কিশোরগঞ্জ জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলা শহরের এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা,দেয়াল লিখন, ট্্রাফিকসহ সড়ক নিরাপত্তার কর্মসূচি পালন করছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। কিশোরগঞ্জে লাগাতার ছাত্র আন্দোলনের আগে থেকেই অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল শহরের অলিগলি। আর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ভেঙে পড়ে পুলিশের চেইন অব কমান্ড। এ অবস্থায় কিশোরগঞ্জ শহরের বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে আনসার সদস্যদের পাশাপাশি ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছেন শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তারা শহরে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাচ্ছেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরাসহ বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি যুব রেড ক্রিসেন্ট, নিরাপদ সড়ক চাই, ইসলামি যুব আন্দোলনের নেতাকর্মীরাও শহরের একরামপুর মোড়, পুরানথানা মোড়, গৌরাঙ্গ বাজার ও কালীবাড়ি মোড়সহ এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে দেখা গেছে। এসব কর্মী অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহনকে ট্রাফিক আইন মেনে সারিবদ্ধভাবে চলাচলে পরামর্শ দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। সেই সাথে রাত জেগে জেলা শহরের মন্দিরগুলো পালা করে পাহাড়ায় নিয়োজিত রয়েছে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা।
কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রাণ হারিয়েছেন শত শত মানুষ। রাজপথে রক্ত ঝরেছে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর। সফল গণঅভ্যুত্থানের পর সড়কের পাশে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেয়ালে চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে আন্দোলনের সেসব স্মৃতিকে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন কিশোরগঞ্জের শিক্ষার্থীরা। বিবর্ণ অতীত মুছে দেয়ালে দেয়ালে নানা ক্যালিওগ্রাফি ও লিখনী আঁকছেন তারা। শিক্ষার্থীরা অনেক দেয়ালে নতুন করে লিখছেন দেশ সংস্কারের নানা স্লোগান। আঁকছেন বিভিন্ন শিল্পকর্মও। শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর থেকে (৫ আগস্ট) কিশোরগঞ্জ শহরে এই কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন তারা।
সোমবার (১২ আগস্ট) সকাল থেকেই শিক্ষার্থীদের শহরের সরযুবালা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দেয়ালের পরিস্কার করে চিত্রকর্ম করতে দেখা যায়। জেলা শহর ও আশপাশের এলাকায় বসবাসরত বিভিন্ন বিদ্যালয়, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ কর্মযজ্ঞে অংশ নেন। তারা গত কয়েকদিনে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনের দেয়ালগুলোতে নানান শিল্পকর্মও আঁকছেন।
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর কিশোরগঞ্জের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে শহরের বিভিন্ন সড়ক, থানা, লেক ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে অংশ নিচ্ছেন। একই সঙ্গে তারা শহরের বিপণিবিতান ও বাজারে বাজার মনিটরিং করছেন।
শহরের সড়কে ট্রাফিকের দায়িত্বপালনকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা না থাকায় আমরা জনদুর্ভোগ কমাতে নিজ উদ্যোগে এই কাজ করছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরলে ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা কর্মস্থলে যোগ দিলে আমাদের আর এই কাজ করতে হবে না। আমরা এখন সড়কে চালককে নিয়ম মেনে চলার অনুরোধ করে যাচ্ছি।’
এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় শহরজুড়ে যে ধ্বংসস্তূপ তৈরি হয়েছে সেগুলো পরিষ্কারে কাজ করছেন তারা। শহরে ইট-পাটকেল, ব্যানার-ফেস্টুন, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করছেন তারা।
আল্লামা আজহার আলী ফাউন্ডেশনের দায়িত্বশীলরা জানান, আমাদের আল জামিয়া ইমদাদিয়ার শিক্ষার্থীদের একটি স্বেচ্ছাসেবী দল জেলা শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া নরসুন্দা নদীসহ আশপাশ এলাকা পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা করছে। সেই সাথে হাসপাতালের বেওয়ারিশ লাশের দাফন কাফনও করছে। এছাড়াও অনেক মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা সড়কের নিরাপত্তার কাজে জড়িত রয়েছে। সেই সাথে রাত জেগে জেলা শহরের মন্দিরগুলো পালা করে পাহাড়ায় নিয়োজিত রয়েছে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সেনাবাহিনীর সদস্যদের পাহারায় কিশোরগঞ্জ মডেল থানা পরিষ্কার করেছে শিক্ষার্থীরা। সোমবার (১২ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এই পরিষ্কার কার্যক্রম শুরু করেন। এ সময় থানাকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে তারা।
পরিচ্ছন্ন কাজে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, এখানে যারা কাজ করেছে আমরা সকলেই স্টুডেন্ট। আমরা স্বেচ্ছায় এই কাজ করেছি। এর আগের দিন জেলা শহর পরিষ্কার করেছিলাম। এখানে এসে আমরা দেখেছি, ধুলা ময়লা ও গ্লাস ভাঙা এতে আমরা কয়েকজন আহত হয়েছি। কারো হাত কেটেছে, কারো পা কেটেছে। তবুও আমরা থেমে নেই। আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
বিশিষ্ট ক্যালিওগ্রাফি শিল্পী আবদুল হালিম ও হাসিবুল হাসান বলেন, আজ সকাল থেকেই আমরা কিশোরগঞ্জ রেল স্টেশনের বিভিন্ন দেয়ালে ইসলামীক ও স্বদেশপ্রেমের নানা চিত্র অঙ্কন করে যাচ্ছি। এসব দেয়াল লিখনীতে দেখা গেছে “আপনার প্রিয় সন্তানকে ঈমানি চেতনা ও দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করুন” লিখাসহ নানা ধরনের দেশপ্রেমের চিত্র এঁকেছেন তারা।