বরগুনা সদর উপজেলায় কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) প্রকল্পে কমিটি গঠন সহ রাস্তার কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। বরগুনা সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামোর আওতায় মাটির রাস্তা পুন:নির্মাণ ও সংস্কার কাজে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, ঢাকা থেকে বরগুনা সদরের ৫ টি ইউনিয়নে কাবিটা কর্মসূচির আওতায় ১৩ টি প্রকল্পে ৫ কোটি ৫ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা উপ-বরাদ্দ দেয়া হয়। এ সকল প্রকল্পে শ্রমিক দিয়ে মাটি কাটার বাধ্যবাধকতা থাকলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যায়নি। স্ক্যাবেটর (ভেকু) দিয়ে মাটি কাটার বড় ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে, সরকারের গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি, গ্রামীন দরিদ্র জনগনের আয় বৃদ্ধি, দেশের সর্বত্র খাদ্য সরবরাহের ভারসাম্য আনয়ন এবং দারিদ্রমোচনে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি কর্মসূচি ব্যাহত হচ্ছে এবং আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন এসব প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারী এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যরা। গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কার কাবিখা/কাবিটা কর্মসূচি বাস্তবায়ন নির্দেশিকা সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যকে অবশ্যই ইউনিয়নের অধিবাসী হতে হবে, এবং প্রত্যেক কমিটিতে অন্তত একজন মহিলা সদস্য থাকবেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বার, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বারগনের মধ্য হতে প্রকল্প চেয়ারম্যান মনোনীত হবেন। তবে, কোন কারণে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান মেম্বার অনুপস্থিত থাকলে ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে অন্য কোন মেম্বারকে প্রকল্প চেয়ারম্যান হিসাবে মনোনয়ন দেয়া যেতে পারে। পরিপত্রে এমন নির্দেশনা থাকা সত্বেও সেই পরিপত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভুয়া প্রকল্প কমিটি সাজিয়ে ইতোমধ্যেই বরাদ্দের অর্ধেকের বেশি বিল তুলে নিয়েছে প্রকল্প কমিটির সদস্যরা। সরেজমিনে দেখা যায়, সদরের ১৩ টি প্রকল্পের প্রায় সবগুলোই প্রকল্প কমিটি শ্রমিক দিয়ে কাজ না করিয়ে এস্কেভেটর (স্থানীয়ভাবে ভেকু নামে পরিচিত) মেশিন দিয়ে মাটির কাঁচা রাস্তা সংস্কার কাজ করেছেন। এ ছাড়া মানুষের ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে রাস্তা মেরামতে। এতে দরিদ্র শ্রমিকের পাশাপাশি কৃষকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব অনিয়মের সবই হচ্ছে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চোখের সামনে। কিন্তু, এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না। ঢলুয়া ইউনিয়নের রায়ভোগ এলাকার কৃষক জাফর খান বলেন, শ্রমিক দিয়ে কাজ করলে গাছপালা ও ফসলী জমি নষ্ট হতোনা। ভেকু দিয়ে কাজ করার ফলে আমরা ৫ বছরে ওই কুয়ায় আর ফসল দিতে পারবোনা। এ বিষয়ে, সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান এ প্রতিনিধিকে ১৩ আগস্ট বলেন, বিশেষ বরাদ্দের ক্ষেত্রে কিছু টা ছাড় রয়েছে। তাছাড়া অন্য ইউনিয়নের বাসিন্দা ঢলুয়া ইউনিয়নের কাজের কমিটিতে থাকার বিষয়ে, এমপির স্বাক্ষরিত থাকলে আমার করার কিছু থাকেনা। এখন পর্যন্ত সাড়ে তিন কোটি টাকার বিল প্রদান করা হয়েছে। এ বিষয়ে বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শামীম মিঞা বলেন, ১৩টি প্রকল্পের কমিটিতে যে অনিয়ম আছে, বাস্তবায়ন নীতিমালা অনুযায়ী কমিটিতে নারী সদস্য দেয়া হবে এবং সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বারকে যাতে কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয় তার নির্দেশনা থাকবে। বর্ষা মৌসূমে কিছু প্রকল্পে এস্কেভেটর দিয়ে কাজ হয়েছে তবে, পরবর্তী কাজ সম্পন্নের জন্য শ্রমিক নিয়োগ ব্যাতীত এবং প্রকল্পের যে এস্টিমেশন দেয়া আছে তা শতভাগ না হলে বিল প্রদান করা হবেনা।