছিল গত ১৯ আগস্ট থেকে কালীগঞ্জ পৌরসভার দায়িত্ব পালন করছেন।