কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চলমান অস্থিরতার মধ্যে কারফিউ শিথিল করায় যান চলাচল স্বাভাবিক হলেও দ্রুতই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন না বরিশাল বিভাগের আন্তঃজেলা বাস মালিকরা। টানা পাঁচদিন ধরে বন্ধ ছিল বিভাগের ছয় জেলার মালিক সমিতির অধীনে পরিচালিত ৯৯৩টি এবং বিআরটিসির ৫৫টি মিলিয়ে মোট ১ হাজার ৪৮টি গাড়ি। এতে প্রায় পাঁচ কোটি টাকারও বেশি লোকসান হয়েছে।
বাস মালিক সমিতির নেতাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, নগরীর নথুল্লাবাদ ও রূপাতলী বাস মালিক সমিতির আওতায় ৩২০টি গাড়ি চলাচল করে। নথুল্লাবাদ বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দাস জানিয়েছেন, গত পাঁচদিন গাড়ি টার্মিনালের মধ্যেই ছিল। কোনো গাড়ি বের করার সুযোগ ছিলোনা। গাড়ির কোনো ক্ষতি না হলেও গাড়ি চালাতে না পারায় ব্যবসার মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।
রূপাতলী বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি সুলতান মাহমুদ বলেন, বাস না চলায় ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া স্টাফদের খরচ দিতে হয়েছে মালিকদেরই। কারফিউ শিথিল হওয়ার পর বুধবার থেকে গাড়ি চলাচল শুরু হলেও এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হওয়া যায়নি। এই দুই মালিক সমিতি থেকে দাবি করা হয়েছে, এখন পর্যন্ত তাদের দেড় কোটি টাকারও বেশি লোকসান হয়েছে। পিরোজপুর বাস মালিক সমিতির আওতায় ১৫০টি, ভোলা বাস মালিক সমিতির আওতায় ১৮৫টি, পটুয়াখালী বাস মালিক সমিতির আওতায় ১৪১টি, ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির আওতায় ১০৬টি এবং বরগুনা বাস মালিক সমিতির আওতায় ৭০টি গাড়ি চলাচল করে। পিরোজপুর বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রতন কুমার চক্রবর্তী বলেন, প্রতিটি গাড়িতে প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা আয় হয়। পাঁচদিনে কোনো টাকার মুখ দেখেনি বাস, শ্রমিক ও মালিকরা।
ভোলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, ভোলাতে সহিংস কোনো ঘটনা না ঘটলেও বাস মালিক সমিতি লোকসান গুনছে। এই কয়েকদিনে কোনো আয় না হলেও শ্রমিকদের খরচ বহন করতে হয়েছে। ট্রিপ বন্ধ থাকায় তাদের প্রায় ২০ লাখেরও বেশি টাকা লোকসান হয়েছে।
পটুয়াখালী জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির নির্বাহী সদস্য আশরাফ মিয়া বলেন, অস্থিরতা দেখেই আমরা নিরাপদে গাড়িগুলো টার্মিনালে রেখেছি। আসলে আমরা যে ক্ষতির মুখে আছি তা পুষিয়ে উঠতে সময় লাগবে। পাঁচদিনে কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে। ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতি থেকে জানানো হয়েছে, তাদেরও প্রায় ৩৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। অপরদিকে এখনো বিআরটিসি বরিশাল ডিপো থেকে যাত্রী পরিবহনে সবগুলো বাস সড়কে নামানো সম্ভব হয়নি। ডিপোর ব্যবস্থাপক জামিল হাসান জানিয়েছেন, বরিশাল ডিপোর অধীনে ৫৫টি গাড়ি চলাচল করে। গাড়িগুলোর মাধ্যমে প্রতিদিন আট লাখ ৮৬ হাজার টাকা আয় হতো। গত পাঁচদিনে গাড়ি সড়কে নামাতে না পারায় প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, বুধবার থেকে মাত্র ৩০টি গাড়ি সড়কে নামানো হয়েছে। কারফিউ শিথিলের সময়ে তা চলবে। এ ছাড়া বাকি বাস ডিপোতে থাকবে।