বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের খাদ্য সংকট নিরসন, পুষ্টি সমৃদ্ধ মেধাবী জাঁতি গঠনে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশের কারিগর তথা শিল্পী সৃষ্টির জন্য দেশের এক ইঞ্চি জমি ও অনাবাদি না রাখার নির্দেশনা প্রদান করেছেন। তাঁরই (প্রধানমন্ত্রীর) নির্দেশনা বাস্তবায়নে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কৃষি অধিদপ্তর গ্রাম, শহর এমনকি তৃণমূল পর্যায়ে কৃষি উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে কাজ করছে। তারই ধারাবাহিকতায় হাটহাজারীর তিন কৃষি উদ্যোক্তা এলাকায় দৃষ্টান্ত স্থাপন তথা প্রধান মন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে।
২০২০ সাল করোনার ভয়াবহতায় দেশ টালমাটাল। গৃহবন্দী দেশের প্রায় মানুষ। মানুষের আয় উপার্জন বন্ধ প্রায়। কিন্তু জীবন রক্ষার তাগিদে মানুষকে তো খেতে হবে। বসে থাকলেও ক্ষুধা নিবারণ করতে হবে। সরকারি বেসরকারি সমস্ত প্রতিষ্ঠান বন্ধ। মানুষ একপ্রকার বেকার জীবন যাপন করছে। এই করুন পরিস্থিতিতে হাটহাজারীর দুই সহোদর যথাক্রমে হাসান ফারুক লুভন যিনি পেশায় একজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী, মিজান ফারুক ইমন যিনি পেশায় ব্যবসায়ী। তারা করোনার কারণে প্রায় বেকার। তারা চিন্তা করলো এই ভাবে বেকার দিন যাপন করলে তো চলবে না। কিছু একটা করতে হবে। এই চিন্তা করতে গিয়ে তাদের মাথায় এল উপজেলার সর্ব উত্তরে তাদের ১০ একর পৈতৃক জমি একপ্রকার অনাবাদি পতিত পড়ে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা জমি অনাবাদি না রাখার বিষয়টি তাদের মাথায় আসল। যেই চিন্তা সেই কাজ। তারা করোনার এই সময়ে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করলো। উপজেলার করিত কর্মা কৃষি কর্মকতা কৃষিবিদ আল মামুন সিকদার তাদের কথা শুনে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে করোনাকালীন সময়ে ঝুঁকি নিয়ে কৃষি উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী দুই সহোদরকে আন্তরিক সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেন। কৃষি কর্মকতার সহযোগিতায় দুই ভাই উদালিয়া বড় বিল এলাকায় শুরু করল তাদের অভিযাত্রা। ছোট ভাইয়ের এই অভিযাত্রায় উৎসাহী হয়ে তাদের বড় ভাই অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী চিকিৎসক ওমর ফারুক লিটন ভাইদের সহযোগিতার জন্য আর্থিক বিনিয়োগ করতে এগিয়ে আসল।
বর্তমানে তাদের ১০ একর জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে তাদের বিশাল সমন্বিত কৃষি খামার। খামারে রয়েছে কাটিমন জাতের বারোমাসি আম, বারি-৪ জাতের আম, বল সুন্দরী ও কাশ্মিরি আপেল কুল, ড্রাগন ফ্রুটস, বারি মালটা, টপ লেডি এবং গ্রিন লেডি জাতের উচ্চ ফলনশীল পেঁপে, দেশী জাতের বাংলা কলা। বাগানের চার পাশ ঘিরে সিডলেস লেবু গাছ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে প্রাকৃতিক বেষ্টনী। যাতে বাহির থেকে গরু ছাগল এবং সাধারণ মানুষ বাগানে অবাধে প্রবেশ করতে না পারে। সৃষ্ট বাগানের সারিবদ্ধ গাছের ফাঁকে ফাঁকে সারা বছরই মৌসুমি শাক সবজির চাষ করে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি তারা এখানে স্থাপন করেছেন একটি দুগ্ধজাত খামার ও গরু মোটাতাজা করন প্রকল্প। তারা সেখান থেকে দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য বিক্রি করছেন নিয়মিত। এই বাগানে যেন কিছুই যেন ফেলনা নয়। গবাদি পশুর গোবর থেকে তারা করছেন কেঁচো সার। যা উন্নত জৈব সার। প্রকল্পে উৎপাদিত জৈব সার জমির উর্বরতা শক্তির বৃদ্ধির জন্য বাগানে ফসল উৎপাদনে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাছাড়া বাণিজ্যিক ভাবে ও বাজারজাত করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় রয়েছে দেশি মুরগির খামার। যে মুরগী গুলো প্রাকৃতিক উপায় বাগানে চড়ে কোন কৃত্রিম খাদ্য ছাড়া বড় হচ্ছে। বাগানে খাদ্য অন্মেস্বনে চড়ে বেড়ানো মুরগির বিস্টায় বাগানের জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কৃষি বিভাগের পরামর্শে প্রকল্পে প্রতিষ্ঠিত গরুর খামারের জন্য প্রকল্পের অভ্যন্তরে উৎপাদন করা হচ্ছে ভুট্টা, হাইব্রিড ঘাস ও উচ্চ ফলনশীল ধান। ভুট্টা থেকে তৈরি হচ্ছে সাইলেজ আবার ধানের খড় ব্যবহার করা হচ্ছে গরুর খাদ্য হিসেবে। বাগানে সরিষার চাষ করে ও উদ্যোক্তারা পেয়েছে ব্যাপক সফলতা। উৎপাদিত সরিষা মিলিং করে তৈল উৎপাদন ছাড়া ও সরিষার খৈল উৎকৃষ্ট জৈব সার এবং গরুর খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এখানে পরিবেশবান্ধব প্রকল্প হিসাবে পুরা খামার জুড়ে উদ্যোক্তারা স্থাপন করা হয়েছে সৌর বিদ্যুৎ। সম্পূর্ণ বাগান জুড়ে উদ্যোক্তারা ব্যবহার করছেন শ্রমিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য যান্ত্রিক কৃষি সরঞ্জাম ও আধুনিক প্রযুক্তি। যা একই সময় তাদের সময় ও অর্থ সাশ্রয় করছে। তাছাড়া প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার মিটার বাড়িদ সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে বিস্তীর্ণ ভূমিতে নিশ্চিত করা হয়েছে বছরব্যাপী কৃষি উৎপাদন। কাপ এগ্রো নামের তিন সহোদরের এই খামার ইকো এগ্রো রিসোর্ট এর আদলে গড়ে তোলা হয়েছে। উদ্যোক্তাদের এই আধুনিক বাগান পরিদর্শন করতে প্রতিনিয়ত অনেক লোকজনের সমাগম ঘটে বাগানে। তারা চিন্তার বাইরে গিয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসাবে আশেপাশের এলাকার কৃষকদের উন্নয়নে উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় প্রধান মন্ত্রীর ঘোষণার স্মার্ট কৃষির জন্য উদ্যোক্তাদের এই প্রয়াস বলে তারা উল্লেখ করেন। কৃষিজাত পণ্যকে নিরাপদ খাদ্য হিসেবে আন্তর্জাতিক ভাবে বাজার জাত করার ও তাদের পরিকল্পনা রয়েছে বলে তারা জানান। তাদের দেখ দেখায় দেশের শিক্ষিত বেকার যুবক এই কাজে এগিয়ে আসলে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবে। এতে করে বেকারত্ব দূরীকরণ হবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত হবে।