পিতৃহারা এক ছেলে, মা অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে গেছে। এতিম ছাত্র হিসেবে উপজেলার রহনপুর ইউনিয়নের কাজিগ্রাম কলকলিয়া গ্রামে হাফিজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ছেলেটির নাম আসলাম, বয়স ১২ বছর। গোমস্তাপুর ইউনিয়নের বেগুনবাড়ীতে পৈতৃকবাস। কয়েকমাস আগে তার পিতা আবুল কালাম চট্রগ্রামে রাজমিস্ত্রী কাজ করতে গিয়ে বিল্ডিং থেকে পড়ে মারা যান। দাদী তাকে দেখাশুনা করেন।
জানা গেছে আসলাম ওই মাদ্রাসায় পড়ালেখা করছিলেন। মাঝে মধ্যে তার পেটের ব্যথা হতো। গত বুধবার তার প্রচন্ড ব্যথা অনুভূতি হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। হাসপাতালে চিকিৎসা করার পর তার কিছু পরীক্ষা টেস্ট করতে বলা হয়। পরে রিপোর্টে অ্যাপেন্ডিসাইটিস রোগ ধরা পড়ে বলে চিকিৎসকরা জানায়। চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। কিন্তু আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে রাজশাহী যেতে পারছিলেন না। হাসপাতালে বসে দুচোখের পানি ঝড়াচ্ছিলেন ৭০ বয়সী দাদী চেনবানু। ওই সময় বিষয়টি একজন গণমাধ্যম কর্মীর নজরে আসে। তার কথা শুনে তাৎক্ষণিক গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত আনজুম অনন্যাকে অবহিত করেন। ওই সময় ইউএনও ওই ছেলেটির পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। পরে গত শুক্রবার বেসরকারি একটি ক্লিনিক (রহনপুর জেনারেল হাসপাতাল) ছেলেটির অপারেশনের ব্যবস্থা করেন। সে এখন সুস্থ রয়েছে।
ছেলেটির দাদী চেনবানু বলেন, আসলামের বাবা বেশ কিছুদিন আগে চট্টগ্রামে রাজমিস্ত্রির কাজ গিয়ে বিল্ডিং থেকে পড়ে মারা যায়। তার মা অন্যত্র বিয়ে হয়ে চলে গেছে। তিনি ছাড়া দেখার মত আর কেউ নাই। বৃদ্ধ বয়সে তার দেখাশোনা করতে হিমসিম খেতে হচ্ছিল। পরে তাকে হাফিজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেন। গত বুধবার হাসপাতালে ভর্তির পর শুনতে পারি তার পেটের অপারেশন করাতে হবে। তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েন। এতটাকা জোগাড় করা বা রাজশাহী নিয়ে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব না। হাসাপাতালে এক সাংবাদিক তার কথা শুনে ইউএনওকে বলেন। ইউএনও তার নাতীতে অপারেশন ব্যবস্থা করে দেন। তিনি খুশি হয়েছেন ইউএনও'র মহানুভবতা দেখে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত আনজুম অনন্যা বলেন, ছেলেটির কথা শুনে আমি তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট সবার সাথে কথা বলে অপারেশনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করি।
জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক মনিরুল ইসলাম মুকুল বলেন, ক্লিনিক থেকে তাকে যথেষ্ট রকম সহযোগিতা করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্যার তার খোঁজখবর নিয়েছেন।
এদিকে ওই ক্লিনিকে গিয়ে দেখা গেছে, অপারেশন পর আসলাম সুস্থ রয়েছে। সে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারছে বলে খুব খুশি। সে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ধন্যবাদ জানিয়েন।