চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে ঈদুল আজহার কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে পালন করা হয়েছে বত্রিশ হাজার চারশ ৬১টি। এরমধ্যে চাহিদা রয়েছে আটাশ হাজার সাতশ ৬৫টি পশুর। চাহিদার চেয়ে তিন হাজার ৯৬ টি বেশি কুরবানির পশু উদ্বুত্ত থাকছে বলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানিয়েছেন।
তাঁরা জানান, উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ৯৮০ জন খামারি রয়েছে। এ ছাড়া অনেকে বাড়িতে গরু ছাগল, ভেড়া মহিষ পালন করছেন। গোমস্তাপুর উপজেলায় কুরবানির জন্য একুশ হাজার আটশ ৭৮ টি গরু প্রস্তুত রয়েছে। এরমধ্যে ষাঁড় সাত হাজার নয়শ ৫৪ টি, বলদ ছয় হাজার সাতশ ৯৮টি ও গাভী সাত হাজার একশ ২৬ টি। মহিষ রয়েছে ৩৮ টি। এ ছাড়া ছাগল রয়েছে ছয় হাজার ৬৬টি ও ভেড়া তিন হাজার পাঁচশ ৮৯ টি। পশু পালনকারী এক হাজার ৬০ জনকে ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। ৬০ জন কসাইকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এ ছাড়া খামারীসহ পশুপালনকারীদের কৃমিনাশক ট্যাবলেট, ভ্যাকসিনসহ তদারকি করা হয় উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে। রাজু ডেইরি ফার্মের মালিক গোলাম মোত্তুজাা বলেন, তাঁর বাবা নুহু দীর্ঘদিন থেকে গরুর খামার করেন। বাবা ছেলে মিলে তাঁরা খামারে গরু পালন করে চলেছেন। বর্তমানে খামারে কুরবানির জন্য ২৪ টি গরু রয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে গরুগুলো চট্রগ্রামে নিয়ে যাবেন। ভারতীয় গরু না ঢুকলে ওই গরুগুলো বিক্রি করে ভাল লাভবান হবেন বলে তিনি মনে করছেন। তিনি জানান, উপজেলা প্রাণিসম্পদ ডাক্তাররা প্রায়ই খামারে এসে খোঁজখবর নিয়েছেন গরুগুলো উপযুক্ত করার জন্য।
কলকলিয়া গ্রামের সাবেদ আলী বলেন, তাঁর খামারে অর্ধশতাধিক গরু রয়েছে। কুরবানির জন্য প্রস্তুত রাখা গরুগুলো ঢাকা অথবা চট্রগ্রামে নিয়ে যাবেন। এবার গরুর খাবারের মূল্য ঊর্ধ্বগতি। খরচ এবার বেশি পড়েছে। তিনি প্রাকৃতিক খাবারের সঙ্গে গম ভূট্টা, আলু, খৈল, রাইসব্রানসহ অন্যান্য খাবার দিয়েছেন। ভাল দাম পাওয়া আশায় তিনি এই এলাকায় বিক্রি না করে ওই এলাকার হাটে নিয়ে যাচ্ছেন।
আরেক খামারী আন্টু মুঠোফোনে বলেন, তিনি ১৬ টি গরু ট্রাকে করে চট্রগ্রামে নিয়ে গেছেন। গরুর হাটে রয়েছেন। এখনও বেচাকেনা শুরু হয়নি। অনেকে গরু দেখে চলে যাচ্ছেন। তবে ঈদের কয়েকদিন আগে বেচাকেনা পুরোদমে শুরু হবে।
রহনপুর পৌর এলাকার বড়বাজারে অবস্থিত আশীর্বাদ ডেইরি খামারের কর্মচারী হ্নদয় সরকার বলেন, তাঁদের খামারে উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় জাতের গরু রয়েছে। তাঁর ওজন প্রায় তেরশ কেজি। নাম রাখা হয়েছে কালাবাবু। অনেকে কালাবাবুকে দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন খামারে। তাঁকে প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয়শ টাকার খাবার খেয়ে থাকে। নির্ধারিত ভাবে দাম না বলতে পারলেও তিনি জানান গরুর হাটে নিয়ে গিয়ে যেটা সর্বোচ্চ দাম হবে তাঁর কাছে বিক্রি করা হবে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কাওসার আলি বলেন, কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে পশু প্রস্তুত করা করা হয়েছে বত্রিশ হাজার চারশ ৬১টি। তবে চাহিদার চেয়ে বেশি প্রস্তুত রয়েছে। খামারগুলোর মালিকদের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ ছিল। প্রয়োজন হলেই তাঁরা ডাকতেন। খামারিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। বিভিন্ন সময় খামারীতে এসে তিনি সহ প্রাণিসম্পদের অন্যকর্মকর্তারা গরু উপযুক্ত করার জন্য দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এবার দশ থেকে বার হাজার গরু ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন স্থানের হাটে যাবে। রাস্তায় যাতে কোন অসুবিধা না হয় সেজন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে সুস্থ সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে। সেই প্রত্যয়নপত্র দেখালে রাস্তায় কেউ হয়রানি করবেন না বলে তিনি জানান। এবার এ অঞ্চল দিয়ে ভারতীয় গরু না আসায় খামারি ও ব্যবসায়ী ভাল গরুর দাম পাবেন বলে তিনি ধারণা করছেন।