সৎ মায়ের সংসারে শিশু জিদনী(১০) যেন বুঝা। জিদনীর বাবা একজন দরিদ্র দিন মজুর। কাঠ চিরাইয়ের কাজ করে। সৎ মায়ের সংসার থেকে দুরে রাখতে বছর খানেক পূর্বে দূর সম্পর্কের এক ফুফুর বাড়ি ঢাকা লালবাগ এলাকায় গৃহপরিচারিকার কাজে পাঠিয়ে দেয় জিদনীকে। তারপর থেকে মেয়ের সাথে আর দেখা হয়নি বাবার। মাঝে মাধ্যে গৃহকর্তৃীর মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে। মেয়েকে দেখতে যাওয়ার জন্য ঠিকানা চাইলে চলতো না রকম অজুহাত। অবশেষে গতকাল গভীর রাতে গৃহকর্ত্রী সঙ্গে আরো দুজনকে নিয়ে অ্যাম্বোলেন্সে করে জিদনীর লাশ নিয়ে আসে তার বাবার কাছে। মেয়ের লাশ দেখে মুর্ছা যায় বাবা শরীফ মিয়া। কি হয়েছে জানতে চাইলে তারা বলে ডায়রীয়া হয়েছিল। বিকালে মারা গেছে। কিন্তু শিশু মেয়ের শরীর স্পর্শ করতেই ভেসে উঠে তার শরীরে অনেকগুলো ক্ষত চিহ্ন। তাদের চিৎকারে আশে পাশের লোকজনও ছুটে আসেন। বিষয়টি জানতে চাইলে তাদের দুইজন তড়িঘরি করে অ্যাম্বোলেন্সে উঠে চলে যায়। এ সময় মোজাহিদ নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে স্থানীয়রা। বিষয়টি কটিয়াদী মডেল থানা পুলিশকে অবহিত করলে পুলিশ শুক্রবার সকালে ময়না তদন্তের জন্য লাশ কিশোরগঞ্জ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। নিহত জিদনী উপজেলার মুমুরদিয়া ইউনিয়নের চাতল গ্রামের শরীফ মিয়ার মেয়ে।
জিদনীর বাবা শরীফ মিয়া জানান, বাসার কাজ করবে ও লেখাপড়া করানোর আশ্বাস দিয়ে আমার মেয়েকে এক বছর আগে দূর সম্পর্কের বোন আছমা আক্তার তার ঢাকার বাড়িতে নিয়ে যায়। আছমার স্বামী নূরুজ্জামান ঢাকার লালবাগে ব্যবসা করেন। আমার মেয়েকে তারা নির্যাতন করতো কখনো বুঝতে পারিনি। ভেবেছিলাম মেয়ে ভালো আছে। কিন্তু গতকাল রাতে আমার মেয়ের লাশ দিয়ে গেছে। আমি গরীব মানুষ। এর বিচার কি পাবো? আমি এর বিচার চাই।
শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাব ইন্সপেক্টর মোহসীন জানান, প্রাথমিক অবস্থায় এটি একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু বলে পরিলক্ষিত হয়েছে। লাশের সুরতহালে শিশুর সমস্ত শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন ও গরম পানি দিয়ে চামড়া ঝলসানোর আলামত রয়েছে।
এ ব্যাপারে মডেল থানার ওসি গোলাম সারোয়ার বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ডিএমপি লালবাগ থানাকে অবহিত করা হয়েছে।