রাস্তার পাশে বেড়ে ওঠা গাছ, লতা-পাতা আর বাজার থেকে কিনে আনা গাজর, পেয়ারা, করলাসহ প্রায় ৪০ প্রকার লতা, পাতা, গাছের ছালের এক ঔষধি ভান্ডার গড়ে তুলছেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আতাউর রহমান। যেসব গাছপালা, লতাপাতা এতোদিন অবহেলা আর অনাদরে পড়ে থাকতো, আতাউরের কাছে সেইসব এখন খাঁটি সোনা। বাড়ির আশপাশে থাকা জঙ্গল আর জমিতে আগাছা ‘কাউন-শিশা’ আতাউরে কাছে মুল্যবান সম্পদ। এসব লতাপাতা আর গাছে ছাল, শিকড় শুকিয়ে বিক্রি করে প্রতি মাসে আয় করছেন ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। আতাউর রহমান রংপুরের পীরগাছা উপজেলার সদর ইউনিয়নের অনন্তরাম উচাপাড়া রেলগেট এলাকার বাসিন্দা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আতাউরের ঘরে কোনা, বারান্দাসহ সব খানেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে গাছের লতাপাতা। বাড়ির উঠানে আর রেল লাইনের ধারে শুকানো হচ্ছে গাছের পাতা। আতাউর রহমান ও তার স্ত্রী জাহানারা বেগম এ নিয়ে ব্যস্ত। গাছের পাতা রোদে শুকানো, পাতা সংগ্রহ, শুকানো লতাপাতা বাছাই, কোনটা আবার পুড়িয়ে ছাই করা হচ্ছে।
সংগ্রহে যতসব লতাপাতা: আতাউরের ভান্ডারে রয়েছে, জমিতে পড়ে থাকা আগাছা কাউন শিশার, ডাল-পাতা, রাস্তার ধারে পড়ে থাকা ভার্টির পাতা, শিকড় ও ডাল, ফ্রেস আমের পাতা, তেজ পাতা, নিম পাতা, সজনে পাতা, মাল্টা পাতা, পেয়ারা পাতা, বাসক পাতা, পিপুল পাতা, তেলা কচুপাতা, লতা ও পানপাতা। আরো রয়েছে, পেয়ারা, তেলাকচু ফল, গাজর, করলা, বিচি কলা, ফেলনা কলার মোর্চা ও সুপারী। ডালের মধ্যে রয়েছে, নিমের ডাল, অর্জুনের ছাল, পিতরাজ গাছের ছাল, চই, জামের পাতা, জামের বিচিসহ প্রায় ৪০ প্রকার লতাপাতা।
এ ব্যাপারে কি বলেন, আতাউরের স্ত্রী জাহানারা বেগম, এসব ডালপালার মধ্যে অনেকগুলো ফেলনা জিনিস। যা আগে কেউ কোন কাজে লাগায়নি। এখন এসব বিক্রি করে টাকা আয় করছেন এলাকার কিছু মানুষ। আশেপাশের প্রায় ২০ জন ব্যক্তি প্রতিদিন এসব সংগ্রহ করে আমাদের নিকট বিক্রি করেন। আমরা কিনে নিয়ে রোদে শুকাই। তারপর সুপারী, নিমের ডাল, তেজপাতা, নিমের পাতা, পেয়ারা পুড়িয়ে ছাই করা হয়। এসব ছাই ৮০০ টাকা কেজি দরে ঢাকায় বিক্রি করি।
গ্রামবাসী রিপন মিয়া, আজাদ মিয়া বলেন, গত দুই বছর থেকে আতাউর এসব গাছের ডালপালা, করলা, গাজর, বিচি কলা কিনে কেটে রোদে শুকাচ্ছে। আগে আমরা তাকে পাগল বললেও তিনি একজন উদ্যোক্তা। ফেলনা লতাপাতাই এখন মূল্যবান সম্পদ। প্রতি মাসে তিনি এসব পিকাপ ভ্যান কিংবা অটো ভ্যানে নিয়ে কুরিয়ারের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠান।
আতাউর রহমান বলেন, ১১ মন গাজর কিনে আনার পর কেটে শুকিয়ে ৪২ কেজি হয়েছে। ৪২ কেজি করলা শুকালে ৩ কেজি হয়। ৫ হাজার বিড়া পান শুকিয়ে ৩ কেজি হয়। এসবের মধ্যে কিছু পুড়িয়ে ছাই করা হয়। বাকি গুলো শুকনা হিসেবে বিক্রি করা হয়। দুই বছর আগে আমি গাছের লতা-পাতা কেনা শুরু করলে অনেকে আমাকে পাগল বলতো। এখন অনেকেই আমার কাছে এসব ডালপালা বিক্রি করছেন। প্রতি মাসে আমি ৭ থেকে ১০ মন শুকনো লতাপাতা বিক্রি করি। এতে আমার মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় হয়।
কারা কেনেন এসব লতাপাতা: আতাউর রহমানের একমাত্র ছেলে মমিনুল ইসলাম ডাক্তার। অর্কেড ল্যাবরেটরীজ (আয়ু) প্রা: লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত। তিনিই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসব গাছপালা ক্রয় করেন। সেই ভাবে অবসর থাকা তার পিতা এই ব্যবসায় জড়িত হয়ে পড়ছেন।
কি বলছে প্রশাসনের কর্মকর্তা: উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রকৃতির কোন কিছুই অপ্রয়োজনীয় নয়। সব ধরনের গাছপালা মানুষের উপকারে আসে। সেই হিসেবে আতাউর রহমান পীরগাছা উপজেলার একজন উদ্যোক্তা হিসেবে বেশ প্রশংসার দাবিদার।