প্রকৃতির পানিনির্ভর আমন মৌসুমে এবছর তেমন একটা বৃষ্টি হয়নি। ফলে কৃষকদের সসমগ্র মৌসুমের ধান ক্ষেতে সেচ দিয়েই চালাতে হয়েছে। ফলে এ বছরের আমনে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে কয়েকগুন। কিন্তু বছরটিতে আমন ক্ষেতে কীটপতঙ্গের আক্রমণ ছিলনা বললেই চলে। এখন বিলম্বে রোপনকৃত কিছু ক্ষেত বাদে প্রায় সব মাঠের বেশির ভাগ ধান কৃষকেরা ঘরে তুলে ফেলেছেন। প্রকৃতির কম বৃষ্টির মৌসুমে যেখানে ধানই হওয়ার কথা নয় সেখানে ফলন বেশ ভালো হয়েছে। বাজারে প্রথমদিকে দামও বেশ সন্তোষজনক ছিল। কিন্তু বিগত ৪/৫ দিনে হঠাৎ প্রতিমন ধানে কমপক্ষে ২’শ টাকা কমে গেছে। এতে কৃষকদের চিন্তা বেড়ে গেছে। তবে উচ্চ দামের গোখাদ্য বিছালী তাদের ভরসার দেওয়াল হিসেবে মনে
করছেন। কৃষকেরা বলছেন, এ বছর বীজ, সার, সেচ, শ্রমিকের পাওনাসহ যাবতীয় খরচ মেটানো বেশ কষ্টকর। তারা বলেন, প্রথম দিকে ধানের দামে খুশি ছিলেন। কিন্তু নতুন করে কমতে শুরু করেছে। স্থানীয় ধান ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিলাররা গত কয়দিন ধান কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এদিকে মিলাররা বলছেন, হঠাৎ ভারতীয় চাল বাজারে আসার কারণে চালের দাম কমে গেছে। যে কারণে ধানের দামেও প্রভাব পড়েছে। এমন অবস্থায় পাওনাদারের দায়দেনা মেটাতে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ বেড়ে যাচ্ছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসসূত্রে জানাগেছে, চলতি আমন মৌসুমে রোপনের মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল- ১৮ হাজার ৮’শ হেক্টোর। কিন্তু চাষ হয়েছে ১৮হাজার ৭’শ ৫০ হেক্টোর জমিতে। এরমধ্যে চিকন ও মোটা জাতীয় ধান রয়েছে। এ উপজেলার বিভিন্ন মাঠে চিকনের মধ্যে ব্রিধান-৮৭, ব্রিধান ৭৫,ব্রিধান ৫১, ব্রিধান ৪৯ এছাড়াও মোটা জাতীয় ধানের মধ্যে ব্রিধান ৯০,ব্রিধান ৯৩, ভ্রিধান-৯৪, ব্রিধান ৯৫, স্থানীয় জাত গুটিস্বর্ণা, বাবু স্বর্ণাসহ বিভিন্ন জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন মাঠে ঘুরে দেখা যায় মাঠভরা আমনের প্রায় বেশির ভাগই কৃষকেরা ঘরে তুলে ফেলেছেন। বাকি ক্ষেতের ধানও ঘরে তোলার তাড়াহুড়ো প্রস্তুতি চলছে। কেননা বিগত মৌসুমে প্রকৃতির বৈরি আবহাওয়ায় ক্ষেতের পাকা ধান ক্ষেতেই পঁচে গলে নষ্ট হয়েছিল। সে আশংঙ্কায় বাকি ক্ষেতের ধান ঘরে তুলতে তারা রাতদিন চেষ্টা চালাচ্ছেন। ধানের জন্য তাদে দৃষ্টি এখন আকাশের দিকে।
ফলে রোপনকৃত আমনের একটু উঁচু ও সেচের আওতার বাইরের ক্ষেতগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এ জমিগুলোতে পরে অন্য ফসল চাষের জন্য অলস জমি হিসেবে রেখে দেয়া হয়। তবে সেচের আওতাভূক্ত ক্ষেতগুলো মৌসুম জুড়ে পানি সেচ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়। অধিকাংশ জমিতে ২-৩ দিনের ব্যবধানে পুনরায় সেচ দিতে হয়েছে। এবছর কৃষকদের বাড়তি নজরদারিতে কীটপতঙ্গের আক্রমণ কম ছিল। ধানও হয়েছে বেশ সন্তোষজনক।উপজেলার ফুলবাড়ি গ্রামের কৃষক আয়ূব হোসেন জানান, তিনি এ বছর ৫ বিঘা জমিতে আমনের চাষ করে ৪ বিঘার ধান ঘরে তুলে ফেলেছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলার সবচেয়ে বড় ধান ব্যবসায়ী শাহিন হোসেন জানান, মোকামে এ বছরের প্রথম দিকে ধানের চাহিদা অনেক বেশি ছিল। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন আগেও চিকন জাতীয় ধান প্রতিমন ১৩ থেকে সাড়ে ১৩’শ ও মোটা জাতীয় ধান ১২’শ টাকা পর্যন্ত কিনেছেন। কিন্তু ভারতীয় চাল বাজারে আসার কারণে মিলাররা আগের দামে ধান কিনতে চাচ্ছেন না। জালাল হোসেন নামের আরেক ধান ব্যবসায়ী জানান, গত ৩/৪ দিন আগে যে দামে ধান কিনেছেন এখন সে দামে কিনতে পারছেন না। কারণ এখন বিক্রি করতে পারছেন না। তিনি বলেন সারাদেশে ধানের বাজারে দর পতন হলে তাদেরকেও সেভাবে ধান কিনতে হবে।
উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা মাহাবুব রহমান রনি জানান, এ বছর ভরা আষাঢ়েও তেমন একটা বৃষ্টি হয়নি। তাই আমন রোপন বেশ খানিকটা বাধাগ্রস্থ হয়েছে। প্রকৃতিতে কারও হাত নেই। তবে কৃষকেরা সেচ দিয়ে ক্ষেতের ধান বাঁচিয়ে শেষমেষ সন্তোষজনক ফলন হয়েছে।