ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার ঈদ যাত্রীরা ঢাকা থেকে এসে দোহার উপজেলা পদ্মা নদীর চর মৈনট ঘাট দিয়ে নাড়ের টানে বাড়ী ফিরছেন। পবিত্র ঈদুল আযহার মাত্র একদিন সামনে রেখে রোববার ওই ঘাটে ঘরমুখো যাত্রীদের ঢল নেমেছে। আর এ সুযোগে ওই ঘাটের যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে গলাকাটা ভাড়া। স্পিডবোটে প্রতি যাত্রীর কাছ থেকে ১৫০ টাকা ভাড়ার স্থলে রাখা হয়েছে ২৫০ টাকা এবং জনপ্রতি লঞ্চযাত্রীর কাছ থেকে ৭০ টাকার স্থলে রাখা হচ্ছে ১০০ টাকা। এ ছাড়া ওই ঘাটের প্রতিটি স্পিডবোটে ১২ জন যাত্রী নেওয়ার নিয়ম থাকলেও বোঝাই করা হচ্ছে ২০জন যাত্রী এবং নি¤œমানের আনফিট লঞ্চগুলোতে ১০০ জন যাত্রী ধারন ক্ষমতা থাকলেও বোঝাই করা হচ্ছে ৩০০/৩৫০ জন যাত্রী। কোনো লঞ্চে পর্যাপ্ত পরিমান বয়া এবং স্পিটবোট যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই পারাপার হচ্ছে পদ্মা নদী।
জানা যায়, পদ্মা নদীর চর মৈনট ঘাটটি নিয়ন্ত্রন করছেন দোহার উপজেলা প্রশাসন এবং নদীর অপর পারের গোপালপুর ঘাটটি নিয়ন্ত্রন করছেন চরভদ্রাসন প্রশাসন। দেশে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে ঘাট দুটির খাজনা সরকারি খাস কালেকশন হয়ে আসছিল। এ বছর পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে চর মৈনট ঘাটটি দোহার উপজেলা প্রশানকে ম্যানেজ করে স্থানীয় ক’য়েকজন ব্যাবসায়ী সাব-লীজ নিয়েছেন। তাই কিছুদিন ধরে চর মৈনট ঘাটটি ওই এলাকার আবুল কাশেম মেম্বার (৫০), আজিজ মাষ্টার (৫৫) ও বাসার মুন্সি (৪৬) নিয়ন্ত্র করে চলেছেন। এসব অসাধু ব্যাবসায়ীরা নৌরুটের বিধি বিধান অমান্য করে যাত্রী প্রতি গলাকাটা ভাড়া আদায় করে চলেছেন।
রোববার ওই ঘাটের এক সাব-লিজ গ্রহিতা আবুল কাশেম মেম্বারকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি প্রতিবেদককে জানান, “সকালে যাত্রীদের অনুরোধে ২৫০ টাকা করে ভাড়া কেটে মাত্র ৮/১০ খানা স্পিটবোট ছাড়া হয়েছিল। পরবর্তিতে আমরা যাত্রী প্রতি ২০০ টাকা করে ভাড়া আদায় করে চলেছি”।
আর এ ব্যপারে দোহার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জাকির হোসেনকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,“ বিষয়টি আমার নোলেজে নাই, তবে কে বা কারা স্পিটবোট যাত্রী প্রতি ২৫০ টাকা করে ভাড়া নিচ্ছে তা আমি দেখতেছি”।
উপজেলা পদ্মা নদীর গোপালপুর ও মৈনট ঘাট দু’টি সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, প্রতিটি ঘাট পয়েন্টে ষ্পীডবোট ও লঞ্চ ষ্টেশন পাশাপাশি রয়েছে। উপজেলার গোপালপুর ঘাটির খাজনা চরভদ্রাসন প্রশাসন নিয়মিত খাস কালেশন করে চলেছে। কিন্তু চর মৈনট ঘাটে স্থানীয় কিছু ধর্ণাঢ্যরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সাব-লিজ নেওয়ার নাম করে বছর জুড়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রনে রেখে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় সহ স্বেচ্ছাচারীতায় মেতে রয়েছে। তারা বিধি বিধান অমান্য করে দেশের বিভিন্ন নৌরুটের আনফিট ও বাতিলকৃত লঞ্চ এনে গোপালপুর ও চর মৈনট ঘাটের যাত্রী পারাপারে ব্যাবহার করছে। ফলে যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া গচ্ছা দেওয়া সহ চরম ঝুঁকির মধ্যে থেকে পারাপার হচ্ছেন পদ্মা নদী।
ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের মধ্যে উপজেলা বিএস ডাঙ্গী গ্রামের এক যাত্রী মুক্তা আক্তার জানায়, “তিনি রাজধানী ঢাকায় চাকুরী করেন। রোববার সকালে মৈনট ঘাটে কয়েকজন স্থানীয় প্রভাবশালীরা যাত্রী প্রতি ২৫০ টাকা করে ভাড়া আগে নিয়ে পরে স্পিটবোটে উঠার সুযোগ দিয়েছেন এবং শিশু যাত্রীদের জনপ্রতি একই ভাড়া রাখা হয়েছে বলেও তিনি জানান”।