ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌর বাজার এলাকার ব্যাস্ততম সড়ক সমুহে অবৈধভাবে দখল করে রাখা ক্ষুদ্র ব্যবসায়িদের উচ্ছেদে দীর্ঘদিন পর যৌথ উদ্যোগ নিয়েছে পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসন। জনগণের দীর্ঘদিনের এই দাবি বাস্তবায়নে এত দিন পর হলেও টনক নড়েছে কর্তৃপক্ষের। বুধবার কালীগঞ্জ পৌরসভার প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী মেইন বাসস্ট্যান্ড থেকে শহরমুখী সড়কের দুই পাশে বসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়িদের মৌখিক ভাবে ২৪ ঘন্টার নোটিশে ফুটপাত ও রাস্তা খালি করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ সময় পৌরসভার মেয়র এবং কাউন্সিলার কাউকেই দেখা যায়নি তাদের সাথ। কালীগঞ্জ পৌরসভার মধুগঞ্জ বাজারসহ শহরের বিভিন্ন পাশে কিংবা ফুটপাতে বসে ছোট ছোট ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরা নির্বিঘেœ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে। যে কারণে সড়কের দ,ুপাশের পরিধির প্রায় ২৫ ফুট রাস্তা চলাচলে মারাত্মক বিঘœ সৃষ্টি হয় প্রতিনিয়ত।
বিগত সরকারের আমলে প্রভাবশালী জনপ্রতিনিদির ছত্রছায়ায় থাকা ব্যাক্তিরা এইসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়িদের নিকট থেকে জোরপূর্বক প্রতিদিন ৩০/৫০ টাকা হারে বিনা রশিদে চাঁদা আদায় করেন। শহরের সাধারণ ব্যবসায়িদের একটি দোকান বরাদ্দ নিতে প্রকার ভেদে ২০ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অগ্রিম এককালীন টাকা ও মোটা অংকের মাসিক দোকান ভাড়া চুক্তিতে ব্যবসা পরিচালনা করতে হয়। কিন্তু প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির অতিরিক্ত টাকা আয়ের উদ্দেশ্যে জোরপূর্বক বাজারের বিভিন্ন সড়কের পাশে ও ফুটপাতে বিভিন্ন ধরনের ছোটো ছোটো প্রায় ৩০০ টি দোকান বসিয়ে তাদের নিকট থেকে দৈনিক চাঁদার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কালীগঞ্জ পৌরসভা প্রথম শ্রেনির একটি পৌরসভা হলেও মূল শহরে ফুটপাতে রাস্তা দখলের কারণে ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক, রিক্সা, ভ্যান, মোটর সাইকেল ও অন্যান্য যান চলাচলে চরম বিঘœ সৃষ্টি হয় সর্ব সময়। রাস্তা গুলোতে যানজটে জনগণের নাভিশ্বাস উঠে যায়। ইতঃপূর্বে বেশ কয়েক বার কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফকে যানজট নিরসনে রাস্তায় নামতে দেখা গেলেও ফুটপথ ও রাস্তা দখমুক্ত করতে তাকে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ গ্রহন করতে দেখা যায়নি।
সচেতন মহল ও দোকান মালিক ব্যবসায়িরা জানান, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনের সড়কের দুই প্রান্তে অবৈধ দোকান বসিয়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন একটি মহল। দখলের ব্যাপারটি নিয়ে বারবার জনপ্রতিনিধিদের জানানো হলেও তারা কখনো তা আমলে নেননি। আমরা ব্যাবসায় মোটা অংকের টাকা বিনিয়োগ করেও কাঙ্খিত মুনাফা অর্জন করতে পারি না শুধু এইসব কারণে। অবৈধ এসব দোকান বসানোর ব্যাপারে উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা মিটিংয়ে একাধিকবার আলোচনা হলে ও যার কোন সুরাহা এতদিনে হয়নি। স্খানীয় আইন প্রয়োগকারি সংস্থা অবৈধ দোকান উচ্ছেদ এর ব্যাপারে ইতঃপূর্বে বেশ কয়েক বার উদ্যোগ নিলেও প্রভাবশালিদের চাপের কারণে উচ্ছেদ অভিযানে তারা ব্যর্থ হন বলে জানান। কালীগঞ্জ মেইন বাসস্ট্যান্ড থেকে জনতা বাংক মোড় অভিমুখে সড়কের পাশের কয়েকজন ক্ষুদ্র কাপড় ব্যবসায়ি বলেন, রাস্তার দুপাশে জুতা,কাপড়,জুতা,ডাব,চা-বিস্কুট ফল ও চায়ের দোকান রয়েছে। আমাদের মধ্যে অনেকেই কাপড়ের দোকান দেওয়ার জন্য স্থানীয় জুয়েল নামে এক নেতাকে ৭ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত এককালীন অফেরত যোগ্য হিসেবে নেয়। আর প্রতিদিন দোকান ৫০ টাকা হারে টাকা দিতে হয়। বুধবার পৌরসভা থেকে এসে মাত্র ২৪ ঘন্টা সময় বেঁধে দিলো উঠে যাওয়ার জন্য। এখন আমরা কোথায় যাব ওে য টাকা দিয়েছি সে টাকা কে আমাকে ফেরত দিবে ? ব্যবসা বন্ধ থাকলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরবো। আমাদেরকে অন্যত্র একটি বসার ব্যবস্থা করে দিয়ে তারপর যেন উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। কালীগঞ্জ পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে সহকারী কর আতায়কারি হামিদুল ইসলাম মনা জানান, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফুটপাত এবং রাস্তার উপরে বসা দোকানপাট উচ্ছেদের ব্যাপারে মৌখিক ভাবে নির্দেশনা দিতেই মাঠে নেমেছি। আগামীকালের মধ্যে শহরের রাস্তার দুধারের ফুটপাত এবং রাস্তার উপর বসানো দোকান সরিয়ে না নিলে শুক্রবার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ মুঠোফোনে জানান,আমি বেশ কয়েকদিন অফিস করছিনা। পৌর নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট হয়তো কোনো আদেশ আছে যে কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফুটপাতের ব্যবসায়িদের নির্দেশনা দেওয়ার জন্য যেতে পারে। তবে ফুটপাতে বা রাস্তায় এসব দোকান বসানো এবং চাঁদা নেওয়ার ব্যাপারে আমি এবং আমার কোনো লোক জড়িত নেয়। বিনা রশিদে চাঁদা আদায়ের ব্যাপারে ওইসব ব্যবসায়িদের কখনো আমার কাছে অভিযোগ করেনি। আমি এসব ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীদের অন্যত্র সরিয়ে রাস্তা দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ওই উদ্যোগ আর এগোয়নি। তবে ওখানে যারা ব্যাবসা করে সবাই গরীব। তাদের দিকটাও নজরে রাখতে হবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান জানান, আমি কালীগঞ্জ পৌর নির্বাহী কর্মকর্তাকে ফুটপাত এবং সড়কের দুপাশ দখলমুক্ত করার ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছি। কালীগঞ্জ পৌরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবিও ছিল এটি। সকলের সহযোগিতা পেলে ইনশাআল্লাহ ফুটপাত এবং রাস্তার দুপাশ দখলমুক্ত করতে পারবো বলে আমি মনেকরি।