নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী) আসনে আওয়ামী লীগের নতুন মুখ সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্ত্তী সৌরেন। রোববার দলীয় মনোনয়নে তার নাম ঘোষণা করা হয়। সাবেক সিনিয়র সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্ত্তী সৌরেন ১৯৬১ সালে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার বালুভরা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ব্রজেন্দ্রনাথ চক্রবর্ত্তী একজন সমাজসেবক হিতৈষী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ১৯০৭ সালে তার পিতামহ রাজেন্দ্র-ব্রজকিশোরী উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। সেখান থেকে তিনি ১৯৭৬ সালে এসএসসি, ১৯৭৮ সালে নওগাঁ বিএমসি কলেজ থেকে এইচএসসি, ১৯৮১ সালে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় থেকে স্নাতক (সম্মান), ১৯৮২ সালে স্নাতকোত্তর ও ১৯৮৪ সালে এলএলবি পাশ করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি সহকারি কমিশনার ও ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে চাকরিতে যোগদান করেন। এরপর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উপজেলায় প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক, ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, পাট অধিদপ্তরের পরিচালক (উপসচিব), এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিব এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন। ২০১১ সালে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক থাকাকালে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে অষ্ট্রেলিয়ার পার্থে কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে ও জার্মানীর বার্লিনে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার সম্মেলনে অংশ নেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, অষ্ট্রেলিয়া, জাপান, ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক সম্মেলন, প্রশিক্ষণ ও সভা সেমিনারে অংশ নেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি বদলগাছীতে তার পিতার দান করা জমিতে কমিউনিটি ক্লিনিক, রাস্তাঘাট পাকাকরণ, বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান, বালুভরা ছোট যমুনা নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণ, বদলগাছী ও মহাদেবপুর উপজেলা কমপ্লেক্স নির্মাণ, ব্রিজ কার্লভার্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভবন নির্মাণ, শহীদ মিনার, মসজিদ, ঈদগাহ, মন্দির, মাদ্রাসা, লাইব্রেরি স্থাপন প্রভৃতি উন্নয়ন করেন। তার মা সবিতা চক্রবর্ত্তী স্বাধীনতা পূর্ব ও স্বাধীনতা উত্তর বদলগাছী থানা মহিলা আওয়মী লীগের নেত্রী ছিলেন। তার শ^শুড় বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ২০০৮ সালে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত নাটোর সদরের প্রয়াত এমপি শঙ্কর গোবিন্দ চৌধুরী। তার স্ত্রীর বড়বোন উমা চৌধুরী জলি বর্তমানে নাটোর পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। নওগাঁ-৩ আসনে সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্ত্তী সৌরেন নৌকার মনোনয়ন পাওয়ায় এলাকায় তার সমর্থকেরা তাৎক্ষণিক বিজয় মিছিল বের করেন এবং মিষ্টি বিতরণ করেন। তার কাছের লোক বলে পরিচিত জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও সদর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান ধলু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও রাইগাঁ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম মঞ্জু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, সফাপুর ইউনিয়ন আওয়মী লীগের নেতা অধ্যক্ষ ময়নুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার রাহেনুল হক লুসা প্রমুখ সন্তোষ প্রকাশ করে জানান, সৌরেন চক্রবর্ত্তীকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে এই আসনটি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেওয়া হবে এবং এলাকায় পজিটিভ রাজনীতির সূচনা করা হবে। এই আসনে ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কলস প্রতিক নিয়ে তদানিন্তন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চেরাগপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ¦ ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম আওয়ামী লীগের আগেরবার নির্বাচিত এমপি মরহুম ড. আকরাম হোসেন চৌধুরীকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন। পরে তাকে দলে ফিরিয়ে নেয়া হয় এবং ২০১৮ সালে নৌকা প্রতিক নিয়ে ছলিম উদ্দিন তরফদার আবার এমপি নির্বাচিত হন। কিন্তু এবার তার স্থলে সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্ত্তী সৌরেনকে নৌকার মনোনয়ন দেয়া হলো। এই আসনে এই দুজন ছাড়া আরও তিন জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এরা হলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব এনামুল কবির মঞ্জু, প্রয়াত এমপি আকরাম হোসেন চৌধুরীর স্ত্রী মাহফুজা আকরাম মায়া চৌধুরী ও বদলগাছী উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য প্রকৌশলী মাহবুবুল হক মান্নাফ শুভ। উল্লেখ্য, নওগাঁর ৬ টি আসনের মধ্যে এবার শুধুমাত্র এই আসনেই নতুন প্রার্থী দেয়া হলো।