ছেলে হত্যার বিচারের আশায় থেকে ৫টি বছর পার হয়ে গেছে। উচ্চ আদালতের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নিজের বয়সও এখন মৃত্যুর সন্নিকটে। শেষ পর্যন্ত ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারবেন কিনা তা নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। এক একটা দিন যেন হাজার বছরের সমান। তবুও চেয়ে থাকা ছাড়া উপায়ও নেই।
কথাগুলো ঝিনাইদহের শৈলকুপার হাবিবপুর গ্রামের গুম হওয়া যুবক রিয়াজুল ইসলাম লিপটনের পিতা আবদুল খালেকের। ১ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে লিপটন ছিল সবার বড়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিও ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালের ৪ জানুয়ারী নিখোজ হয় লিপটন। এর মাঝে চলে গেছে পাঁচ পাঁচটি বছর। আজও লিপটন গুম ও হত্যার রহস্য উন্মোচন হয়নি। বর্তমান মামলাটি হাইকোর্টে স্থগিত আদেশে আছে। লিপটনের পিতা আবদুল খালেক জানান, লিপটনের সাথে উপজেলার পৌর এলাকার কাজীপাড়া গ্রামের মৃত কাজী আশরাফুল আলমের মেয়ে ভাঁটা মালিক শারমিন আক্তারে তানিয়ার ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। লিপটনের ট্রাক থাকায় আর তানিয়ার ভাটার ব্যবসা থাকায় তাদের মধ্যে পরিচয় গড়ে ওঠে। লিপটনের নামে ছিল ট্রাক এর মালিকানা আর তার নমিনি হয়েছিল শারমিন আক্তার তানিয়া। নিখোজ হওয়ার দিন লিপটনের বন্ধু বাবু মোটর সাইকেলযোগে পৌর এলাকার কাজীপাড়া ভাটায় নামিয়ে দিয়ে আসে। এরপর আর ফেরেনি লিপটন। লিপটনের বাবার দাবি,দু’টি ট্রাক আত্মসাৎ করার জন্যই তার ছেলেকে ভাটায় পুড়িয়ে মারা হয়েছে। লিপটনের বন্ধু উপজেলার কবিরপুর গ্রামের বাবু শেখ জানান, ঘটনার দিন আমি লিপটনের তার কথামতো মোটরসাইকেল যোগে রাত ৮টার দিকে তানিয়ার ইট ভাটায় নামিয়ে দিয়ে আসে। এরপর বাসায় ফিরে আসার সময় লিপটন তাকে বলেছিল কোথায় আছি কাউকে না জানাতে। অনেক খোজাখুজির পর তাকে পাওয়া না গেলে তার বাবা আমার কাছে লিপটন সম্পর্কে জানতে চাইলে চাইলে আমি ইট ভাটায় নামিয়ে দেওয়ার কখা বলি। সেদিন যখন লিপটনকে নিয়ে মোটর সাইকেলযোগে যাচ্ছিলাম তখন কয়েক বার তানিয়ার সাথে লিপটনের মোবাইলে কথা হয় এবং প্রতিবারই লিপটনকে ভাটায় একা একা যেতে বলে তানিয়া।
আব্দুল খালেক বলেন, লিপটন নিখোঁজ হওয়ার পর প্রথমে শৈলকুপা থানায় জিডি করা হয়।পরে খোঁজ নিয়ে বুঝতে পারলাম লিপটন আর এই দুনিয়ায় নেই। তখন আমি ভাঁটা মালিক তানিয়ার বিরুদ্ধে ঝিনাইদহ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পিটিশন মামলা দায়ের করি। এরপর আদালতের নির্দেশে পিবিআই মামলাটি তদন্ত করে। পিবিআই তদন্ত রিপোর্ট দেওয়ার পর আদালত জি আর মামলা হিসাবে নিতে শৈলকুপা থানা পুলিশকে নির্দেশ দেয়। সেই মোতাবেক শারমিন আক্তার তানিয়াকে প্রধান আসামি করে ৯ জনের বিরুদ্ধে শৈলকুপা থানায় মামলা রুজু হয়। এরপর জামিন নিতে গেলে তানিয়াকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয় ও ৩দিনের রিমান্ডে আনা হয়। ২৫ দিন জেল খাটার পর সে জামিনে মুক্তি পায়। মুক্তি পেয়ে সে হাইকোর্টে স্থগিত আদেশ চায়। বর্তমান মামলাটি হাই কোর্টে দীর্ঘদিন স্থগিত আদেশে রয়েছে। অনেকবার আমার আইনজীবী স্থগিত আদেশের বিরুদ্ধে শুনানী করেছে। একের পর এক আসামি সময় নিয়ে কালক্ষেপন করায় কোন সুরাহা হয়নি।
লিপটনের স্ত্রী রুকসী বেগম বলেন, ৫টি বছর পার হয়ে গেল এখনো কোন বিচার পেলাম না। তার দাবী লিপটন যদি জিবীত থাকে তাহলে ফেরত চাই আর যদি তাকে হত্যা করা হয় তাহলে তার বিচার চাই। তিনি মহামান্য হাইকোর্টের প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে অতিদ্রুত এর সুরাহা চান।
এবিষয়ে মামলার প্রধান আসামি শারমিন আক্তারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি। যার কারণে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এব্যাপারে শৈলকুপা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, শুনেছি মামলাটি উচ্চ আদালতে স্থগিত আদেশে আছে এর বেশী কিছু আমি জানি না।