ছোটবেলা থেকে জিহাদুল ইসলাম জিহাদ স্বপ্ন দেখেছিলো পড়াশুনা শেষ করে দেশ সেবায় পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করবে। কিন্তু সেই পুলিশের গুলিতেই প্রাণ হারাতে হয়েছে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় পাস করা জিহাদের।
দাফনের পাঁচদিন পেরিয়ে গেলেও আদরের ছোট সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় তার বাবা ও মা। কোনোভাবেই যেন তারা নিজেদের শান্তনা দিতে পারছেন না। গত ২০ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছিলো জিহাদ। ৫ আগস্ট সকালে সরকার পতনের এক দফা দাবির মিছিলেও অংশগ্রহণ করেছিলো। সরকার পতনের মাত্র কয়েকঘন্টা আগে বেলা ১১টার দিকে যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের গুলিতে শহীদ হয় জিহাদুল ইসলাম জিহাদ।
জিহাদ জেলার মুলাদী উপজেলার কাজিরচর ইউনিয়নের দক্ষিণ কাজিরচর গ্রামের মোশাররফ হোসেন পাইকের ছেলে। নিহতের বাবা রোববার সকালে জানান, তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিল জিহাদুল ইসলাম জিহাদ। সে ঢাকার কাজলার কুতুবখালী উচ্চবিদ্যালয় থেকে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেছে। তিনি আরও জানান, ৫ আগস্ট সরকার পতনের কয়েক ঘণ্টা আগে যাত্রাবাড়ী থানায় ভারতীয় পুলিশ আছে এমন গুজবে কিছু আন্দোলনকারী থানা ঘেরাও করতে যায়। ওইসময় পুলিশের গুলিতে আহত হয় জিহাদ। পরে তাকে দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জিহাদকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরেরদিন (৬ আগস্ট) মুলাদীর দক্ষিণ কাজিরচর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে জিহাদকে দাফন করা হয়।
নিহত জিহাদের বড় ভাই রিয়াদ হোসেন বলেন, পড়ালেখা করে পুলিশ অফিসার হতে চেয়েছিল জিহাদ। আর সেই পুলিশের গুলিতেই জিহাদকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। নিহতের মামা রফিকুল ইসলাম ঢালী জানান, ছোট সময় থেকে অনেকটা প্রতিবাদী ছিলো জিহাদ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হওয়ার পর বন্ধুদের সাথে জিহাদ যোগ দেয়।
রাকিব হোসেন রাজিব ॥ অপরদিকে সরকার পতনের কয়েকঘণ্টা আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় আকস্মিক গুলিতে নিহত হয়েছে জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার মানিককাঠি গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেনের ছেলে রাকিব হোসেন রাজিব। রাজিবের সহপাঠী হাসানুল বান্না জানান, রাকিবসহ তারা তিন বন্ধু শুরু থেকেই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। রাকিব ছিল যেমন মেধাবী তেমনই সাহসী। সবসময় মিছিলের সামনের সারিতে থাকতে পছন্দ করতো। সে রাজনীতি করতো না। তবে প্রায়ই বলত, এই দুঃশাসন থেকে হয় স্বাধীন হবো, নতুবা শহীদ হবো। নিহত রাজিব বাবুগঞ্জের খানপুরা আলিম মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করার পর বরিশালের ইনফ্রা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ডিপ্লোমা শেষে বিএসসির জন্য ভর্তি হন সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটিতে। ওই ইউনিভার্সিটির টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দশম ব্যাচের ছাত্র রাকিব হোসেন রাজিব। নিহত রাকিবের বড় ভাই আবুল কালাম জানান, পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে রাকিবের শরীরে দুইটি গুলিবিদ্ধ হয়। দুইটি গুলিই তার পেটে বিদ্ধ হয়। এরমধ্যে তলপেটের গুলিটি শরীর ভেদ করে বেরিয়ে যায়। গত ৬ আগস্ট মানিককাঠি গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে নিহত রাকিবের লাশ দাফন করা হয়েছে।