রাজশাহীতে লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে পুকুর ও জলাশয় ভরাট কর্মযজ্ঞ। বিপরীতে গড়ে উঠেছে কংক্রিটের ভবন। গত ৫৯ বছরে রাজশাহীর জলাশয়ের প্রায় ৯৭ দশমিক ১৬ শতাংশ দখল ও ভরাট হয়েছে। ফলে ৯৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মহানগরীতে এখন অবশিষ্ট জলাভূমি রয়েছে ২.৮৪ শতাংশ। রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দাখিল করা তালিকা অনুযায়ী ৯৫২টি পুকুর সংরক্ষণ ও পুকুরগুলো যাতে প্রকৃত অবস্থায় থাকে তাও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে উচ্চ আদালতের এক আদেশে। আর সেই আদেশ বাস্তবায়নের জন্য উচ্চ আদালতের দেয়া ৫ দফা নির্দেশনা রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, রাজশাহীর জেলা প্রশাসক, র্যাব ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে দেওয়া হয়েছে। তারপরেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো অজ্ঞাত কারণে নির্বিকার ভুমিকায় রয়েছে বলে দাবি নগরবাসী ও বিভিন্ন সেচ্ছসেবক সংগঠনের।
যার প্রেক্ষিতে রাজশাহী মহানগরীর চন্দ্রিমা থানাধীন ছোটবনগ্রাম এলাকায় চলমান পুকুর ভরাট বন্ধপুর্বক তা পুনরুদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন রাজশাহীর উন্নয়ন গবেষনাধর্মী যুব সংগঠন ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস তরুণরা। এ দাবিতে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) মেয়র (প্রতিমন্ত্রী) এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, জেলা প্রশাসক (ডিসি) শামীম আহমেদ, পুলিশ কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদারকে পৃৃথক স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। পুকুর ভরাটের স্থিরচিত্র ও স্মারকলিপির স্বপক্ষে সংহতি প্রকাশপত্রও সংযুক্ত করে সোমবার (২৯ জুলাই) দুপুরে সংগঠনটির পক্ষ থেকে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
স্মারকলিপি প্রদানকালে অন্যান্যের মধ্যে ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস’র সভাপতি মো. শামীউল আলীম শাওন ও সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আতিক, আদিবাসী যুব পরিষদ রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি উপেন রবিদাস, দূর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা’র আহ্বায়ক রাকিন আবসার অর্ণব, উন্নয়নকর্মী তহুরা খাতুন লিলি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
স্মারকলিপির পৃথক কপি রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ)’র চেয়ারম্যান মো. জিয়াউল হক, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদ ও উপপরিচালক মাহমুদা পারভীন, র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৫)’র অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মুনীম ফেরদৌসকে ডাক যোগে রেজিস্ট্রি করে প্রেরণ করা হয়েছে।
স্বারকলিপিতে বলা হয়েছে- বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদ এ বলা আছে, ‘রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিকসম্পদ, জীব-বৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্য প্রাণির সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন’। আর প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুযায়ী কোনো পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ভরাট করা বেআইনি। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ২০১০ এর ৬ (ঙ) ধারায় বলা আছে যে, ‘জলাধার সম্পর্কিত বাধা-নিষেধ: আপাতত বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, জলাধার হিসাবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট বা অন্য কোনভাবে শ্রেণী পরিবর্তন করা যাইবেনা: তবে শর্ত থাকে যে, অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থে অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহণক্রমে জলাধার সম্পর্কিত বাধা-নিষেধ শিথিল করা যাইতে পারে’।
স্বারকলিপিতে অভিযোগ করে বলা হয়েছে যে, গত ২৮ জুলাই বিকালে সংগঠনের প্রতিনিধি দল সরেজমিনে গিয়ে দেখেছে যে, বর্তমানে চলমান কারফিউ’র মধ্যেই রাজশাহী মহানগরীর ছোটবনগ্রাম প্রফেসর পাড়া এলাকায় ছোটবনগ্রাম বালিকা উচ্চবিদ্যালয় সংলগ্ন স্কুল মোড়ে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের উত্তরে অবস্থিত পুকুর জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে। স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, এটা বড় আকারের পুকুর ছিল। গত ১০/১৫ দিনে অল্প অল্প করে এ পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে। পরিদর্শনকালে দেখা যায় যে, পুকুরটির প্রায় ৯০ শতাংশ ভরাট করা হয়েছে। আর ভরাটের কাজ চলমান রয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে আরো জানা গেছে যে, পুকুরটি ভরাট করে উচ্চ মূল্যে প্লট আকারে বিক্রি করা হবে। তাই অবিলম্বে ছোটবনগ্রাম প্রফেসর পাড়া এলাকায় চলমান এ পুকুর ভরাট বন্ধ ও তা পুনরুদ্ধার করার দাবি জানানো হয়েছে।
স্বারকলিপির দাবির পক্ষে সংহতি প্রকাশ করে অনুস্বাক্ষর প্রদান করেছেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)’র রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়ক তন্ময় কুমার সান্যাল, মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রাহক ওয়ালিউর রহমান বাবু, পরিবেশ আন্দোলন ঐক্য পরিষদ রাজশাহীর সদস্য সচিব নাজমুল হোসেন রাজু, সেভ দি ন্যাচার এ- লাইফ’র চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান মিজান, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সূভাষ চন্দ্র হেমব্রম, আদিবাসী যুব পরিষদ রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি উপেন রবিদাস, দূর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা’র আহ্বায়ক রাকিন আবসার অর্ণব, উন্নয়নকর্মী তহুরা খাতুন লিলি, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক নাদিম সিনা, গ্রীণ ভয়েস’র রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সমন্বয়ক আবদুর রহিম, সচ্ছলতা এসোসিয়েশন’র সভাপতি এহতেশামুল আলম, সাধারণ সম্পাদক সালমান ফার্সী, ভঙ্গী নৃত্য শিল্পালয়’র সাধারণ সম্পাদক মো. রবিন শেখ, রোটারি ক্লাব অব মেট্রোপলিটন রাজশাহীর ক্লাব ফাউন্ডেশন চেয়ার জুলফিকার আলী ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস’র নির্বাহী সদস্য ফারজানা নাজনীন মুন্নি ছাড়াও আরো অনেকে।