রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে (রাবি) আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ২৩তম আন্তর্জাতিক গণিত সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মো. আবদুল ওয়াদুদ, এমপি বলেছেন, ‘বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানের প্রক্রিয়া মানুষকে আজ এই জায়গাতে নিয়ে এসেছে। আমরা নানা ঔপনিবেশিক ও রাজনৈতিক কারণে পিছিয়ে পড়েছি। কিন্তু আমাদের পূর্বপুরুষরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের অবদান রেখেছে। আর আমাদেরকে এই পথ দেখিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর নাম ধরে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সেই চেতনায় কাজ করে যাচ্ছেন। আর ড. শামসুজ্জোহা রক্ত দিয়ে আমাদের দেখিয়ে গেছেন শিক্ষক ও ছাত্ররা মিলে কি করতে পারে। আমাদের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা তাদের বিজ্ঞানকে প্রচার করছে এবং করবে। আর অঙ্ক জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে লাগে। জীবন যখন শুরু হয় তখন থেকে অঙ্ক শুরু এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অংকের হিসাব লাগে।’ বৃহস্পতিবার (১৬ মে) সকাল সাড়ে ৯টায় রাবির শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ সিনেট ভবনে আন্তর্জাতিক গণিত সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ গণিত সমিতি ও রাবি গণিত বিভাগ ‘দ্যা ল্যাঙ্গুয়েজ অব সায়েন্স’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে আয়োজিত সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপনাদের এই অংকের হিসাবটা আমাদের বাস্তব জীবনে মেলাতে চাই। আপনাদের অংক, জ্যামিতি আমরা মানুষের কল্যাণে কাজে লাগিয়ে একটি সমন্বিত ও বিদ্বেষহীন বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে মানুষ যা স্বপ্ন দেখবে নির্দ্বিধায় বাস্তবে সে তাই করবে। বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে না, অংকও পিছিয়ে থাকবে না। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান চর্চা মানুষকে আজ এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। রাজনৈতিক অনেক কারণে আমাদের দেশ যদিও বা একটু পিছিয়ে পড়েছে। তবে পিছিয়ে পড়লেও আমাদের গবেষক, শিক্ষক এবং ছাত্ররা গোটা পৃথিবীতে তাদের কর্মদক্ষতা প্রমাণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিভিন্ন সংকট মোকাবিলায় চরম সাহসীকতা প্রদর্শন করেছে যা আমাদের সকলের জন্য অনুকরণীয়। বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর রোল মডেল। কারণ, বাঙালি জাঁতি একটি অত্যন্ত শক্তিশালী, সাহসী এবং মেধাবী জাতি। এই জাতিকে আমরা অংক, বিজ্ঞান ও অর্থনীতি দিয়ে ধরে রাখতে চাই। এ সময় প্রতিমন্ত্রী কৃষি নির্ভর এই দেশে বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তা-ভাবনা থেকে নতুন নতুন উদ্ভাবনী জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে সকলকে আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম বক্তব্যে বলেন, বিজ্ঞানের অন্যতম স্তম্ভ হচ্ছে গণিত। এই বিষয়কে কেন্দ্র করে বিজ্ঞানের অন্যান্য বিষয়ও প্রভাবিত হয়। জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নয়নের এই যুগে গণিত অপরিহার্য। সম্মেলনে উপস্থাপিত প্রবন্ধসমূহ থেকে গণিত ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ে গবেষণার ধারা ও আগামীর করণীয় সম্পর্কে পথরেখা পাওয়া যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আর উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, বর্তমান বিশে^ জ্ঞান-বিজ্ঞানে উদ্ভাবন ও উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি হচ্ছে গণিত। গণিতই হচ্ছে মূল ধারার বিজ্ঞানের ‘দর্শন’। আমরা পদার্থবিজ্ঞান বা রসায়ন অথবা কম্পিউটার সায়েন্স যে বিষয়ের কথাই বলি না কেন তার ব্যাকরণ হচ্ছে গণিত। কাজেই মৌলিক বিজ্ঞানে দক্ষতা অর্জন করতে হলে আমাদের অবশ্যই গণিত জানতে হবে। এই সম্মেলন সেই লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের (রাবি) গণিত বিভাগের অধ্যাপক মো. জুলফিকার আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ গণিত সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. শহিদুল ইসলাম ও রাবি বিজ্ঞান অনুষদের অধিকর্তা অধ্যাপক নাসিমা আখতার। অনুষ্ঠানে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন, গণিত বিভাগের সভাপতি ও সম্মেলনের সচিব অধ্যাপক মো. আসাবুল হক।
সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি)- বোম্বে’র অধ্যাপক দীপঙ্কর চৌধুরী। তিনি ‘অ্যাপ্লাইড ম্যাথেমেটিক্স ইন সাসটেইনেবল আর্থকোয়েক রেজিস্টেন্ট ডিজাইন অব জিও-স্ট্রাকচার্স’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
সম্মেলনে ২০টি টেকনিক্যাল সেশনে প্রায় ১৩০টি গণিত ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ের গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপিত হবে। প্রথম দিন বৃহস্পতিবার ৯টি ও শুক্রবার ১১টি সেশন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। সম্মেলনে বাংলাদেশ ও বিদেশ থেকে প্রায় দুইশত জন গণিত ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষক, গবেষক ও পেশাজীবী অংশ নিচ্ছেন।