লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে সম্প্রতি জাতীয় সংসদ এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ দলের অন্যান্যরা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিলেন। সেই বিভক্ত রেখেই নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক এই সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম বর্ণাঢ্য প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ‘প্লাটিনাম জয়ন্তী’ পৃথক ভাবে পালিত হয়েছে।
গত কয়েক মাসের বিরোধ ঠিকই দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচীতে এসে যেনো ফের প্রকাশ্যে আসলো। সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ মুরাদ আর সাধারন সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ নিজ নিজ অনুসারিদের নিয়ে পৃথকভাবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালন করেন।
এ উপলক্ষে রোববার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদের নেতৃত্বে উপজেলা সদর আলেকজান্ডার মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে বঙ্গবন্ধু প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। উপজেলা সদর আলেকজান্ডারে বাজারে আনন্দ শোভাযাত্রা শেষে সন্ধ্যায় পৌরসভা মাঠে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন নাহার লাইলি উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি ছিলেন না।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কাশেম নিজামের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, রামগতি পৌরসভার মেয়র এম মেজবাহ উদ্দিন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ইস্কন্দার মির্জা শামীম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ড. আশ্রাফ আলী চৌধুরী সারুসহ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
অন্যদিকে একই দিন বিকেলে সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুন এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ মুরাদের নেতৃত্বে উপজেলার সদর আলেকজান্ডার বাজারে র্যালী, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং কেক কেটে আরেকটি কর্মসূচি পালন করা হয়। পরে আলেকজান্ডার সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মিলনায়তনে সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে সভা শেষ করেন।
জানা যায়, সম্প্রতি অনষ্ঠিত জাতীয় সংসদ এবং উপজেলা পরিষদ নির্বচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ দলের অন্যান্যের মধ্যে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এতে দেখা যায় জাতীয় সংসদ নির্বচনে এ আসনে নৌকা প্রতীক পান চৌদ্দ দলীয় জোটের শরীক জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি মোশাররফ হোসেন। ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন সাবেক সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. আবদুল্যাহ আল মামুন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ মুরাদ, সহসভাপতি ড. আশ্রাফ আলী সারু এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাসহ যুবলীগ ছাত্রলীগের অসংখ্য নেতা কর্মী নৌকার পক্ষে ভোট না করে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল্যাহর পক্ষে ভোট করেন।
অপর দিকে সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ, পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক এম মেজবাহ উদ্দিনসহ দলের কিছু ইউপি চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতা কর্মী ভোট করেন নৌকার পক্ষে। ভোটে বড় ব্যবধানে নৌকাকে হারিয়ে বিজয়ী হন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবদুল্যাহ আল মামুন। পরবর্তীতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এ বিভক্তি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠে।
পৃথক পৃথক ব্যানারে আয়োজিত কর্মসূচি পালন করায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে মনে করেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।