নাটোরের লালপুরে তিন ফসলী জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খনন, ফুল ব্যবসায় বাঁধা ও মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও ইউএনও বরাবর স্মারক লিপি প্রদান করেছেন এলাকাবাসী।
মানববন্ধনে ভুক্তভোগীরা জানান, লালপুর উপজেলার ১নং লালপুর ও ২নং ঈশ্বরদী ইউনিয়নের নবীনগর, শিবনগর, উত্তর লালপুর, লালপুর বাজার, লালপুর কলেজ মোড় সহ গ্রামগুলোতে কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। এখানকার অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী। এই এলাকার প্রায় ৩শ বিঘা জমিতে মানুষ ফসল উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।
সম্প্রতি নাংলা মৌজার নবীনগর গ্রামে আবাদযোগ্য লিজকৃত জমিতে অনুমতি বিহীন একটি পুকুর খননের কাজ শুরু হয়। ঐ পুকুর খনন করলে এই এলাকার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়বে। ফলে জলমগ্ন হওয়ায় এসব জমিতে ফসল উৎপাদন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। এ কারণে এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগের সম্মুখীন হবে এবং অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
গত ১৭ মে বুধবার গভীর রাতে নাংলা মৌজায়-ফিরোজা বকুল শিল্পী গংদের মালিকানাধীন লিজকৃত জমিতে উপজেলার তিলকপুর গ্রামের জান্নাত আলীর ছেলে উজ্জ্বল পুকুর খনন শুরু করেন। ১৮ মে বৃহস্পতিবার বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে মোবাইল ফোনে জানানো হয়। লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে লিখিত এবং মোবাইলে জানানোর পর তিনি তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। প্রসাশনের আশ্বাস পেয়ে তারা এলাকায় ফিরে গেলে গত ১৯ মে শুক্রবার গভীর রাতে আবারো সেখানে পুকুর খনন শুরু হয়। গ্রামবাসী পুকুর খননের প্রতিবাদ জানিয়ে ফিরে আসেন। পরে পুকুর খননকারী ভেকু মেশিনটি কে বা কারা পুড়িয়ে দেয়। পুকুর খননকারী উজ্জ্বল হোসেন ভেকু মেশিন পোড়ানোর ঘটনায় গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে লালপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে কয়েক দিন যাবৎ গ্রামবাসী নিদ্রাহীন রাত কাটাচ্ছেন।
অপর দিকে এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রভাবশালীরা গত মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে লালপুর হলমোড় এলাকায় ফুল ব্যবসায়ী আবদুর শুকুর ও জাফরের ফুলের গাড়ী (সিএনজি) আটকে রাখেন। একপর্যায়ে জেলা পুলিশ, ইউএনও এবং থানা পুলিশে অবহিত করা হয়। পরে তারা গাড়ী ছেড়ে দেয়, কিন্তু নিদিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ায় গাড়ীতে থাকা সমস্ত ফুল বিক্রয় অনুপযোগী হয়ে পড়ে। যার বাজার মূল্য প্রায় ১০ লাখ টাকা বলে দাবী করেন ফুল ব্যবসায়ীরা।
এলাকাবাসী তিন ফসলী জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খনন, ফুল ব্যবসায় বাঁধা, হামলার হুমকি ও মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে এবং নষ্ট হয়ে যাওয়া ফুলের মূল্যের দাবীতে লালপুর- ঈশ্বরদী সড়কের নবীনগরে ও উপজেলা পরিষদ চত্বরে মানববন্ধন করেন। এ সময় তারা উপজেলা পরিষদ ভবনের সামনে বিক্রয় অনুপযোগী নষ্ট হয়ে যাওয়া ফুলের মালা ছিটিয়ে- ছড়িয়ে ফেলে প্রতিবাদ জানান। শেষে তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর স্মারক লিপি প্রদান করেন।
এসময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমা সুলতানা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইসহাক আলী তাদের আইনগত সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।