শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর আনন্দে উত্তাল সমগ্র সরাইল। চারিদেকে বিজয় মিছিলের ¯্রােত। মূহুর্মূহু ফটকার বিকট শব্দ। রং ছিটিয়ে আনন্দে মাতোয়ারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বিএনপি অঙ্গসংগঠন ও সমমনা দলের নেতা কর্মীরা। গতকাল সরাইল সদরে সহ¯্রাধিক নারী পুরূষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছে আনন্দ মিছিল। এর আগে গত সোমবার বেলা ২টার পর মাথায় লাল কাপড় বেঁধে লাঠিসোটা হাতে রাস্তায় নেমে পড়ে হাজার হাজার বিক্ষুদ্ধ লোকজন। তারা আনন্দের পাশাপাশি হামলা অগ্নিসংযোগ ভাংচুর ও লুটপাটে জড়িয়ে পড়ে। উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া বেগম, যুবলীগ নেতা শাহ মো. কাইয়ুম ও ছাত্রলীগ নেতা ইশতিয়াক আহমেদ বাপ্পির বাসভবন হামলার শিকার হয়েছেন। আন্দোলনকারীদের রোষানলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কয়েকজন ব্যবসায়িও।
সরজমিন অনুসন্ধান, স্থানীয় সূত্র ও ভুক্তভোগিরা জানায়, বাংলাদেশের ১৬ বছরের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছাত্র আন্দোলনের মুখে গতকাল ৫ আগস্ট সোমবার পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তাই দেশ স্বাধীনের ঘোষণা দিয়ে আনন্দের ভাসতে থাকে সরাইল। উপজেলার স্থানীয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বিএনপি ও সমমনা দলের নেতা কর্মীরা মঙ্গলবার সরাইল সদরে রং খেলায় মত্ত হয়। মিছিলে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে সরাইলের গ্রামগঞ্জ অলিগলি। নতুন এক উদ্দীপনায় মেতে ওঠেন তারা। এর গত সোমবার বিকাল ৩টার দিকে হাজার হাজার বিক্ষুদ্ধ নারী পুরূষ আনন্দ মিছিল করে হামলা চালায় কালিকচ্ছের বাঘবাড়ি এলাকায় উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, টানা দ্বিতীয়বার নির্বাচিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া বেগমের বাসভবনে। দুইতলা ভবনের নীচের ৮টি কক্ষে এক সাথে অগ্নিসংযোগ করে। পরক্ষনেই ভাংচুর আর লুটপাটে মেতে ওঠে বিক্ষুদ্ধ লোকজন। স্থানীয় কয়েক জনের নেতৃত্বে সকল আলমিয়ার তালা ভেঙ্গে ৫২ ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকা, কাপড়ছোপড় আসবাবপত্র, পানির পাম্প, কয়েকটি ফ্রিজ, চাউল সহ প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের মালামাল লুটে নেয়। পাঁচটি এসি’র আউটডোর মেশিন ভেঙ্গে বিকল করে দেয়। ঘন্টা ব্যাপি তান্ডবে আতঙ্কে বাকরূদ্ধ হয়ে পড়েন পরিবারের সকল সদস্য। ভাংচুর থেকে রেহায় পায়নি জানালার গ্লাসও। যাওয়ার সময় ওঁর মেয়ের জামাতার বাড়িতেও হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। একই দিন সরাইল সদরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স স¤্রাট ফার্ণিশার্সে হামলা চালিয়ে ডিজিটাল সাইনবোর্ডটি ভেঙ্গে ফেলে তারা। বিমিল্লাহ ইলেকট্রনিক্সে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিষ্ঠানের মালি মো. আশরাফ বলেন, আমার প্রায় অর্ধলক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়ে গেল। পথে বসে ছাড়া কোন উপায় নেই। হাসপাতাল মোড়ের মিছিল থেকে সরাইল-নাসিরনগর সড়কের পাশে বড্ডাপাড়া এলাকায় মৃধা ফয়সাল আহমেদ দুলালের তিনতলা ভবনে হামলা চালায়। তারা ভবনের গ্লাস ভাঙ্গার পাশাপাশি ওই ভবনের ভাড়াটিয়া দৈনিক প্রথম আলোর সরাইল প্রতিনিধি মোহাম্মদ বদর উদ্দিনের মোটরবাইকটি পুঁড়িয়ে দেয়। সদরের নিজসরাইল গ্রামে প্রবেশ করে বিক্ষুদ্ধ লোকজন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ বাপ্পির বাসভবন ভাংচুর করে। বিকেল ৪টার দিকে শাহবাজপুর ইউপি আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি শাহ মো. কাইয়ুমের বাসভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। চুন্টা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অফিস ও ‘মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ড’ নামের অফিসটিও ভাংচুর করা হয়েছে। রোকেয়া বেগম বলেন, আমার বাসভবনে এভাবে আগুন দিবে লুটপাট করবে কল্পনাও করিনি। শুধু রাজনীতি নয় এর সাথে স্থানীয় কিছু লোকের হিংসা ও ইন্ধন রয়েছে। দেড় কোটি টাকার মালামাল নিয়ে আমাকে নি:স্ব করা হয়েছে।